বাংলার কৃষকরা এবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ধান চাষের নতুন যুগে প্রবেশ করতে চলেছেন। কাঁকসার কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিশেষ ড্রোন প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। কৃষকেরা প্রথমবারের মতো নিজের চোখে দেখলেন কিভাবে আকাশ থেকে ড্রোনের মাধ্যমে মাঠে সার ও কীটনাশক ছড়ানো যায়।
আকাশে উড়ছে ড্রোন, মাঠে ছড়াচ্ছে স্প্রে
মঙ্গলবার দুপুরে কাঁকসার বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলঝুড়ি এলাকায় ড্রোন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হয়। কৃষকরা অবাক হয়ে দেখেন, মাত্র কয়েক মিনিটে বিস্তীর্ণ ধানের মাঠে সার এবং ওষুধ সমানভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির এই ব্যবহার কৃষিকাজকে সহজ এবং সাবলীল করার একটি নিদর্শন হিসেবে ধরা হচ্ছে।
কৃষকরা অবাক, প্রযুক্তির সহজতা দেখে আনন্দ
কৃষকরা জানিয়েছেন, আগে তারা কল্পনাও করতে পারতেন না, যে ধানের মাঠে এত দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে কাজ করা সম্ভব। ড্রোন প্রযুক্তির সাহায্যে একজন কৃষক খুব কম সময়ে একরের পর একর জমিতে কাজ শেষ করতে সক্ষম হচ্ছেন। কৃষকদের চোখে এটি এক নতুন আশা, যা চাষাবাদের মান উন্নয়নে সাহায্য করবে।
ড্রোনের বিশেষত্ব এবং ভর্তুকি সুবিধা
ধান চাষে এই নতুন প্রযুক্তি কৃষকদের জন্য দিগন্ত খুলে দিয়েছে। প্রতিটি ড্রোনের মূল্য সাত লক্ষ টাকা হলেও সরকারী ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকরা এটি সস্তায় পেতে পারেন। ফার্মিং ড্রোন কেনার ক্ষেত্রে কৃষকরা ৪০% থেকে ৮০% পর্যন্ত ভর্তুকি পেতে পারেন। ড্রোনের ধারণক্ষমতা ১০ লিটার এবং এটি কয়েক মিনিটে বিস্তীর্ণ জমিতে ওষুধ স্প্রে করতে সক্ষম।
প্রযুক্তির মাধ্যমে সময় ও শ্রম বাঁচবে
ড্রোন ব্যবহারের ফলে ধান চাষের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, আগে হাতের কাজ এবং ম্যানুয়াল স্প্রে করতে গিয়ে প্রচুর শ্রম ও সময় লেগে যেত। এখন ড্রোন ব্যবহার করে কম সময়ে, আরও নিখুঁতভাবে সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী এবং শিক্ষামূলক আয়োজন
কাঁকসার কৃষি বিভাগের আত্মা প্রকল্পের অধীনে এই ড্রোন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারী কৃষকরা ড্রোন ব্যবহার করে মাঠে সরাসরি কাজের প্রক্রিয়া দেখতে পান। বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের দেখান কীভাবে সঠিকভাবে ড্রোন ব্যবহার করে সার এবং কীটনাশক ছড়ানো যায়।
ড্রোন প্রযুক্তি: ভবিষ্যতের চাষের দিগন্ত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোন প্রযুক্তি কৃষিকাজকে এক নতুন মাত্রা দিচ্ছে। এটি শুধু সময় বাঁচাচ্ছে না, পাশাপাশি জমিতে সার ও কীটনাশক সমানভাবে ছড়ানোর ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা ও মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলার ধান চাষে এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
কৃষকদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যাশা
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া কৃষকরা জানান, তারা এই প্রযুক্তির ব্যবহার শিখে ভবিষ্যতে নিজের মাঠে তা প্রয়োগ করবেন। কৃষকদের কথায়, এমন সহজভাবে ধান চাষ করা সম্ভব তা আমরা আগে কখনো কল্পনাও করিনি। এটি আমাদের কাজকে অনেক বেশি সহজ ও সময়োপযোগী করে তুলবে।
সামগ্রিক প্রভাব এবং কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন
ড্রোন প্রযুক্তি বাংলার কৃষি ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে। এটি কেবল ধানের ক্ষেতেই নয়, বরং অন্যান্য ফসলেও ব্যবহারযোগ্য। সরকারের সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করলে কৃষকরা আরও বেশি ফসল উৎপাদন ও মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন।