আলুয়াবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি লাইনে রেলের নতুন অধ্যায় উন্নয়ন পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ

আলুয়াবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি লাইনে রেলের নতুন অধ্যায় উন্নয়ন পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ

উত্তরবঙ্গের রেল পরিকাঠামোয় বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৃহস্পতিবার একগুচ্ছ রেল প্রকল্পকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল আলুয়াবাড়ি রোড থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত রুটে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন বসানোর অনুমোদন। পুজোর আগে এই সিদ্ধান্ত উত্তরবঙ্গবাসীর কাছে এক বড় রেল উপহার বলে মনে করছে প্রশাসন।

যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল উন্নয়ন ঘটাতে চলেছে নতুন ট্র্যাক

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, এই মাল্টি-ট্র্যাক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তরবঙ্গ, উত্তর–পূর্ব ভারত ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটানের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের রেল যোগাযোগের মান একধাক্কায় বেড়ে যাবে। যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের পরিষেবার গতি ও নির্ভরযোগ্যতা যেমন বাড়বে, তেমনই জংশনগুলির উপর চাপও অনেকটাই কমবে।

নতুন রেল লাইন মানেই দ্রুত পরিষেবা ও কম ট্রাফিক

একই রুটে একাধিক লাইন তৈরি হলে স্বাভাবিকভাবেই ট্রেন চলাচলের সময় কমে যায়। নতুন এই তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনের ফলে রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষা ও ট্রেন বাতিলের ঘটনা হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, জরুরি সময়েও দ্রুত পরিষেবা পাওয়া যাবে উত্তরবঙ্গবাসীর জন্য।

১১,১৬৯ কোটির প্রকল্পে যুক্ত হবে ২,৩০৯টি নতুন গ্রাম

এই প্রকল্পটি ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্প যেমন ইতারসি–নাগপুর চতুর্থ লাইন, ঔরঙ্গাবাদ–পরভনী ডাবল লাইন, ড্যাংগোপাই–জোরাসি তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনেরও অনুমোদন দিয়েছে। এই সমস্ত প্রকল্পের সম্মিলিত খরচ ধরা হয়েছে ১১,১৬৯ কোটি টাকা। রেলমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, এতে নতুন করে ২,৩০৯টি গ্রাম রেল সংযোগে যুক্ত হবে এবং প্রায় ৪৩ লক্ষ মানুষ এই সুবিধা সরাসরি পাবেন।

২০২৮-২৯ সালের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য

রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, এই প্রকল্পগুলি ২০২৮-২৯ অর্থবর্ষের মধ্যে সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও বাজেট ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই উত্তর ও উত্তর–পূর্ব ভারতে রেল চলাচলের মান একধাপে বদলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সরাসরি কর্মসংস্থানের বড় সুযোগও তৈরি হবে এই প্রকল্পে

রেল দফতরের মতে, নির্মাণপর্বে এই প্রকল্পগুলি প্রায় ২.২৯ কোটি মানুষের জন্য সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। পরোক্ষভাবে আরও কয়েক লক্ষ মানুষ কাজের সুযোগ পাবেন। শুধুই রেল নয়, এই প্রকল্পকে ঘিরে এলাকায় হোটেল, দোকান, গুদাম, পরিবহণ ইত্যাদি পরিকাঠামোর বিকাশও ঘটবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে উৎসাহিত করবে।

উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য অপরিসীম

উত্তরবঙ্গ বরাবরই দেশের সীমান্তবর্তী ও ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। সেই এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে রেলযোগাযোগের সম্প্রসারণ কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ভূটানের সঙ্গে ব্যবসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও এই নতুন ট্র্যাক সাহায্য করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পর্যটন ও ব্যবসার নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে

নিউ জলপাইগুড়ি অঞ্চল উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে। দার্জিলিং, সিকিম, ডুয়ার্সসহ একাধিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে রেলযোগাযোগ উন্নত হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের যাত্রা আরও সহজ হবে। একইসঙ্গে এই অঞ্চলের ব্যবসা, কৃষিপণ্য পরিবহণ, এমনকি রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনাও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a comment