ভাতের মাড়—অলিখিত বিউটি সিক্রেট
রূপচর্চা মানেই আমরা ভাবি দামি প্রসাধনী, পার্লার বা ব্র্যান্ডেড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। কিন্তু ঘরেই লুকিয়ে আছে এক অসাধারণ উপাদান—ভাতের মাড় বা ফ্যান। সাধারণত ভাত ছেঁকে নেওয়ার পর যে মাড় ফেলে দেওয়া হয়, সেটিই আসলে হতে পারে প্রাকৃতিক টোনার, ফেসওয়াশ কিংবা কন্ডিশনার। ভিটামিন বি, মিনারেলস এবং অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ ভাতের মাড় ত্বক ও চুলের জন্য এক অনন্য পুষ্টির ভান্ডার।ভাতের মাড়কে সাধারণত অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দেওয়া হয়, অথচ এটিই হতে পারে আপনার ঘরোয়া বিউটি কেয়ার রুটিনের অমূল্য সঙ্গী। এতে থাকে এমন উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল করে, চুলকে করে মজবুত ও দীপ্তিময়।
ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়
প্রথমত, ভাতের মাড় প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, পাশাপাশি রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালা ও কালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। ভাতের ফ্যানে থাকা স্টার্চ ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেয়, ফলে ব্রণ ও ফুসকুড়ির সমস্যা কমে যায়। যারা কেমিক্যাল টোনারে অ্যালার্জি পান, তাঁদের জন্য ভাতের মাড় হতে পারে নিরাপদ বিকল্প।রোদে পোড়া ও ব্রণ সমস্যায় ভাতের মাড় কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিয়মিত মাড় দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ হয়, পায় সতেজ উজ্জ্বলতা। এটি এক প্রাকৃতিক কুলিং এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
ভাতের মাড় ও মধুর ফেসপ্যাক
দু’চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে একটি প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখাবে। এই প্যাক ত্বককে করে তুলবে মসৃণ, আর্দ্রতা বজায় রাখবে এবং শুষ্কতার সমস্যা দূর করবে। দীর্ঘ অফিসের দিন শেষে ক্লান্ত ত্বকে অথবা পার্টির আগে ব্যবহার করলে মুহূর্তের মধ্যে ফ্রেশ ও গ্লোয়িং লুক পাওয়া সম্ভব।ভাতের মাড়-মধুর ফেসপ্যাক ত্বকের প্রাকৃতিক গ্লো বাড়াতে সাহায্য করে। এটি একদিকে ময়েশ্চারাইজার, অন্যদিকে ক্লিনজারের মতো কাজ করে। শুষ্ক ও নির্জীব ত্বককে করে তোলে নরম ও কোমল।
ভাতের মাড় দিয়ে ফেসওয়াশ
চার চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে এক চামচ অ্যালো ভেরা জেল ও রিঠার জল মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। ফ্রিজে রেখে দিনে দু’তিনবার মুখ ধুলে এটি প্রাকৃতিক ফেসওয়াশের মতো কাজ করবে। এর ফলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে, ধুলো-ময়লা জমবে না এবং রোদে পোড়ার ঝুঁকিও কমবে।ভাতের মাড়-ভিত্তিক এই ফেসওয়াশ দৈনিক ব্যবহারে ত্বককে রাখবে সতেজ ও উজ্জ্বল। এতে অ্যালো ভেরার হাইড্রেশন ও রিঠার প্রাকৃতিক ক্লিনজিং প্রভাব মিলিয়ে তৈরি হবে এক নিখুঁত ঘরোয়া স্কিন কেয়ার ফর্মুলা।
চুলের যত্নে ভাতের মাড়
শুধু ত্বক নয়, ভাতের মাড় চুলের জন্যও দারুণ কন্ডিশনার। এটি চুলকে নরম ও মসৃণ করে, পাশাপাশি চুল পড়া কমায়। চুলে নিয়মিত ভাতের মাড় লাগালে শুষ্কতা দূর হয় ও চুল পায় প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।ভাতের মাড়ের প্রোটিন ও স্টার্চ চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। ফলে ভাঙা ও রুক্ষ চুলের সমস্যা কমে। যারা কেমিক্যাল কন্ডিশনার ব্যবহার করতে চান না, তাঁদের জন্য এটি হতে পারে সেরা বিকল্প।
লেবুর রসে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক
ভাতের মাড়ে একটি গোটা লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান। কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করলে চুলের রুক্ষতা দূর হবে, ডগা ফাটা রোধ হবে এবং চুল হবে আরও চকচকে। পাশাপাশি লেবুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ খুশকির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।ভাতের মাড়-লেবুর মিশ্রণ এক অসাধারণ হেয়ার প্যাক। এটি চুলকে করে গোড়া থেকে মজবুত, দূর করে ডগা ফাটা ও খুশকি। সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করলে পাবেন প্রাকৃতিক সিল্কি চুল।
ঘরোয়া উপায়ে চুল রঙ করতে ভাতের মাড়
চুলে কেমিক্যাল ডাই না লাগিয়েও রঙ করতে চাইলে ভাতের মাড় হতে পারে দারুণ বিকল্প। সামান্য কফির গুঁড়ো মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলে চুলে হালকা বাদামী রঙ ফুটে উঠবে। সপ্তাহে দু’দিন ব্যবহার করলে দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া যায়।ভাতের মাড়-কফি হেয়ার প্যাক চুলে প্রাকৃতিক কালার আনে। এটি শুধু রঙই দেয় না, বরং চুলকে করে ঘন ও চকচকে। কেমিক্যাল ছাড়াই চুল রঙ করার সেরা উপায় হতে পারে এই ঘরোয়া রেসিপি।