আজ থেকে অনেক দিন আগে, এক ঘন সবুজ আর সুন্দর জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে নানা ধরনের পশু-পাখি বাস করত। সিংহ ছিল সেই জঙ্গলের রাজা। তার গর্জন শুনে সব পশু ভয়ে কাঁপত। সেই জঙ্গলে একটি বিশাল আর শক্তিশালী হাতিও থাকত। হাতিটি শান্ত স্বভাবের ছিল এবং কারও সঙ্গে ঝগড়া করত না।
সিংহের অহংকার
সিংহের নিজের শক্তির উপর খুব অহংকার ছিল। তার মনে হত, পুরো জঙ্গলে তার থেকে বেশি শক্তিশালী আর কেউ নেই। সে প্রায়ই তার গর্জন আর শিকার করার অভ্যাস দিয়ে ছোট পশুদের ভয় দেখাত। তার এই স্বভাব ধীরে ধীরে তাকে অহংকারী করে তুলছিল। জঙ্গলের বাকি সব পশু সিংহকে ভয় পেয়ে চলত। তার আওয়াজ শুনলেই তারা লুকিয়ে যেত। সিংহের মনে হত ভয় দেখানোই তার আসল শক্তি, কিন্তু সে এটা বুঝত না যে ভয় দিয়ে সম্পর্ক তৈরি হয় না।
হাতির শান্ত স্বভাব
হাতি অনেক বড় আর শক্তিশালী ছিল, কিন্তু সে কাউকে ক্ষতি করত না। সে শুধু গাছ থেকে পাতা খেত, জল পান করত আর শান্তিতে থাকত। তার নিজের শক্তির উপর কোনো অহংকার ছিল না। সে মনে করত, শক্তি ব্যবহার করা উচিত কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। আসল শক্তি সেটাই, যেটা দিয়ে কাউকে সাহায্য করা যায় এবং সবাইকে নিরাপদে রাখা যায়।
সংঘর্ষের শুরু
সিংহ ভাবল, হাতির এত বড় আর শক্তিশালী হওয়া তার রাজত্বের জন্য বিপদজনক হতে পারে। সে ঠিক করল, তাকে সবাইকে দেখাতে হবে যে আসল শক্তিশালী সে-ই। তাই সে হাতির কাছে গেল এবং রাগের সঙ্গে বলল যে এই জঙ্গল তার এবং এখানে সে-ই রাজা। হাতি শান্তভাবে উত্তর দিল যে সে কারও থেকে বড় হতে আসেনি। সে শুধু নিজের জীবন কাটাতে চায় এবং কাউকে ক্ষতি করতে চায় না। কিন্তু সিংহের এই কথা পছন্দ হল না এবং সে হাতিকে লড়াই করার জন্য চ্যালেঞ্জ জানাল।
বুদ্ধি বনাম শক্তি
সিংহ হাতিকে বলল, যদি সে সত্যিই শক্তিশালী হয়, তাহলে তার সঙ্গে লড়ে দেখাক। হাতি শান্ত হয়ে উত্তর দিল যে লড়াই করে কারও কোনো লাভ হবে না। সে বোঝাল যে শক্তির সঠিক ব্যবহার কোনো ভালো কাজে হওয়া উচিত, কাউকে হারানোর জন্য নয়। সিংহ তার কথা শুনে হেসে বলল যে সে ভয় পেয়ে গেছে। হাতি কিছু বলল না এবং চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেল। সে জানত যে সময় এলে তার বুদ্ধিমত্তাই আসল শক্তি প্রমাণ হবে।
বিপদে পড়া সিংহ
একদিন সিংহ শিকারের খোঁজে জঙ্গলে ঘুরছিল। হঠাৎ তার পা একটি বড় শিকারীর পাতা ফাঁদে আটকে গেল। সে যত মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছিল, জাল তত শক্ত করে আঁটসাঁট হয়ে যাচ্ছিল। তার জোরে গর্জন পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ল। জঙ্গলের সব পশু তার আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গেল। তারা দূরে দাঁড়িয়ে রইল কিন্তু কেউ তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এল না। সিংহ প্রথমবার বুঝতে পারল যে শক্তি থাকা সত্ত্বেও একা থাকার মানে কী।
হাতির সাহায্য
হাতি যখন সিংহের জোরে গর্জন শুনতে পেল, তখন সে সঙ্গে সঙ্গে সেই দিকে ছুটে গেল। সেখানে পৌঁছে সে দেখল যে সিংহ একটি শক্ত জালে আটকে আছে এবং বেরোনোর চেষ্টায় ক্লান্ত হয়ে গেছে। হাতি দেরি না করে তার শুঁড় দিয়ে জালটি ছিঁড়ে দিল। সিংহ মুক্তি পেয়ে অবাক হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল যে যাকে সে দুর্বল ভাবত, সেই তার জীবন বাঁচাতে পারে।
এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে আসল শক্তি কাউকে ভয় দেখানোর বা হারানোর মধ্যে নেই, বরং তাদের সাহায্য করার মধ্যে আছে। অহংকার আমাদের একা করে দেয়, যেখানে নম্রতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের অন্যদের বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করে। হাতির শান্ত স্বভাব তাকে সত্য ও মহান করে তুলেছে। সিংহও বুঝতে পারল যে শক্তির সঠিক অর্থ হল—অন্যদের নিরাপদ রাখা এবং প্রয়োজনে সাহায্য করা। এটাই আসল শক্তি।