আগামী ২০ অগাস্ট থেকে আমেরিকা একটি নতুন পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রোগ্রামটি প্রায় এক বছর ধরে চলতে পারে এবং এর উদ্দেশ্য হল ভিসা নিয়ম আরও কঠোর করা। বিশেষ করে যারা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আমেরিকাতে থাকে তাদের উপর নজরদারি বাড়ানো।
আমেরিকা এখন পর্যটন এবং ব্যবসার ভিসার জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর অনুযায়ী, ২০ অগাস্ট ২০২৫ থেকে আমেরিকা একটি নতুন পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছে। এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হল সেই যাত্রীদের উপর কঠোরতা অবলম্বন করা যারা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আমেরিকাতে বেশি সময় ধরে থাকে। এই পরিকল্পনাটি আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে এক বছর পর্যন্ত লাগু করা হবে।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু পর্যটক এবং বিজনেস ভিসা গ্রহণকারীর থেকে ৫,০০০ ডলার থেকে ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত বন্ড ভরানো হবে। অর্থাৎ, যদি কোনও যাত্রী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আমেরিকাতে থাকে, তাহলে তার এই বন্ডের রাশি বাজেয়াপ্ত হতে পারে। অন্যদিকে, যে যাত্রীরা সময় মতো ফিরে আসবে, তাদের এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
B-1 এবং B-2 ভিসার উপর প্রভাব পড়বে
এই নিয়ম B-1 (বিজনেস ভিসা) এবং B-2 (টুরিস্ট ভিসা) যুক্ত যাত্রীদের উপর প্রযোজ্য হবে। আমেরিকান বিদেশ দফতর এই স্কিমটিকে ‘ভিসা বন্ড পাইলট প্রোগ্রাম’ নামে চালাতে পারে। এর অধীনে ভিসা প্রদানকারী আধিকারিকদের এই অধিকার থাকবে যে তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের যাত্রীদের থেকে বন্ড চাইতে পারে।
কোন দেশের যাত্রীদের উপর প্রভাব পড়বে
এই পরিকল্পনা সেই দেশগুলোর জন্য লাগু করা যেতে পারে যেখানে ওভারস্টে অর্থাৎ ভিসার মেয়াদ শেষের পরেও বেশি দিন থাকার হার অনেক বেশি। এর মধ্যে চাদ, এরিত্রিয়া, হাইতি, মায়ানমার এবং ইয়েমেনের মতো দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমেরিকার কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্টের अनुसार, এই দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ওভারস্টে-এর হার গড় থেকে বেশি পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বুরুন্ডি, জিবুতি এবং টোগোর মতো আফ্রিকান দেশগুলোর যাত্রীদের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ বিষয় হল, আমেরিকান রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় ১২,৮৮২ জন ভারতীয় নাগরিকও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আমেরিকাতে বেশি সময় ধরে থেকেছেন।
ভ্রমণকারীদের উপর বাড়বে চাপ
আমেরিকান ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশন এই পরিকল্পনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য হল, এই নতুন নিয়মগুলো লাগু হওয়ার ফলে আমেরিকার ভিসা ফি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামি হতে পারে। সংগঠনটির ধারণা, এর ফলে ভিসা আবেদনকারীর সংখ্যা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে সেই দেশগুলো থেকে যারা আগে থেকেই আমেরিকাতে কম ভ্রমণ করে।
এই পরিকল্পনা থেকে শুরুতে প্রায় ২,০০০ ভিসা আবেদনকারীর উপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকান আধিকারিকদের বক্তব্য, এটি একটি পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে ভিসা ওভারস্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হবে। এর পাশাপাশি এটাও দেখা হবে যে কোন কোন দেশ এই নিয়মের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়।
স্ক্রিনিং এবং তদন্তের উপর থাকবে ফোকাস
এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য কেবল বন্ড আদায় করা নয়, বরং সেই দেশগুলোকে চিহ্নিত করা যেখান থেকে আসা লোকেদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত স্ক্রিনিং তথ্য পাওয়া যায় না। আমেরিকান কন্সুলার অফিসারদের এই অধিকার দেওয়া হবে যে তারা আবেদনকারীর আগের ভ্রমণ, ওভারস্টের ইতিহাস এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে বন্ড নির্ধারণ করতে পারবে।
আমেরিকার এই নতুন পরিকল্পনা ভিসা নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগে আমেরিকা ভিসার নিয়মে কঠোরতা করেছে, কিন্তু এই ধরনের বন্ড সিস্টেম প্রথমবার লাগু হতে যাচ্ছে। এতে পরিষ্কার যে আমেরিকা এখন তার ইমিগ্রেশন পলিসিকে আরও কঠোর করার দিকে কাজ করছে।
ট্রেভেল ইন্ডাস্ট্রির উপর প্রভাবের আশঙ্কা
নতুন নিয়মগুলোর ফলে ট্রেভেল ইন্ডাস্ট্রির উপরও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ট্যুর অপারেটর এবং ট্র্যাভেল এজেন্টদের জন্য এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাদের এখন তাদের ক্লায়েন্টদের ভিসা বন্ড এবং ইন্টিগ্রিটি ফি সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে, যার ফলে ভ্রমণের মোট খরচ বাড়বে।
নতুন ব্যবস্থায় আমেরিকান ভিসার জন্য আবেদনকারীদের আরও সতর্ক থাকার প্রয়োজন হবে। যদি তাদের দেশ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তাদের আবেদনের সময় বিশাল অঙ্কের বন্ড রাশি জমা দিতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভিসা আবেদনকারীদের সমস্ত নিয়ম এবং শর্ত ভালোভাবে বোঝা জরুরি।