পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক দেখিয়ে ভুল করেছে। কাবুলে এক কাপ চা পান করা তাদের জন্য ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক ডার এটিকে 'ভস্মাসুর মুহূর্ত' বলে অভিহিত করেছেন। আইএসআই এবং পূর্ববর্তী সরকারের নীতি দেশকে সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিতিশীলতার ঝুঁকিতে ফেলেছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তান কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানকে তার কৌশলগত গভীরতা (স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ) হিসেবে গণ্য করে সেখানকার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু এখন সেই তালেবানই পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক ডার সিনেটে এক বিবৃতিতে এটিকে 'ভস্মাসুর মুহূর্ত' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, কাবুলে এক কাপ চা পান করা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছে।
ইশাক ডার ব্যাখ্যা করেছেন যে, তালেবানের সঙ্গে সদ্ভাব প্রদর্শনের চেষ্টায় পাকিস্তান অনেক ভুল করেছে, যার ফল এখনও দেশটি ভোগ করছে। তিনি এই কথাটি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে ফেরা তৎকালীন আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদের কাবুল সফরের প্রসঙ্গে বলেছেন।
এক কাপ চা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত
ইশাক ডার জানান, সেই সময় পাকিস্তানের তৎকালীন সরকার এবং আইএসআই তালেবানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল এবং কাবুলে চা পান করেছিল। এর মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে পাকিস্তান আফগানদের পাশে আছে। কিন্তু ডার স্বীকার করেন যে এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জন্য একটি বিশাল ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। তিনি বলেন, সীমান্ত খোলা এবং তালেবানের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর সিদ্ধান্ত ব্যয়বহুল হয়েছিল।
তিনি সিনেটে জোর দিয়ে বলেন যে, এমন ভুল যেন আর না হয় এবং পাকিস্তানকে এখন আফগানিস্তানে তালেবানের প্রকৃত ভূমিকা এবং সেখানকার জটিল পরিস্থিতি বুঝতে হবে।
ইমরান খান এবং আইএসআই-এর সমালোচনা

ডার তৎকালীন পিটিআই সরকার এবং ইমরান খানের নেতৃত্বে আইএসআই-এর ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে সেই সময়ের নীতিগুলি পাকিস্তানকে আফগানিস্তানে তালেবানের দয়া এবং সমর্থনের জালে জড়িয়ে দিয়েছে। ইশাক ডার স্পষ্ট করে বলেন যে পাকিস্তানকে এখন বুঝতে হবে যে তালেবান কোনো নিয়ন্ত্রিত বা বন্ধুত্বপূর্ণ শক্তি নয়, বরং তাদের কার্যকলাপ এখন পাকিস্তানের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠছে।
তিনি জানান, তালেবান-সম্পর্কিত কার্যকলাপের কারণে পাকিস্তানের অনেক অংশে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান, ফিতনা আল-খাওয়ারিজ এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির মতো সংগঠনগুলো অন্তর্ভুক্ত।
ভস্মাসুরের গল্প কী?
ইশাক ডার পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে ভস্মাসুরের গল্পের সঙ্গে তুলনা করে ব্যাখ্যা করেছেন। ভস্মাসুর ভগবান শিবের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন এবং বরদানের কারণে নিজের হাতেই ভস্মীভূত হয়েছিলেন। ডার এটিকে পাকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত করে বলেন যে, পাকিস্তান যে তালেবানকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল, তারাই এখন তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এই 'ভস্মাসুর মুহূর্ত' পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা।
পাকিস্তানের জন্য শিক্ষা
ডার বলেন যে পাকিস্তানকে এখন তালেবানকে বুঝতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি সতর্ক করেন যে আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির প্রভাব পাকিস্তানে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে পাকিস্তানকে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করতে হবে।












