নতুন নিয়মে প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা : বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আবার খুলে যাচ্ছে বক্সা জঙ্গল। তবে এবারের জঙ্গল সাফারি আর ভ্রমণ একেবারেই ভিন্ন নিয়মে। প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, থালা-বাটি, চামচ—সব কিছুর উপর জারি হয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। বনভূমি ও পাহাড়ি ঝরনার পরিবেশ নষ্ট হওয়া ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বক্সা টাইগার রিজার্ভ ও তার আশপাশে যত্রতত্র প্লাস্টিকের স্তূপ জমে থাকত। সেটিই এখন অতীত হবে বলে আশা স্থানীয়দের।
নিয়ম ভাঙলে মোটা জরিমানা
পর্যটকরা যদি নিয়ম না মানেন এবং কোথাও প্লাস্টিক ফেলে দেন, তাহলে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। সান্তলাবাড়ি থেকে শুরু করে জয়ন্তী পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নজরদারির জন্য বিশেষ দল তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসী, গাড়িচালক, গাইড—সকলেই এই দলে যুক্ত থাকবেন। এর ফলে পর্যটকদের আচরণের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী
প্লাস্টিক বন্ধ হলেও পর্যটকদের অসুবিধে হবে না। সান্তলাবাড়িতে বিশেষ দোকান খোলা হয়েছে, যেখানে পাওয়া যাচ্ছে শালপাতার থালা-বাটি, কাঠের চামচ, মাটির ভাঁড়, এমনকি কাপড়ের ব্যাগও। দামও রাখা হয়েছে সাধ্যের মধ্যে। ফলে পর্যটকদের সুবিধে হবে এবং স্থানীয় গ্রামবাসীরাও এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
হোমস্টে ও গ্রামজীবনে পরিবর্তনের ছাপ
বক্সা ও জয়ন্তী অঞ্চলে হোমস্টে সংস্কৃতি এখন ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়। এবারে প্রতিটি হোমস্টেতে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার হবে। প্রতিটি গ্রামে নতুন করে ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। ফলে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা সহজ হবে এবং গ্রামগুলোও পরিষ্কার থাকবে। গ্রামবাসীদের মতে, এর ফলে পর্যটন যেমন টেকসই হবে, তেমনই গ্রামের উন্নয়নও ঘটবে।
প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণ রক্ষার লক্ষ্য
বক্সা টাইগার রিজার্ভে রয়েছে বাঘ, হাতি, গৌর, চিতা, হরিণসহ অসংখ্য প্রাণী। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক খাওয়ার কারণে অনেক বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে অতীতে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই এই পদক্ষেপ। এখন থেকে প্রাণীরা থাকবে আরও সুরক্ষিত। ঝরনা, নদী এবং জঙ্গলের মাটি প্লাস্টিকমুক্ত হলে পুরো ইকোসিস্টেমই উপকৃত হবে।
স্থানীয়দের অংশগ্রহণে উদ্যোগ
এই প্রকল্প সফল করতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা শুধু নজরদারিই করবেন না, বরং দোকান চালিয়ে পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্রও বিক্রি করবেন। এর ফলে একদিকে যেমন তাঁদের আয় বাড়বে, অন্যদিকে পরিবেশও রক্ষা পাবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত জানিয়েছে, এই পরিকল্পনায় গ্রামবাসীরাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
পর্যটনের নতুন দিগন্ত
প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান বক্সায়। এবার নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় পর্যটন আরও টেকসই হবে। পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করার আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মডেল ভবিষ্যতে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেও চালু হতে পারে।
সরকারের ভূমিকা
যদিও এই উদ্যোগ মূলত স্থানীয় গ্রামবাসীদের নেতৃত্বে নেওয়া হয়েছে, তবুও বনদপ্তর ও পর্যটন দপ্তরও হাত লাগিয়েছে। নিয়ম কার্যকর করার জন্য পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পর্যটকদের সচেতন করতে প্রচারপত্র ও ব্যানার টাঙানো হবে।
ভ্রমণপ্রেমীদের প্রত্যাশা
জঙ্গল সাফারি, জয়ন্তীর নদীর ধারে রাতের তারা দেখা কিংবা হোমস্টেতে স্থানীয়দের আতিথেয়তা—সব মিলিয়ে বক্সা ভ্রমণ এখন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ভ্রমণকারীরা আশা করছেন, পরিবেশবান্ধব এই পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে ডুয়ার্সের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ডুয়ার্সের বক্সা জঙ্গল খুলছে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রকৃতি রক্ষায় এবারে কঠোর পদক্ষেপ—প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে নজরদারি দল। বিকল্প হিসেবে দেওয়া হচ্ছে শালপাতার থালা, মাটির পাত্র ও কাপড়ের ব্যাগ। নিয়ম না মানলে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে। পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ।