নবরাত্রি ২০২৫ এর ষষ্ঠ দিনে মা কাত্যায়নী পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দেবীর এই রূপের আরাধনা করলে বিবাহযোগ্য ব্যক্তিদের দ্রুত বিবাহ হয় এবং দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি আসে। লাল ও হলুদ রঙ, লাল গোলাপ, মধু এবং মন্ত্র জপ এই দিনের পূজাকে সম্পূর্ণ করে তোলে।
Navratri 2025 Day 6: নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে ভারত জুড়ে মা কাত্যায়নীর পূজা-আরাধনা করা হবে। এই উৎসব এবার ১০ দিন ধরে পালিত হচ্ছে এবং বিশেষ করে বিবাহযোগ্য ব্যক্তিদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। সাধকরা সকালে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করে পূজা স্থল প্রস্তুত করবেন, লাল বা হলুদ রঙের বস্ত্র, লাল গোলাপ এবং মধু অর্পণ করবেন। পূজার সময় মন্ত্র জপ ও আরতি করে দেবীর আশীর্বাদ লাভ করা হয়।
মা কাত্যায়নীর রূপ
মা কাত্যায়নীর রূপকে মহৎ, শক্তিশালী এবং দিব্য শক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি সিংহের উপর আসীন থাকেন এবং চার হাতযুক্ত দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর ডান হাতের উপরে অভয় মুদ্রা এবং নিচে বর মুদ্রা রয়েছে, আর বাম হাতে উপরে তলোয়ার এবং নিচে পদ্ম রয়েছে। তাঁর এই রূপ শক্তি, সাহস এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। দেবীর এই রূপকে সাফল্য, খ্যাতি এবং দাম্পত্য সুখের প্রতিভূ হিসেবে মনে করা হয়।
পূজা পদ্ধতি
- নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে মা কাত্যায়নীর পূজা পদ্ধতি বিশেষভাবে শাস্ত্র দ্বারা নির্ধারিত। এটি অনুসরণ করলে সাধকরা দেবীর আশীর্বাদ লাভ করেন।
- স্নান ও পরিচ্ছন্নতা: সকালে সূর্যোদয়ের আগে স্নান করুন এবং পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন।
- পূজা স্থল প্রস্তুত করুন: পূজা স্থল পরিষ্কার করুন এবং গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন।
- প্রতিমার স্নান ও সাজসজ্জা: মা কাত্যায়নীর প্রতিমা বা ছবিকে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করান। এরপর হলুদ বা লাল রঙের বস্ত্র পরিধান করান এবং রোম, কুমকুম, চন্দন ইত্যাদির মতো সাজসজ্জার সামগ্রী অর্পণ করুন।
- ভোগ নিবেদন করুন: দেবীকে মধু, মিষ্টি, হালুয়া বা মিষ্টি পানের ভোগ নিবেদন করুন। লাল গোলাপ এবং লাল জবা দেবীর প্রিয় ফুল হিসাবে গণ্য।
- মন্ত্র জপ ও আরতি: পূজার সময় মা কাত্যায়নীর মন্ত্র উচ্চারণ করুন এবং আরতি করুন।
- সমাপ্তি: পূজার শেষে সমস্ত ভোগ ও ফুল দেবীকে অর্পণ করে তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
মা কাত্যায়নীর প্রিয় রঙ এবং ফুল
মা কাত্যায়নীর লাল ও হলুদ রঙ বিশেষ প্রিয়। নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে হলুদ রঙের বস্ত্র পরিধান করে পূজা করলে সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ হয়। অন্যদিকে, তাঁর প্রিয় ফুল হলো লাল গোলাপ এবং লাল জবা, যা অর্পণ করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
মন্ত্র এবং স্তুতি
মা কাত্যায়নীর মন্ত্র জপ বিশেষভাবে শুভ বলে বিবেচিত। এই মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করলে মানসিক শান্তি, সাহস এবং ইতিবাচক শক্তি লাভ হয়।
প্রধান মন্ত্র
কাত্যায়নী মহামায়ে, মহাযোগিন্যধীশ্বরী। নন্দগোপসুতং দেবী, পতি মেকুরু তেনমঃ।
স্তুতি মন্ত্র
যা দেবী সর্বভূতেষু মা কাত্যায়নী রূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।
এই মন্ত্রগুলির উচ্চারণে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং সমৃদ্ধি আসে।
পূজার গুরুত্ব
মা কাত্যায়নীকে ফলদাত্রী দেবী রূপে গণ্য করা হয়। তাঁর আরাধনা করলে বিশেষত বিবাহযোগ্য ব্যক্তিরা উপকৃত হন এবং দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি আসে। ব্রজের গোপিনীরা যমুনা তীরে ভগবান কৃষ্ণকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য মা কাত্যায়নীর পূজা করতেন। এই কারণে তাঁকে ব্রজমণ্ডলের প্রধান দেবীও বলা হয়।
মা কাত্যায়নীর আশীর্বাদে সাধক জীবনের সমস্ত বাধা থেকে মুক্ত হয়ে সাফল্য ও সুখ লাভ করেন। শত্রুদের উপর বিজয়, কর্মে সাফল্য এবং জীবনে সমৃদ্ধি তাঁর পূজা থেকে সম্ভব বলে মনে করা হয়।
পূজার সময় এবং পদ্ধতি
- সকালে সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করা এবং পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা শুভ।
- পূজা স্থল পরিষ্কার করে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন।
- মা কাত্যায়নীকে হলুদ বা লাল বস্ত্র পরিয়ে, লাল ফুল, অক্ষত, কুমকুম এবং সিঁদুর অর্পণ করুন।
- ঘি বা কর্পূর জ্বালিয়ে আরতি করুন এবং মন্ত্র উচ্চারণ করুন।
- ভোগে মধু, হালুয়া, মিষ্টি বা মিষ্টি পান অর্পণ করা যেতে পারে।
নবরাত্রি ২০২৫ এর ষষ্ঠ দিনে বিশেষ
নবরাত্রির মহাপর্ব এবার ১০ দিন ধরে পালিত হবে। ষষ্ঠ দিনে মা কাত্যায়নীর পূজা করলে জীবনে বিশেষ লাভ হয়। এই দিনটি সাফল্য, দাম্পত্য সুখ এবং মনোবাসনা পূরণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। সাধকরা এই দিনে তাঁদের ইচ্ছা পূরণ এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি লাভের জন্য বিশেষভাবে মা কাত্যায়নীর পূজা করেন।