বাংলাদেশ সরকার পলাতক ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েককে দেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ: ভারতের কূটনৈতিক চাপের প্রভাব এখন স্পষ্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পলাতক ইসলামিক ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েককে দেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ এমন কোনো ব্যক্তিকে তার দেশে স্থান দিতে চায় না যার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বা যার উপস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল এবং এই পদক্ষেপকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত
বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত আকস্মিক ছিল না, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর এটি নির্ধারিত হয়েছে। এই বৈঠকটি সচিবালয়ে অবস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এই সময়েই জাকির নায়েকের সম্ভাব্য সফরের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্যরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেন যে, যদি জাকির নায়েক বাংলাদেশে আসেন, তাহলে তার সভা ও অনুষ্ঠানগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েনের প্রয়োজন হবে।
জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জাকির নায়েকের কারণে বিপুল সংখ্যক লোক এক স্থানে জড়ো হতে পারে, যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন করে তুলবে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েন প্রয়োজন, তাই এত বিপুল সংখ্যক বাহিনীকে নির্দিষ্ট কিছু অনুষ্ঠানে নিযুক্ত করা সম্ভব নয়।

এই বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জাকির নায়েককে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের দাবি
এরই মধ্যে, স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামের একটি সংস্থা তাদের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেছিল যে, তারা নভেম্বরের শেষে জাকির নায়েককে বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনা করছিল। সংস্থাটি নিজেদের এই অনুষ্ঠানের অনুমোদিত আয়োজক হিসেবে দাবি করে এবং বলেছিল যে, এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে। তবে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর স্পষ্ট হয়েছে যে, এই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে না।
বৈঠকের সভাপতিত্ব ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৈঠকে কর্মকর্তারা সেই সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করেন, যা বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হতে পারতো যদি জাকির নায়েক দেশে প্রবেশ করতেন। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক পরিবেশের উপর প্রভাবের মতো বিষয়গুলি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির স্পষ্ট অবস্থান
বাংলাদেশ সরকার আরও জানিয়েছে যে, তারা কোনো অভিযুক্ত বা পলাতক ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বলেছেন যে, তারা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিকে আমলে নিয়েছেন, যেখানে জাকির নায়েকের সম্ভাব্য সফর সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন যে, বাংলাদেশের নীতি পরিষ্কার যে, তারা কোনো দেশের পলাতক নাগরিককে সহজে আশ্রয় দেবে না।











