এসি সার্ভিস টিপস: গরম ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে, শীত আসন্ন। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই শহরজুড়ে শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। অনেক বাড়িতেই এখন আর এসি চালানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে বন্ধ করার আগে যদি কিছু যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে গ্রীষ্মে আবার এসি চালু করার সময় সেটি নতুনের মতো কাজ করবে। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সার্ভিস সেন্টারগুলোও এখন এসি ক্লিনিংয়ের বুকিংয়ে ব্যস্ত।
ফিল্টার পরিষ্কার না করলে জমে ব্যাকটেরিয়া
এসি ব্যবহারের সময় ফিল্টারে ধুলো জমে। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং বাতাসের গুণমান নষ্ট হয়। তাই প্রতি ১-২ মাস অন্তর ফিল্টার খুলে পরিষ্কার জলে ধুয়ে শুকিয়ে লাগানো দরকার। শীতের আগে একবার ভালোভাবে ফিল্টার ধুয়ে রাখলে এসি দীর্ঘদিন নিরাপদ থাকে।বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যদি এসি দীর্ঘসময় ব্যবহার না করা হয়, তবুও বছরে অন্তত একবার ফিল্টার ক্লিনিং করানো জরুরি। এতে শুধু ঠান্ডা হাওয়ার মান বাড়ে না, বিদ্যুৎ খরচও কমে।
ইভাপোরেটর ও কনডেন্সার পরিষ্কার রাখুন
এসি ইউনিটের ভেতরে (ইভাপোরেটর) ও বাইরের অংশে (কনডেন্সার) ধুলোবালি জমলে বাতাসের চলাচল বাধা পায়। এতে কুলিং কমে যায় এবং কম্প্রেসারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায় এবং এসির আয়ু কমে।এই কারণে বিশেষজ্ঞরা শীতের আগে একবার টেকনিশিয়ানের সাহায্যে পূর্ণ সার্ভিস করানোর পরামর্শ দেন। এতে ভিতরের অংশ থেকে ধুলা সরানো যায় ও লিকেজ বা গ্যাসের সমস্যা আগেভাগেই ধরা পড়ে।
ড্রেন পাইপ পরিষ্কার না রাখলে জল লিকের সমস্যা
এসি ইউনিটের ড্রেন পাইপে ময়লা বা ফাঙ্গাস জমে থাকলে জল বেরোতে না পেরে লিক হতে পারে। ফলে দেওয়াল ভিজে যেতে পারে বা ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে।শীতের আগে পাইপ ব্লোয়ার বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। এতে পাইপ শুকনো থাকবে ও পরের মরশুমে লিকেজ সমস্যা হবে না।
রিমোট ও ব্যাটারির যত্ন নিন
দীর্ঘসময় এসি বন্ধ রাখলে রিমোটের ব্যাটারি খুলে রাখা উচিত। না হলে ব্যাটারি থেকে তরল লিক হয়ে রিমোট সার্কিট নষ্ট করতে পারে।শীতকালে এসি না চালানোর সময় রিমোট ব্যাটারি খুলে শুকনো স্থানে রাখলে সেটি বহু বছর টিকে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাটারি ফেটে গিয়ে বোতাম বা স্ক্রিন অকেজো হয়ে যাচ্ছে — এটি আগেভাগেই রোধ করা সম্ভব।
বাইরের ইউনিটে কভার দিন, বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে রাখুন
যেহেতু শীতকালে এসি ব্যবহার করা হয় না, তাই বাইরের কনডেন্সার ইউনিটে কভার দিয়ে রাখা দরকার। এতে ধুলো, বৃষ্টি বা পাখির মল পড়ে যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।একইসঙ্গে, এসির পাওয়ার প্লাগ খুলে রাখলে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ হয় ও সার্কিট নিরাপদ থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বিদ্যুৎ বিল বাঁচবে এবং পরবর্তী সময়ে এসি চালু করার সময় শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি কমে।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ মানেই দীর্ঘ আয়ু
একবার সার্ভিস করিয়ে বন্ধ রাখলেই দায়িত্ব শেষ নয়। প্রতি ৬ মাস অন্তর এসির রুটিন চেকআপ করানো অভ্যাস করুন। এতে যন্ত্রাংশ ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, গ্যাস লেভেল সঠিক আছে কিনা — তা জানা যায়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অবহেলায় থাকা এসি হঠাৎ চালু করলে কুলিং বন্ধ হয়ে যায় বা গ্যাস লিকের সমস্যা হয়। তাই নিয়মিত যত্নই এসির আয়ু বাড়ানোর একমাত্র উপায়।
শীতের আগে এসি বন্ধ করার সময় হয়ে এসেছে। তবে সেটি বন্ধ করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসিং করিয়ে রাখলে আগামী গরমে অনেক টাকা ও ঝামেলা বাঁচানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে এসি পরিষ্কার ও কভার করে রাখলে এর আয়ু বেড়ে যায় এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হয়।