অসংখ্য কালজয়ী গানের কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁসলে আজ ৯২ বছর বয়সে দাঁড়িয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চলেছেন। তবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের পথচলা ছিল চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। গানের মঞ্চের আলো যেমন তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছে, ঠিক তেমনই সংসারের অন্ধকার তাঁকে করেছে আরও দৃঢ় ও অনন্য।
১৬ বছরে প্রথম বিয়ে, শুরু হল দুঃখের যাত্রা
মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজের চেয়ে ২০ বছরের বড় গণপতরাও ভোঁসলেকে বিয়ে করেছিলেন আশা। প্রেম করেই পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুখের আশায় শুরু হওয়া এই দাম্পত্যে নেমে আসে গভীর অশান্তি।
লতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন, পারিবারিক টানাপড়েন
এই বিয়ে মানতে পারেননি দিদি লতা মঙ্গেশকর। এর ফলে দুই বোনের সম্পর্ক ভেঙে যায়, পরিবারের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে। সে সময় গণপতরাও ছিলেন লতার সেক্রেটারি, ফলে আরও আলোচনার ঝড় ওঠে সংবাদমাধ্যমে।
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার
আশার প্রথম সংসার রূপ নেয় অশান্ত নরকে। গণপতরাওয়ের পরিবারও তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম, কিন্তু মেনে নেওয়া হয়নি। সেই কারণে ভুগতে হয়েছে আমাকেই।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাড়ি ছাড়া
সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন আশা। ছোট ছেলে আনন্দ তখনও গর্ভে। তবুও তিনি মনে করতেন, এই সম্পর্কে না জড়ালে হয়তো তিন সন্তানের সুখও পেতাম না।
দ্বিতীয়বার বিয়ে, বাঙালি বধূ আশা
পরে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সঙ্গীত পরিচালক আর.ডি. বর্মনকে। এটি ছিল তাঁদের দু’জনেরই দ্বিতীয় দাম্পত্য। আর.ডি.-কে বিয়ে করার পর বাংলা গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি তাঁর টান আরও স্পষ্ট হয়। বাঙালি শ্রোতাদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন আপনজন।
সুখী হলো না আরডির সংসারও
আর.ডি.-র সঙ্গে সম্পর্কও খুব বেশি দিন টেকেনি। কয়েক বছর পর আলাদা থাকতে শুরু করেন তাঁরা। তবে গানের জগতে তাঁদের জুটি রেখে যায় একের পর এক অমর সৃষ্টি। বিয়ে ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট ছিল তাঁদের।
লতা মঙ্গেশকরের সিদ্ধান্তে প্রভাব
শোনা যায়, আশার বৈবাহিক অশান্তি দেখে লতা মঙ্গেশকর আজীবন বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও এ বিষয়ে নানা মত রয়েছে, তবে মঙ্গেশকর পরিবারের সম্পর্ক এতে প্রভাবিত হয়েছিল তা স্পষ্ট।
৯২ বছরেও অমলিন কণ্ঠ
আজ ৯২ বছর বয়সে দাঁড়িয়েও আশা ভোঁসলে কোটি মানুষের প্রিয় শিল্পী। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি সহ একাধিক ভাষায় তাঁর গানের জাদু আজও অমলিন। ব্যক্তিগত জীবনে যতই আঘাত আসুক, তাঁর কণ্ঠস্বর সবকিছু ছাপিয়ে উঠেছে।
সংগ্রামী জীবনের প্রেরণা
আশা ভোঁসলের জীবন সংগ্রামের এক প্রতীক। বিয়ে, নির্যাতন, বিচ্ছেদ—সব কষ্টের মাঝেও তিনি নিজেকে গানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ তিনি শুধু বর্ষীয়ান গায়িকা নন, বহু নারীর কাছে তিনি এক অনুপ্রেরণা।
ভারতের কিংবদন্তি গায়িকা আশা ভোঁসলের জীবন শুধু সুর-সঙ্গীতে নয়, দুঃখ-যন্ত্রণা ও সংগ্রামেও ভরা। ১৬ বছরে প্রথম বিয়ে, স্বামীর নির্যাতন, সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে আসা থেকে শুরু করে আর.ডি. বর্মনের সঙ্গে বিয়ে—সবই ছিল অশান্তিতে ঘেরা। তবুও তিনি গানের মাধ্যমে জয় করেছেন কোটি শ্রোতার হৃদয়।