তামিলনাড়ুর কারুরে অভিনেতা বিজয়ের র্যালিতে পদদলিত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। ভিড় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। সরকার ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, একটি তদন্ত কমিশন এবং রিপোর্টের দাবি করেছে।
তামিলনাড়ু র্যালিতে পদদলন: তামিলনাড়ুর কারুরে অভিনেতা বিজয়ের র্যালির সময় হওয়া পদদলনের ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, অন্যদিকে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ভিড় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে এবং নিমেষের মধ্যে মাঠের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা কেবল আয়োজনের ব্যবস্থাপনার উপরেই প্রশ্ন তোলেনি, বরং রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারকেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।
কারুর র্যালিতে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল
তামিলনাড়ুর কারুরে আয়োজিত এই র্যালিটি দুপুর ৩টেয় শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং রাত ১০টা পর্যন্ত চলার কথা ছিল। কিন্তু মানুষ সকাল ১১টা থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেছিল। মাঠের ধারণক্ষমতা ছিল ১০,০০০ লোকের, অথচ ঘটনাস্থলে প্রায় ৩০,০০০ লোক উপস্থিত ছিল। মানুষজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ক্ষুধার্থ ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় অভিনেতা বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। বিজয় যখন সন্ধ্যা প্রায় ৭:৪০-এ পৌঁছলেন, তখন ভিড় বেকাউ হয়ে পড়ে এবং পদদলন ঘটে।
মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা
এই পদদলনে ১৭ জন মহিলা সহ মোট ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে মৃতের এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ কিছু লোক এখনও হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন।
পদদলনের আগের পরিস্থিতি
ভিড় যত বাড়ছিল, মাঠের পরিস্থিতি ততই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। অভিনেতা বিজয় ভিড়কে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং তৃষ্ণার্ত মানুষের সাহায্যের জন্য জলের বোতলও বিতরণ করেন। কিন্তু এই সময়েই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা যায় যে বিজয় নিজেও ভিড়ের কারণে অস্বস্তি বোধ করছিলেন এবং তিনি নিজের ভাষণ মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিলেন।
আয়োজনে ত্রুটি
তামিলনাড়ুর ডিআইজি (ইনচার্জ) জি ভেঙ্কটরামন জানিয়েছেন যে আয়োজকদের ধারণা ছিল যে প্রায় ১০,০০০ লোক র্যালিতে আসবে। কিন্তু ঘটনাস্থলে প্রায় ২৭,০০০-এর বেশি লোক পৌঁছে যায়। আয়োজক এবং পুলিশের কাছে এত বড় ভিড় সামলানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। এই কারণেই সামান্য ধাক্কাধাক্কি বড় আকার ধারণ করে এবং প্রাণঘাতী পদদলনে পরিণত হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিপোর্ট তলব করেছে
এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তামিলনাড়ু সরকারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে যে এত বড় ভিড়ের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন অপ্রতুল ছিল এবং এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আগে থেকে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সম্ভাবনা রয়েছে যে তদন্তের সময় অভিনেতা বিজয় এবং তাঁর দল TVK-এর নেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের অবস্থান
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এই দুর্ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে এই দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত হবে এবং দোষীদের রেহাই দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী এক সদস্যের একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করেছেন, যার সভাপতিত্ব করবেন অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতি অরুণা জগদীশন।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ
মুখ্যমন্ত্রী ভুক্তভোগী পরিবারগুলির সাহায্যের জন্য একটি ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। মৃতদের পরিবারবর্গকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, আহতদের ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গুরুতর আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার করবে।
রাজনৈতিক আলোড়ন
এই দুর্ঘটনা এখন রাজনৈতিক বিতর্কেরও বিষয় হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে যে যখন অনুষ্ঠান স্থলের ধারণক্ষমতা ১০,০০০ ছিল, তখন প্রশাসন কীভাবে ৩০,০০০ মানুষকে প্রবেশ করতে দিল। এই অবহেলাকে গুরুতর ত্রুটি বলা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিজয় এবং তাঁর দল TVK-এর উপরেও প্রশ্ন উঠছে যে তাঁরা ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কিনা।
তদন্ত কমিশনের ভূমিকা
বিচারবিভাগীয় কমিশন এই সম্পূর্ণ দুর্ঘটনার তদন্ত করবে। কমিশন দেখবে যে আয়োজনের পরিকল্পনায় কোথায় কোথায় ভুল হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কমিশনকে ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।