প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, মোদী ও ট্রাম্পের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধুত্ব ভারতকে আমেরিকার শুল্ক থেকে ছাড় পেতে সাহায্য করতে পারে। বিকল্প বাজার এবং প্রযুক্তি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যে লাভ হবে এবং এফটিএ-র সম্ভাবনা বাড়বে।
নয়াদিল্লি: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)-র সম্ভাবনা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে গভীর এবং বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক এই অভিমুখে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তিনি জানান, এই বন্ধুত্বের কারণে উভয় দেশ শুল্ক এবং বাণিজ্যিক বিরোধ কাটিয়ে দ্রুত এবং লাভজনক চুক্তি করতে পারবে। আমেরিকা ভারত থেকে আমদানিকৃত অনেক প্রধান পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, কিন্তু শ্রিংলার বিশ্বাস, এই বন্ধুত্ব উভয় দেশকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
আমেরিকার শুল্কের কারণে ভারতের উপর প্রভাব
আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানির উপর বড় প্রভাব পড়তে পারে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতের মোট ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির মধ্যে ৬০.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের উপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এর ফলে টেক্সটাইল, রত্ন-অলঙ্কার এবং সামুদ্রিক পণ্য-এর মতো শ্রম-প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে রপ্তানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। তবে ওষুধ, অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান (এপিআই) এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো ক্ষেত্রগুলো এই শুল্কের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। ভারত এই প্রভাব কমানোর জন্য বিকল্প বাজার খুঁজছে।
বিকল্প বাজার এবং বিশ্ব বাণিজ্য কৌশল
ভারত ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, ইউএই এবং ব্রিটেনের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথেও চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত তার রপ্তানিকে নতুন দিকে মোড় দিতে পারে এবং আমেরিকার শুল্ক থেকে হওয়া ক্ষতি কমাতে পারে। শ্রিংলা জানান, ভারত কেবল ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য নয়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলো যেমন সেমিকন্ডাক্টর এবং রেয়ার আর্থ মিনারেলস-এর ক্ষেত্রেও আমেরিকার সাথে অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে। এই পদক্ষেপ আগামী বছরগুলোতে ভারতের বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করবে।
ভারত-আমেরিকার দৃঢ় সম্পর্কের উপর আস্থা
শ্রিংলার মতে, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে কেবল বাণিজ্যিক সম্পর্কই নয়, বরং অভিন্ন মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক নীতিও এই সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। এই ভিত্তি যে কোনও বিরোধ বা সংঘাত অতিক্রম করতে সাহায্য করে। আমেরিকা কর্তৃক সার্জিও গোরকে ভারতে নতুন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করাও এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার ইঙ্গিত। ভারত তার কৌশল এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আগামী দিনে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিত করার দিকে কাজ করছে।
প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যতের বিনিয়োগ
ভারত এখন ঐতিহ্যবাহী রপ্তানির উপর নির্ভরশীল না থেকে সেমিকন্ডাক্টর, রেয়ার আর্থ মিনারেলস এবং হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত কাজ করছে। শ্রিংলার মতে, আগামী ২০ বছরে এই সেক্টরগুলো ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমেরিকা-র মতো দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ভারত এই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী হতে পারে এবং নতুন প্রযুক্তিগত সাফল্যের মাধ্যমে তার রপ্তানিকে আরও উন্নত করতে পারে।