২৮ দিনের সেই অন্ধকার অধ্যায়
২০২১ সালের ২ অক্টোবর নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (NCB) শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গ্রেফতার করে। মুম্বই উপকূলে এক বিলাসবহুল ক্রুজে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়। অভিযোগ ওঠে মাদক সেবন, মাদক কাছে রাখা এবং পাচারের ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর ধারায়। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুধু বলিউড নয়, পুরো দেশের সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় পড়ে যায়। শাহরুখ ও গৌরীর বড় ছেলে হঠাৎই হাই-প্রোফাইল কেসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন।এই ঘটনাটি শুধু আইনগতভাবে নয়, মানসিকভাবেও আরিয়ান ও তাঁর পরিবারকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছিল। সেলিব্রিটি পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ তখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মিডিয়া ট্রায়াল, কড়া সমালোচনা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার হইচই তাঁকে ঘিরে আরও বিতর্ক বাড়ায়। তবে সবকিছুর মধ্যেই শান্তভাবে সময় কাটিয়েছিলেন আরিয়ান।
আর্থার রোড জেলের দিনগুলি
শাহরুখ-পুত্রকে সেই সময় আর্থার রোড জেলে ২৮ দিন থাকতে হয়েছিল। একসময় দেশের সবচেয়ে আলোচিত কয়েদি হয়ে ওঠেন তিনি। প্রতিদিন সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া—সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল তাঁর জেলজীবন। পরে আরিয়ানের আইনজীবীরা জানান, তাঁর কাছে কোনও মাদক উদ্ধার হয়নি এবং সরাসরি যোগসূত্রেরও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশেষে ২৮ অক্টোবর ২০২১ বম্বে হাইকোর্ট তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয়।এই ২৮ দিনের অভিজ্ঞতা যে একজন তরুণের জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হাই-প্রোফাইল সেলিব্রিটি সন্তান হওয়া সত্ত্বেও জেলের সাধারণ কয়েদির মতোই নিয়ম মানতে হয়েছিল তাঁকে। আরিয়ানের এই পর্যায় তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে, যা তাঁর পরবর্তী পথচলায় বড় ভূমিকা রেখেছে।
পরিচালক হিসেবে নতুন শুরু
সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পেয়েছে আরিয়ানের প্রথম পরিচালিত সিনেমা “Ba*ds Of Bollywood”**-এর ট্রেলার। এই ছবির হাত ধরেই পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন তিনি। মুম্বইয়ে আয়োজিত ট্রেলার লঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বলিউডের তারকারা। ছবির শুরুতে কিং খান নিজে কণ্ঠ দিয়েছেন এবং দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নায়ক আসমান সিং-এর সঙ্গে। ছবিতে ববি দেওল ও সাহের বাম্বার মতো তারকারাও অভিনয় করেছেন।এই সিনেমাটি শুধু একটি বিনোদনের গল্প নয়, বরং আরিয়ানের নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলনও বটে। একজন বহিরাগত কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেয়, সেই গল্পে সূক্ষ্মভাবে লুকিয়ে আছে তাঁর নিজের লড়াইয়ের ছাপ। আর ট্রেলারেই দর্শকরা সেই ঝলক খুঁজে পেয়েছেন।
ট্রেলারের বিতর্কিত সংলাপ
সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে ট্রেলারের শেষ সংলাপ। সেখানে দেখা যায় নায়ক লক্ষ্য জেল থেকে বেরোচ্ছে, আর এক পুলিশ অফিসার তাঁকে বলছে—“জেলে গেলে মানুষ আরও বিখ্যাত হয়ে যায়।” এই সংলাপকে ঘিরেই জল্পনা তুঙ্গে। নেটিজেনদের মতে, এটি আরিয়ানের নিজের জেল অভিজ্ঞতার প্রতি একধরনের ব্যঙ্গাত্মক ইঙ্গিত।এই সংলাপ প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় ওঠে। কেউ বলছেন এটি আরিয়ানের সাহসী জবাব, আবার কেউ এটিকে হেটার্সদের প্রতি কড়া মেসেজ হিসেবে দেখছেন। ফলে মুক্তির আগেই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া
ট্রেলারের সংলাপ শোনার পর একজন ভক্ত এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন—“এই লাইনটা সেরা! আরিয়ান ভাই আপনি হেটার্সদের দুর্দান্ত জবাব দিয়েছেন।” অন্যদিকে আরেকজন লিখেছেন—“শেষ দৃশ্যে যা দেখানো হয়েছে, সেটা আমরা সবাই বুঝে গেছি।” হাসির ইমোজি সহ সেই পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়।জনপ্রিয় এই প্রতিক্রিয়াগুলো প্রমাণ করে যে, আরিয়ান খান তাঁর অতীতের বিতর্ককে সিনেমার মাধ্যমেই অন্যভাবে সামনে এনেছেন। এতে ভক্তরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি কৌতূহলীও বটে। এখন দেখার পালা, সিনেমা মুক্তির পর দর্শক কতটা গ্রহণ করেন এই সাহসী উপস্থাপনাকে।
বিতর্ক থেকে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে
শাহরুখ খানের ছেলে হিসেবে সবসময়ই স্পটলাইটে থেকেছেন আরিয়ান। কিন্তু মাদক-কাণ্ডের পর তাঁর জীবন যেন এক অন্য মোড় নেয়। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হলেও তিনি সেই অধ্যায় পেরিয়ে এখন নতুন পরিচয়ে সামনে এসেছেন—একজন পরিচালক হিসেবে।আরিয়ানের এই যাত্রা প্রমাণ করে, একসময় যিনি বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন, তিনিই আবার শিল্পীসত্তার মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করতে পারেন। আর এই ট্রেলারের মাধ্যমেই হয়তো তিনি জানিয়েছেন—অতীত তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি, বরং আরও শক্তিশালী করেছে।