অরিজিৎ সিং: খ্যাতির শীর্ষে থেকেও সাদাসিধে জীবন

অরিজিৎ সিং: খ্যাতির শীর্ষে থেকেও সাদাসিধে জীবন

বলিউডে খ্যাতি এবং জাঁকজমকের জগতে, যেখানে অধিকাংশ শিল্পী বড় শহরের গতি এবং আলো ঝলমলে পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেন, সেখানে এমন একজন শিল্পীও আছেন যিনি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে তাঁর কণ্ঠের জাদু ছড়িয়েছেন, কিন্তু এখনও সাদাসিধে এবং মাটির কাছাকাছি জীবন যাপন করেন।

বিনোদন: বলিউডের জগৎ প্রায়শই জৌলুস এবং চাকচিক্যে ভরা থাকে। বড় বড় তারকারা মুম্বাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলিতে বসবাস করে তাদের খ্যাতি বাড়িয়ে তোলেন, তবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে এমন একজন শিল্পীও আছেন, যিনি তাঁর কণ্ঠ দিয়ে শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বে পরিচিতি তৈরি করেছেন, অথচ গ্রামের সাদাসিধে জীবন ত্যাগ করেননি। আমরা কথা বলছি অরিজিৎ সিংয়ের কথা — সেই কণ্ঠ, যা ভালোবাসায় ডুবে থাকা হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে গেয়েছিল, কিন্তু নিজে সবসময় মাটির কাছাকাছি ছিলেন।

স্টারডমে নয়, সুরের মধ্যে বাস করেন অরিজিতের হৃদয়

অরিজিৎ সিং কখনও চাননি যে মানুষ তাঁকে কোনও ঝলমলে তারকার মতো দেখুক। তাঁর স্বপ্ন ছিল — একজন শিল্পী হওয়ার, এবং তেমন একজন শিল্পী যিনি তাঁর কণ্ঠ দিয়ে সরাসরি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছতে পারেন। ফোর্বস ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অরিজিৎ স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে তিনি সেলিব্রিটি সংস্কৃতি পছন্দ করেন না। তাঁর কাছে গানই সবকিছু, আর বাকি সব কিছুই শুধু কোলাহল।

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ছোট্ট শহর জিয়াগঞ্জে জন্ম নেওয়া অরিজিৎ সঙ্গীতচর্চা শুরু করেছিলেন সাধারণ পরিবেশে। তিনি তাঁর সংগ্রামের দিনগুলিতে রিয়েলিটি শো-গুলিতেও অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু জিততে পারেননি। তা সত্ত্বেও তাঁর কণ্ঠ মানুষের মনে গেঁথে ছিল, এবং ধীরে ধীরে সঙ্গীত জগতে তাঁর পরিচিতি তৈরি হয়।

চলচ্চিত্র জীবন: কেডি থেকে শুরু করে আশিকি-২ পর্যন্ত

অরিজিৎ সিংয়ের প্রথম সুযোগ আসে ২০১০ সালে, 'কেডি' ছবিতে। তবে তাঁর কর্মজীবনে আসল উত্থান হয় ২০১১ সালে 'মার্ডার ২' এবং ২০১৩ সালে 'আশিকি-২'-এর সুপারহিট গানগুলির মাধ্যমে। 'তুম হি হো'-এর মতো গানগুলি অরিজিৎকে সরাসরি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের বাদশা বানিয়ে দেয়। এরপর তিনি আর পিছন ফিরে তাকাননি এবং ২৫০টিরও বেশি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

তাঁর গানগুলি শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বে শোনা এবং পছন্দ করা হয়। এই কারণেই অরিজিতের আন্তর্জাতিক কনসার্টগুলিও সবসময় হাউসফুল থাকে।

গ্রামে জীবন, স্কুটিতে ভ্রমণ

আজ যখন অরিজিৎ সিং দেশের সবচেয়ে দামি সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে গণ্য হন, তখনও তাঁর জীবনের সাদাসিধে দিকটি মানুষকে অবাক করে। তিনি তাঁর জন্মস্থান জিয়াগঞ্জেই থাকেন। অরিজিৎকে প্রায়ই সাধারণ পোশাকে ছেলেকে স্কুলে ছাড়তে বা তাঁর পুরনো স্কুটিতে বাজারে যেতে দেখা যায়। মুম্বাইয়ের মতো শহরে যেখানে তারকারা বিলাসবহুল গাড়ি এবং বডিগার্ডের ঘেরাওয়ে চলাচল করেন, সেখানে অরিজিৎ সিং তাঁর স্কুটিতে গ্রামের রাস্তায় সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়ান। এটি তাঁর সাদাসিধে জীবন এবং মাটির প্রতি ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ।

সাদাসিধে জীবনযাত্রার পরেও অরিজিৎ সিং তাঁর আয় এবং দায়িত্ব সম্পর্কেও সমানভাবে সচেতন। খবর অনুসারে, অরিজিৎ বলিউডের সেই শিল্পীদের মধ্যে একজন যিনি সবচেয়ে বেশি কর দেন।

সঙ্গীতই সবচেয়ে বড় আবেগ

অরিজিৎ যদিও মুম্বাইয়ের গ্ল্যামার জগৎ থেকে দূরে রয়েছেন, তবে সঙ্গীতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আগের মতোই গভীর। তিনি প্রায়ই তাঁর গ্রাম থেকে বেরিয়ে সঙ্গীত কনসার্ট, রেকর্ডিং বা নতুন কোনও প্রকল্পের জন্য মুম্বাইয়ে যান। অরিজিৎ প্রমাণ করেছেন যে আসল খ্যাতি মানুষের ভিতর থেকে আসে — দামি বাড়ি বা ঝলমলে পার্টি থেকে নয়।

অরিজিৎ সিংয়ের জাদু হল, মানুষ শুধু তাঁর কণ্ঠের ভক্ত নয়, তাঁর সাদাসিধে জীবনযাত্রারও অনুরাগী। এই কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লক্ষ লক্ষ অনুরাগী তাঁর সাদাসিধে জীবন নিয়ে গল্প শেয়ার করেন।

Leave a comment