অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে নতুন বিতর্কে লেজেন্ডস লিগ
ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস (WCL) টুর্নামেন্টের অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে তৈরি হল তীব্র বিতর্ক। খেলার মাঠে এক ওভারে ১৮ বল? হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহুবার ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তবে এই ম্যাচের ঘটনাক্রম এতটাই অস্বাভাবিক যে গড়াপেটার জল্পনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
৭৪ রানে অলআউট অজি বাহিনী, ৭.৫ ওভারে জয় পাকিস্তানের
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭৪ রানে গুটিয়ে যায়। পাকিস্তানের জবাব ছিল বিস্ফোরক – মাত্র ৭.৫ ওভারে, তাও বিনা উইকেটে জয়। এমন ফলাফলেই যেন ধাক্কা খেয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি নিছক কাকতালীয়, না কি কোথাও চালাচালি ছিল?
হেস্টিংসের ১৮ বলের ওভার! আশ্চর্য ও অস্বাভাবিক এক দৃশ্য
ম্যাচে পাকিস্তানের ইনিংসের অষ্টম ওভারে বল করতে আসেন অজি পেসার জন হেস্টিংস। সেই ওভারে ঘটে ইতিহাস – মোট ১৮টি বল করেন তিনি। যার মধ্যে ছিল ১২টি ওয়াইড এবং একটি নো-বল। ক্রিকেট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এমন অগোছালো ওভার প্রায় অভূতপূর্ব। স্বাভাবিকভাবেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় উড়ে এসেছে প্রশ্ন—ইচ্ছাকৃতভাবে কি এমনটা ঘটালেন তিনি?
ওভারের হিসেব খোলসা করল জল্পনার দরজা
ওভারের শুরুর পাঁচটি বলই ওয়াইড দেন হেস্টিংস। এরপর দুটি বৈধ বল। তারপরে আবার একটি নো-বল, সঙ্গে এক ওয়াইড। এরপর আবার চারটি বৈধ বল। ওভারের শেষে ফের টানা পাঁচটি ওয়াইড। অর্থাৎ ৬টি বৈধ বল ছাড়াও মোট ১২টি ওয়াইড ও ১টি নো-বলে দাঁড়াল ১৮ বলের ‘রেকর্ড’। বলাই বাহুল্য, এমন ওভারে একেবারেই কোনো চাপ অনুভব করেননি পাক ওপেনাররা।
পাক ওপেনারদের দাপটে শুরু থেকেই ম্যাচ একপেশে
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে ছিলেন শার্জিল খান ও সোহাইব মাকসুদ। ৭ ওভারে স্কোর পৌঁছে গিয়েছিল ৫৫-তে। এরপরই হেস্টিংসের বিতর্কিত ওভার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় একেবারে নিশ্চিত জয়ের দিকে। এতটাই সহজ হয়ে দাঁড়ায় লক্ষ্যপূরণ, যে ম্যাচটা যেন আগেই নির্ধারিত ছিল—এই সন্দেহটা আরও প্রবল হয়।
অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত হেস্টিংসের এমন বোলিং মানা যাচ্ছে না সহজে
৩৯ বছর বয়সি জন হেস্টিংস এক সময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন ফরম্যাটেই প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি খেলেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং টি-২০ বিশ্বকাপে। তাঁর পারফরম্যান্স বরাবরই স্থিতিশীল ও পরিণত। এমন একজন বোলারের কাছ থেকে এই ধরনের ছন্দভ্রষ্ট ও পরিকল্পনাহীন ওভার, ক্রিকেটবিশ্বের অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক লেগেছে।
গড়াপেটা নিয়ে উঠছে গুঞ্জন, তদন্তের দাবি উঠল
ক্রিকেটভক্তদের মধ্যে এখন জোর চর্চা চলছে—এই ঘটনা নিছক ‘ব্যাড ডে’ না কি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ইঙ্গিত? জন হেস্টিংস ইচ্ছাকৃত এমন করেছেন কি না, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিশেষজ্ঞ মহলে। অনেকে বলছেন, এত অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাছ থেকে এ ভুল মেনে নেওয়া যায় না।
ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রইল হেস্টিংসের ওভার
তাঁর ওভারটি এখন ক্রিকেট ইতিহাসের বিরলতম অধ্যায় হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। তবে তা গৌরবের নয়, বরং অস্বস্তির স্মারক হিসেবেই থেকে যাবে। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা চাইছেন, এই ঘটনায় যেন সত্যিটা সামনে আসে—নাহলে এই ধরনের ‘লেজেন্ডস লিগ’-এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠবে।