২০২৫ সালে ৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার গোপাষ্টমী উৎসব পালিত হবে। এই উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোচারণ লীলার সাথে সম্পর্কিত এবং মথুরা-বৃন্দাবনে বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। এই দিনে গরু ও বাছুরের পূজা করলে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি এবং জীবনে অগ্রগতির আশীর্বাদ লাভ হয়।
Gopashtami: হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর কার্তিক শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গোপাষ্টমী উৎসব পালিত হয়। ২০২৫ সালে এই উৎসব ৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার উদযাপিত হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক ব্রজবাসীদের ইন্দ্রের ক্রোধ থেকে রক্ষার কাহিনীর সঙ্গে জড়িত এই দিনটি গো-পূজা এবং গো-সেবার জন্য উৎসর্গীকৃত। মথুরা, বৃন্দাবন এবং ব্রজ অঞ্চলে এই উৎসব বিশেষ উৎসাহের সাথে পালিত হয়। এই দিনে গরুর পূজা ও দান করলে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি লাভ হয়।
গোপাষ্টমী উৎসবের ধর্মীয় তাৎপর্য
গোপাষ্টমীর সম্পর্ক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবন-লীলার সঙ্গে জড়িত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবাসীদের ইন্দ্রের ক্রোধ থেকে রক্ষা করার জন্য গোবর্ধন পর্বতকে তাঁর কনিষ্ঠা আঙুলে সাত দিন ধরে ধারণ করে রেখেছিলেন, তখন দেবর্ষি নারদের পরামর্শে ইন্দ্রদেব গোপাষ্টমীর দিনে তাঁর পরাজয় স্বীকার করেছিলেন। সেই দিন থেকেই এই উৎসব গোপাষ্টমী নামে পরিচিতি লাভ করে।
বলা হয় যে, এই দিনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথমবার গরু চরাবার জন্য বনে প্রবেশ করেছিলেন, যাকে গোচারণ লীলা বলা হয়। এই কারণেই এই দিনে গরু ও বাছুরের পূজা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ব্রজ ও মথুরায় এই উৎসব অত্যন্ত শ্রদ্ধা সহকারে পালিত হয়। এখানে ভক্তরা গরুদের সাজান, তাদের শরীরে হলুদ ও চন্দনের প্রলেপ লাগান, ফুলের মালা পরান এবং গো-মাতার আরতি করেন।
২০২৫ সালের গোপাষ্টমীর তিথি এবং শুভ মুহূর্ত
- গোপাষ্টমী - ৩০ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- অষ্টমী তিথি শুরু: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ০৯:২৩ মিনিটে
- অষ্টমী তিথি শেষ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১০:০৬ মিনিটে
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, সূর্যোদয়ের পর যতক্ষণ অষ্টমী তিথি বিদ্যমান থাকে, ততক্ষণ গোপাষ্টমীর ব্রত ও পূজা করা শুভ বলে মনে করা হয়।

এই দিনের তাৎপর্য
গোপাষ্টমীর দিনে গরুর পূজা করলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি লাভ এবং জীবনে আসা বাধা দূর হয়। এই দিনটি গো-সেবা, দান এবং ভক্তির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত। বলা হয় যে, যে ব্যক্তি এই দিনে গরুর সেবা করে, সে জীবনে সব ধরনের সাফল্য লাভ করে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গো-মাতাকে সকল দেবতার আবাসস্থল বলে মনে করা হয়, এই কারণেই গোপাষ্টমীর দিনে তাঁদের পূজা করলে ভগবান বিষ্ণু, ব্রহ্মা, শিব এবং সকল দেবী-দেবতার আশীর্বাদ লাভ হয়।
গোপাষ্টমীতে পালনীয় বিশেষ প্রতিকার
১. ধন বৃদ্ধির প্রতিকার
যদি আপনি আপনার জীবনে ধন ও উন্নতি চান, তাহলে গোপাষ্টমীর দিনে একটি আস্ত হলুদের গুঁড়ি এবং পাঁচটি সাদা কড়ি নিন। এগুলো গরুর কপালে স্পর্শ করিয়ে আপনার বাড়িতে সুরক্ষিত স্থানে রেখে দিন। এমনটা করলে ধন বৃদ্ধি হয় এবং আর্থিক অবস্থা মজবুত হয়।
২. পারিবারিক সমস্যার সমাধানের প্রতিকার
যদি আপনার পরিবারে কোনো প্রকার সমস্যা চলে থাকে, তাহলে এই দিনে গো-মাতাকে রোলির তিলক লাগান এবং রুটির উপর সামান্য ক্ষীর রেখে খাওয়ান। এরপর বাড়িতে এসে মাতা দুর্গার এই মন্ত্রটি ১১ বার জপ করুন:
সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোঽস্তুতে॥
এই প্রতিকারে পারিবারিক কলহ শেষ হয় এবং ঘরে সুখ-শান্তি আসে।
৩. জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতিকার
যদি আপনি আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চান, তাহলে স্নানের পর পরিষ্কার কাপড় পরে গো-মাতার পূজা করুন। তাঁদেরকে হলুদের তিলক, ধূপ-দীপ এবং আরতি করুন। এরপর হাত জোড় করে গো-মাতাকে প্রণাম করুন। এই প্রতিকার আপনার জীবনে স্থায়িত্ব ও সাফল্য নিয়ে আসে।
৪. স্বাস্থ্য লাভের প্রতিকার
গোপাষ্টমীর দিনে গো-মাতাকে ফুলের মালা অর্পণ করুন এবং তাঁদেরকে সেদ্ধ ভাতে সামান্য মিষ্টি মিশিয়ে খাওয়ান। একই সাথে হাত জোড় করে আশীর্বাদ নিন। মনে করা হয় যে, এমনটা করলে শরীর নিরোগ থাকে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
৫. সুখ-সমৃদ্ধির জন্য প্রতিকার
ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য গো-মাতাকে রোলির তিলক লাগান, চুনরি পরান, ফুল অর্পণ করুন এবং সেদ্ধ ছোলা প্রসাদ হিসাবে খাওয়ান। এরপর দুর্গা মায়ের এই মন্ত্রটি পাঁচবার জপ করুন:
সর্ববাধাবিনির্মুক্তো ধনধান্যসুতান্বিতঃ। মনুষ্যো মৎপ্রসাদেন ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ॥
এই প্রতিকার পরিবারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে।
৬. শিশুদের খুশির জন্য প্রতিকার
আপনার শিশুদের জীবনে সুখ আনার জন্য গরুকে সবুজ ঘাস খাওয়ান এবং তাদের পায়ের নিচের মাটি আপনার শিশুদের কপালে লাগান। এই দিনে এমনটা করলে শিশুদের জীবন মঙ্গলময় হয়।
৭. ব্যবসা ও স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য প্রতিকার
গোপাষ্টমীর দিনে গো-মাতার বিধিসম্মত পূজা করুন এবং গোশালায় দান করুন। এরপর মাতা দুর্গার এই মন্ত্রটি ১১ বার জপ করুন:
দেহি সৌভাগ্যম্ আরোগ্যং দেহি মে পরমং সুখম্। রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
এর ফলে ব্যবসায় বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
৮. সৌভাগ্য বৃদ্ধির জন্য প্রতিকার
যদি আপনি আপনার সৌভাগ্য বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে গো-মাতাকে স্নান করিয়ে তাঁদের সেবা করুন। যদি এটি সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁদের জল পান করান এবং প্রণাম করুন। এমনটা করলে সৌভাগ্য বাড়ে এবং বাধা দূর হয়।
৯. ঘরে ইতিবাচক শক্তির জন্য প্রতিকার
আপনার ঘরকে নেতিবাচক শক্তি থেকে মুক্ত রাখতে প্রধান দরজায় গরুর গোবর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন তৈরি করুন। এই প্রতিকার ঘরে শান্তি ও ইতিবাচকতা নিয়ে আসে।
১০. বাণিজ্যিক ভ্রমণের সাফল্যের জন্য প্রতিকার
যদি আপনি ব্যবসা সংক্রান্ত ভ্রমণে যাচ্ছেন, তাহলে গো-মাতার সাতবার পরিক্রমা করুন এবং তাঁদেরকে গমের দালিয়া খাওয়ান। মনে করা হয় যে, এর ফলে ভ্রমণ সফল হয় এবং ভালো ফল পাওয়া যায়।
১১. পরিবারের কাজের সাফল্যের জন্য প্রতিকার
গোপাষ্টমীর দিনে গরুর ঘুঁটে কর্পূর জ্বালিয়ে পুরো বাড়িতে ধূপ দেখান এবং তারপর ঘুঁটেটি ঘরের দক্ষিণ দিকে রেখে দিন। এমনটা করলে পরিবারের সমস্ত কাজ বিনা বাধায় সম্পন্ন হয়।
১২. প্রেম ও সদ্ভাব বাড়ানোর প্রতিকার
গোপাষ্টমীর দিনে গরু চরাণো গোয়ালা বা গো-সেবককে শ্রদ্ধাপূর্বক বস্ত্র উপহার দিন। এর ফলে সমাজে প্রেম, শ্রদ্ধা এবং সদ্ভাব বৃদ্ধি পায়।
গোপাষ্টমীর সামাজিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
গোপাষ্টমী কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি গো-সংরক্ষণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রতীকও বটে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে গরুকে "পৃথিবীর মাতা" বলা হয়েছে, কারণ তাঁর থেকে প্রাপ্ত দুধ, গোবর এবং গোমূত্র কেবল উপযোগীই নয়, বরং পরিবেশকেও শুদ্ধ করে। এই দিনে গোশালায় দান করা বা গরুর সেবা করা সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়।












