বর্তমান সময়ে আয়কর বিভাগ ট্যাক্স রিটার্নগুলির পরীক্ষণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) মডেল ব্যবহার করছে। এই উন্নত প্রযুক্তিগুলি ব্যয়ের ধরণ, পূর্ববর্তী ট্যাক্স রিপোর্টিং এবং তৃতীয় পক্ষের ডেটা, যেমন ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ও লেনদেনের তথ্যের ভিত্তিতে ট্যাক্স রিটার্নগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করতে পারে।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ যত এগিয়ে আসছে, ট্যাক্স বিভাগের নজরদারিও তত বাড়ছে। এখন আয়কর বিভাগ কেবল কাগজ ও নথিপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে কর ফাঁকি বা গরমিলের অনুসন্ধান করছে।
খরচের অভ্যাস, আয়ের পুরনো রেকর্ড, ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত ডেটা একত্রিত করে, এখন সিস্টেম নিজেই নির্ধারণ করে যে কে ট্যাক্স ফাইলিংয়ে গড়মিল করছে।
আয় গোপন করলে ভারী জরিমানা
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুরেশ সুরানার মতে, আয়কর আইনের অধীনে, যদি কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তার আয় গোপন করে, ভুল তথ্য দেয় বা জাল বিল জমা করে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তার উপর জরিমানা এবং আইনি ব্যবস্থা উভয়ই হতে পারে।
সেকশন 270A অনুযায়ী, যদি কোনও করদাতা কম আয় দেখান, তবে তার উপর প্রদেয় ট্যাক্সের 50 শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
যদি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দেন, তবে এই জরিমানা সরাসরি 200 শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
পুরনো মামলার ক্ষেত্রে অর্থাৎ 2016-17 অর্থবর্ষের আগের জন্য সেকশন 271(1)(c) প্রযোজ্য, যেখানে 100 শতাংশ থেকে 300 শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
অঘোষিত বিনিয়োগের উপর কড়া নজর
যদি কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগের সঠিক তথ্য না দেন, তাহলেও আয়কর বিভাগ এখন তাকে রেহাই দেয় না।
সেকশন 271AAC-এর অধীনে, এই ধরনের ক্ষেত্রে 60 শতাংশ ট্যাক্স, তার সাথে সারচার্জ, সেস এবং 10 শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়।
যদি এটা প্রমাণিত হয় যে ট্যাক্স ফাঁকি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, তাহলে জরিমানার বাইরে গিয়ে কারাদণ্ডও হতে পারে। সেকশন 276C অনুযায়ী, এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্তের 3 মাস থেকে 7 বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
তদন্তের নতুন পদ্ধতি
ট্যাক্স বিশেষজ্ঞ শেফালী মুন্দ্রার মতে, এখন ট্যাক্স বিভাগ শুধুমাত্র রিটার্ন বা অডিট-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিভাগ এখন AIS অর্থাৎ অ্যানুয়াল ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট, ফর্ম 26AS, টিডিএস ডেটা, জিএসটি রিটার্ন, রেজিস্ট্রেশন ডেটা, ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ফান্ডের রেকর্ডগুলিও যাচাই করে।
যদি কোনও ট্যাক্সপেয়ারের ফাইলিংয়ে দেওয়া তথ্য এই উৎসগুলির সঙ্গে না মেলে, তাহলে বিষয়টি সরাসরি তদন্তের আওতায় আসে।
এছাড়াও, এখন ভারত সরকার আন্তর্জাতিক কর চুক্তির অধীনে বিদেশি আয় এবং সম্পত্তি সম্পর্কিত তথ্যও পায়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো গোপন বিদেশি সম্পত্তি বিভাগের নজর এড়িয়ে যেতে পারে না।
AI কিভাবে ট্যাক্সের গরমিল ধরে
এখন ট্যাক্স বিভাগ তাদের সিস্টেমকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম করে তুলেছে।
AI মডেল এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ট্যাক্সপেয়ারদের প্রোফাইল, খরচ, আয় এবং বিনিয়োগের পদ্ধতি ট্র্যাক করছে।
যদি কেউ ক্রমাগত কম আয় দেখাচ্ছে, কিন্তু তার খরচ বেশি, তাহলে সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে সতর্কবার্তা হিসেবে চিহ্নিত করে।
যদি কোনও ব্যক্তির ডেটা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে তদন্তকারী দলকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।
রিটার্ন জমা দিতে দেরি করলে জরিমানাও
শুধু আয় গোপন করাই নয়, রিটার্ন জমা দিতে দেরি করা, ট্যাক্স কম দেওয়া বা সময়মতো অগ্রিম ট্যাক্স পরিশোধ না করাও দণ্ডনীয়।
ধারা 234A, 234B এবং 234C-এর অধীনে, এই ধরনের ক্ষেত্রে সুদের পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়।
ভুল সংশোধন করলে রেহাই পাওয়া যেতে পারে
সুরানা জানান, যদি কোনও করদাতা সময় থাকতে নিজের ভুল সংশোধন করে নেন, তাহলে তিনি রেহাই পেতে পারেন।
ধারা 139(5)-এর অধীনে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করা যেতে পারে। যদি এই রিটার্ন বিভাগীয় পদক্ষেপের আগে ফাইল করা হয় এবং ট্যাক্স ও সুদ পরিশোধ করা হয়, তাহলে জরিমানা লাগে না।
এছাড়াও, ধারা 270AA-এর অধীনে মামলা ও পেনাল্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, যদি করদাতা ট্যাক্স পরিশোধ করেন এবং তিনি বিভাগীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল না করেন।
ধারা 273B-তে আদালতও অনেক সময় সেইসব করদাতাদের রেহাই দিয়েছে, যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছেন বা যাদের উপযুক্ত কারণ ছিল।
ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট তদন্ত প্রক্রিয়াকে দ্রুত করেছে
এখন ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট ফেসলেস পদ্ধতিতে হচ্ছে। অর্থাৎ করদাতা ও অফিসারের মধ্যে কোনো সরাসরি যোগাযোগ হয় না।
ধারা 144B-এর অধীনে এই সম্পূর্ণ সিস্টেম ডিজিটাল এবং এটি নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে সমস্ত নথি ও ডেটা অনলাইনে জমা হয় এবং সেই ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
AI ভিত্তিক তদন্ত প্রক্রিয়া এই পুরো সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করছে।