অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য ইউটিউব নিষিদ্ধ: বিস্তারিত

অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য ইউটিউব নিষিদ্ধ: বিস্তারিত

অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ইউটিউব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে এই নীতি কার্যকর হবে এবং এর লঙ্ঘনে ২৬৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

ইউটিউব: সোশ্যাল মিডিয়ার শিশুদের উপর প্রভাব এখন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। অনেক দেশ এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, এবং এরই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়া একটি বড় এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ইউটিউবকে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন আইন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে এবং এর উদ্দেশ্য শিশুদের ক্ষতিকারক অনলাইন কন্টেন্ট থেকে রক্ষা করা।

ইউটিউবের উপর নিষেধাজ্ঞা: সিদ্ধান্তটি কী?

অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি নতুন আইনের অধীনে, ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের ইউটিউব সহ কিছু প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা হবে। পূর্বে ইউটিউবকে এই নিয়ম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু eSafety কমিশনারের রিপোর্ট এবং গবেষণার পরে এটিকেও এখন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব লক্ষ লক্ষ শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের উপর পড়বে, সেই সাথে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়িত্ব এবং জবাবদিহিতা বাড়বে।

জরিমানার বিধান: ২৬৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা

যদি কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এই আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে তাকে A$49.5 মিলিয়ন (প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা) পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। এই পরিমাণ অর্থ অস্ট্রেলীয় আইনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ডিজিটাল পেনাল্টি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র আইন তৈরি করা নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ব পালনের একটি প্রচেষ্টা।

eSafety কমিশনারের রিপোর্ট চিত্র পরিবর্তন করেছে

অস্ট্রেলিয়ার eSafety কমিশনার কর্তৃক উপস্থাপিত রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে যে:

  • ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৩৭% শিশু ইউটিউবে ক্ষতিকারক কন্টেন্ট দেখেছে।
  • এই শতাংশ অন্য যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে ইউটিউবে শিশুরা ভুল তথ্য, সহিংসতা, আত্মঘাতী প্রবণতা এবং অস্বাস্থ্যকর বডি ইমেজ সম্পর্কিত কন্টেন্ট বেশি দেখতে পাচ্ছে।

ইউটিউবের জবাব: 'আমরা সোশ্যাল মিডিয়া নই'

ইউটিউব এই নীতি পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যে: 'আমরা একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া নই। আমরা বিনামূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন কন্টেন্ট সরবরাহ করি, যা মানুষ টিভিতেও দেখতে পারে।' তবে, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আগে থেকেই ইউটিউবকে দেওয়া ছাড় নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। তাদের মতে, ইউটিউবের প্রভাব শিশুদের উপর সমান বা তার চেয়েও বেশি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: 'এখন দায়িত্ব নেওয়ার সময়'

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এই নীতির সমর্থন করে বলেছেন: 'সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের শিশুদের ক্ষতি করছে, এবং আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে অভিভাবকরা যেন এই বিশ্বাস রাখেন যে সরকার তাদের সন্তানদের সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই নিয়ম প্ল্যাটফর্মগুলোকে তাদের সামাজিক দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।

কোন প্ল্যাটফর্মগুলো ছাড় পেয়েছে?

সরকার কিছু প্ল্যাটফর্মকে এই আইন থেকে ছাড় দিয়েছে, কারণ সেগুলোকে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে:

  • অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম
  • স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন
  • মেসেজিং সার্ভিস (যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল)

এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে আগে থেকেই আলাদা নিয়ম প্রযোজ্য এবং শিশুদের উপর এদের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।

অভিভাবক এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত কী?

অভিভাবকরা এই সিদ্ধান্তকে মিশ্রভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। কারো কারো মতে, শিশুদের সৃজনশীল এবং শিক্ষামূলক ভিডিও থেকেও বঞ্চিত করাটা বাড়াবাড়ি হতে পারে, আবার কেউ কেউ এটিকে শিশুদের মানসিক এবং আবেগিক নিরাপত্তার দিকে একটি সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করছেন। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ হল, এই ধরনের পলিসিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে ফিল্টারিং এবং কন্টেন্ট ভ্যালিডেশনের কৌশল বেশি ব্যবহার করা উচিত।

ভারত এবং অন্যান্য দেশে এর প্রভাব?

অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপের ফলে সারা বিশ্বের নীতি-নির্ধারকদের উপর চাপ বাড়তে পারে। ভারতে, যেখানে ইউটিউব শিশুদের পড়ালেখা থেকে শুরু করে বিনোদন পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়, সেখানে এই ধরনের নীতি নিয়ে আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল কোম্পানিগুলো যদি প্রাইভেসি এবং কন্টেন্ট মডারেশনের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখায়, তাহলে ভারত সহ অন্যান্য দেশও একই পথে হাঁটতে পারে।

Leave a comment