অসমত কিছু সংখ্যালঘু হিন্দু স্থানীয় বাসিন্দাদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ তাঁদের সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য নেওয়া হয়েছে। দেশে অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে পটভূমি পরীক্ষা, আবেদন এবং পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
অস্ত্র লাইসেন্স: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি একটি বিতর্কিত এবং চর্চিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি অসমের কিছু এলাকায় বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দু স্থানীয় বাসিন্দাদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপ মূলত সেই সব অঞ্চলের জন্য, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুবই কম এবং সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী এটিকে সুরক্ষার প্রয়োজন উল্লেখ করে এই নীতি প্রয়োগ করেছেন, যার ফলে রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অসমে কারা অস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন?
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্পষ্ট করেছেন যে, যে জেলাগুলিতে হিন্দুরা সংখ্যালঘু এবং যেখানে তাঁদের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা চাইলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারেন।
তিনি দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর, ভাগবর এবং অন্যান্য কয়েকটি জেলার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে, অনেক গ্রামে ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েকশো সনাতন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। এমন এলাকা যেখানে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, সেখানে তাঁদের আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হবে। অসম সরকার মে ২০২৪-এ স্পর্শকাতর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী নাগরিকদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল।
অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার সাধারণ প্রক্রিয়া
ভারতে বন্দুক বা আর্মস লাইসেন্স পাওয়া সহজ নয়। এই প্রক্রিয়াটি ১৯৫৯ সালের অস্ত্র আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। শুধুমাত্র নন-প্রহিবিটেড বোর (NPB) বন্দুক সাধারণ নাগরিকরা কিনতে পারেন। এর জন্য আবেদনকারীকে স্থানীয় পুলিশ সুপারের কাছ থেকে আবেদনপত্র নিতে হয়, যা অনলাইনেও পাওয়া যায়। পুলিশ আবেদনকারীর ঠিকানা, পটভূমি এবং অপরাধমূলক রেকর্ডের তদন্ত করে।
এছাড়াও, আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, আপনার বন্দুকের প্রয়োজন কেন? যদি কারণটি উপযুক্ত মনে হয়, তাহলে লাইসেন্স জারি করা হয়।
অসমের নতুন নীতির উদ্দেশ্য
অসম সরকার যে অস্ত্রের লাইসেন্স নীতি গ্রহণ করেছে, তার উদ্দেশ্য হল স্থানীয় আদিবাসীদের তাঁদের সুরক্ষার অধিকার দেওয়া। বিশেষ করে এমন এলাকায় যেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং হিন্দুরা সংখ্যালঘু, তাঁদের অবস্থা দুর্বল। ধুবড়ি, নওগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা, গোয়ালপাড়া এবং দক্ষিণ শালমারা-মানকাচরের মতো জেলাগুলিতে নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ানো এই নীতির প্রধান লক্ষ্য।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, এই নীতি নাগরিকদের সামরিকীকরণ করার জন্য নয়, বরং তাঁদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। এই দাবি অসমে ১৯৮৫ সাল থেকে চলে আসছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি।
অসমের নীতি এবং সুরক্ষার ভারসাম্য
অসমে অস্ত্র লাইসেন্স নীতির বিরোধিতাও বাড়ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুস্মিতা দেব এটিকে অসম সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর হামলা বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর বক্তব্য, অস্ত্র লাইসেন্স সরকার জারি করতে পারে, কিন্তু বন্দুকের ব্যবহার কীভাবে হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। একবার অস্ত্র হাতে পেলে তার অপব্যবহার হতে পারে। একইসঙ্গে, তিনি 'স্থানীয় বাসিন্দা'-র সংজ্ঞাটিকে অস্পষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন যে এই নীতি আসামের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে।
দেশজুড়ে অস্ত্রের লাইসেন্সের আইনি প্রক্রিয়া
ভারতে অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া একটি দীর্ঘ এবং কঠোর প্রক্রিয়া। নাগরিকদের প্রথমে আবেদন করতে হয়, তারপর স্থানীয় পুলিশ এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের দ্বারা পটভূমি পরীক্ষা, জিজ্ঞাসাবাদ এবং ফিটনেস পরীক্ষার পরেই লাইসেন্স পাওয়া যায়। এর পিছনে উদ্দেশ্য হল, এটা নিশ্চিত করা যে অস্ত্র যেন সঠিক হাতে যায় এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়। শুধুমাত্র তাঁদেরকেই লাইসেন্স দেওয়া হয়, যাঁদের জীবনের প্রকৃত ঝুঁকি রয়েছে বা যাঁদের কাছে বৈধ কারণ আছে।
অসমের নীতি এবং সুরক্ষার দ্বন্দ্ব
অসমের নতুন নীতি একদিকে স্থানীয় হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা, অন্যদিকে এটি সামাজিক উত্তেজনাও বাড়িয়ে দিতে পারে। অস্ত্রের বিতরণ সামাজিক স্তরে নিরাপত্তার পাশাপাশি সহিংসতার আশঙ্কাও বাড়াতে পারে। তাই, এই নীতি কার্যকর করার সময় সরকারের সতর্কতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।