বয়স বাড়লেও থেমে নেই পদক্ষেপ
আটাত্তর পেরিয়ে ছিয়াশি। সাধারণত এই বয়সে মানুষ অবসরে জীবন কাটাতে চান। কিন্তু বিমান বসুর ক্ষেত্রে ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। এখনও তিনি মিছিল-মিটিংয়ের প্রথম সারিতে হাঁটেন, প্রতিবাদে গলা মেলান, ধুতি-পাঞ্জাবিতে ঝড় তোলেন রাস্তায়। বয়স কোনও দিনই তাঁর সংগ্রামী মানসিকতাকে আটকে রাখতে পারেনি। বরং লড়াইয়ের ময়দানেই যেন তিনি সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ।
ডাক্তারি কড়া বার্তা, কিন্তু এনার্জি অপরাজেয়
তবে সম্প্রতি চিকিৎসকরা বর্ষীয়ান নেতাকে কিছু বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন। ছিয়াশি বছর বয়সে যেমন কিছু ঝুঁকি এড়ানো জরুরি, তেমনই শরীর সচল রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁকে যত খুশি হাঁটার অনুমতি মিললেও বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। হঠাৎ সর্দি-কাশি বা জ্বর যেন তাঁর সক্রিয়তাকে থামিয়ে না দেয়— সেই কারণেই চিকিৎসকদের এই কড়া পরামর্শ।
আলিমুদ্দিনই সংসার, বই-গাছ-বিড়ালের সঙ্গ
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিআইএম কার্যালয়ই আজও বিমান বসুর আসল সংসার। সেখানেই বইয়ের পাহাড়, গাছপালা আর প্রিয় বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটে তাঁর। রাজনীতি মানেই জীবন, জীবন মানেই রাজনীতি— এই দর্শন নিয়েই চলেন তিনি। অবসর, ছুটি বা বিশ্রাম যেন তাঁর অভিধানেই নেই। এ কারণেই রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা বলেন, “বিমানদা এখনও তরুণদের থেকেও বেশি উদ্যমী।”
রাজভবনের চা-চক্রে প্রাণবন্ত উপস্থিতি
শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজভবনের ঐতিহ্যবাহী চা-চক্রে পৌঁছনো মাত্রই নজর কাড়লেন বিমান বসু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানসভা স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ছিলেন উপস্থিত। এই চা-চক্রে সৌজন্যের উষ্ণ মুহূর্তে মিলল এক বিরল দৃশ্য— রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরেও মানবিকতার আবহ।
মমতা-বিমান সৌজন্যে রাজনীতি ছাপিয়ে মানবিকতা
বিমান বসুকে দেখে মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন। ‘বিমানদা, কেমন আছেন?’— মমতার এই প্রশ্নে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে বর্ষীয়ান নেতার মুখে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে শরীরের যত্ন নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। পাল্টা সৌজন্যে বিমান বসুও বলেন, ‘ভালো আছি, সকলে ভালো থাকুন।’ রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হলেও সৌজন্যের এই মুহূর্ত রাজভবনের চা-চক্রকে করে তুলল আরও স্মরণীয়।
কুণাল ঘোষের খোশগল্প ও ডাক্তারি পরামর্শ প্রকাশ
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকেই প্রকাশ্যে আসে চিকিৎসকের নির্দেশের খবর। তিনি লেখেন, “বিমানদাকে দেখে অবাক হতে হয়। বয়স ছিয়াশি, অথচ এনার্জি একেবারে তরুণদের মতো। ডাক্তার হেঁটে চলতে বলেছেন, কিন্তু ভিজে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধ করেছেন।” আসলে, বর্ষীয়ান নেতার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছাই তাঁকে এমন উজ্জীবিত রেখেছে।
রাজভবনে জমকালো সৌজন্য আসর
রাজভবনের চা-চক্র যেন হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলের মিলনমেলা। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের দৃশ্যও ধরা পড়ে। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, গায়িকা ঊষা উত্থুপ সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তবে সকলের নজর কেড়েছিলেন যিনি, তিনি আর কেউ নন— বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
বয়স নয়, ইচ্ছাশক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি
৮৬ বছর বয়সেও বিমান বসুর মধ্যে যে এনার্জি ভরপুর, তা দেখে চিকিৎসকরাও বিস্মিত। তিনি যেন প্রমাণ করে দিচ্ছেন— বয়স কেবল একটি সংখ্যা, সত্যিকারের শক্তি লুকিয়ে থাকে ইচ্ছাশক্তি আর লড়াইয়ের মানসিকতায়। ডাক্তারি পরামর্শ মেনে চললেও তাঁর সংগ্রামী স্পৃহা আজও অটুট। আর তাই রাজনীতির ময়দানে তিনি এখনও এক অনন্য দৃষ্টান্ত।