বঙ্গ বিজেপির নতুন চাল ৩৬ জেলা কমিটি ঘোষণায় পুরনোদের প্রত্যাবর্তন সামনে বিধানসভা লড়াইয়ের প্রস্তুতি

বঙ্গ বিজেপির নতুন চাল ৩৬ জেলা কমিটি ঘোষণায় পুরনোদের প্রত্যাবর্তন সামনে বিধানসভা লড়াইয়ের প্রস্তুতি

বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক পরিবর্তন

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিজেপি এবার সাংগঠনিক ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাতে রাজ্য নেতৃত্ব ঘোষণা করল ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৬টি জেলার নতুন কমিটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কমিটি কার্যকর থাকবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ৮ জন, জেনারেল সেক্রেটারি ৪ জন এবং সেক্রেটারি পদে ঘোষণা হয়েছে আরও ৮ জনের নাম।

বাকি ৭ জেলার কমিটি স্থগিত কেন?

প্রথমেই পরিকল্পনা ছিল ১৫ আগস্টের মধ্যেই সব জেলার কমিটি ঘোষণা করা। তবে নির্ধারিত সময়ের পর প্রকাশ করা গেল শুধুমাত্র ৩৬ জেলার তালিকা। কলকাতা উত্তর, দক্ষিণ, হাওড়া সদর, ব্যারাকপুর, যাদবপুর সহ সাতটি জেলার কমিটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিজেপি সূত্রে খবর, ওই সব জেলা প্রধানমন্ত্রীর জনসভার দায়িত্ব সামলাবে, তাই আপাতত কমিটি ঘোষণা আটকে রাখা হয়েছে।

পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব বাড়ল

ঘোষিত কমিটি নিয়ে নজরকাড়া বিষয় হল—বেশ কয়েকটি জেলায় পুরনো ও আদি কর্মীদের আবারও গুরুত্বপূর্ণ পদে ফেরানো হয়েছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা কর্মীদের সক্রিয় করে তোলাই যে লক্ষ্য, তা স্পষ্ট। বিশেষত কোচবিহার, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামে ব্যাপক রদবদল দেখা গেছে। রাজনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে, শমীক ভট্টাচার্যের এই কৌশল আগামী ভোটের জন্য আদি-নব্য দ্বন্দ্ব কমানোর চেষ্টা।

রাঢ়বঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিশেষ তাৎপর্য

বিজেপি বারবার দাবি করেছে যে রাঢ়বঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ তাদের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে এই দুই অঞ্চলে ভোট শেয়ার কিছুটা কমেছে। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে জেলা কমিটিতে পুরনো মুখগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে শক্ত ঘাঁটিকে ফের মজবুত করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে পুরনোদের প্রত্যাবর্তন

গত কয়েক বছরে নানা জেলায় কমিটি ঘোষণা নিয়ে দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে যাতে কোনো অসন্তোষ না ফেটে বেরোয়, তাই নতুন কমিটিতেও পুরনো সদস্যদের রাখা হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য আগেই বারবার বলেছেন—পুরনো কর্মীদের সম্মান ও মর্যাদা ফেরাতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জেলা কমিটিতেই তার প্রতিফলন মিলছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে কৌশল

আগামী ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর জনসভা রয়েছে। তার আগে জেলা কমিটি ঘোষণা আংশিকভাবে আটকে রাখা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে। অনেকের মতে, বাকি জেলা কমিটি প্রকাশ করলে ক্ষোভ বা বিভাজন প্রকাশ্যে আসতে পারে। তাই আপাতত নিরাপদ কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে রাজ্য নেতৃত্ব।

আদি-নব্য দ্বন্দ্বে ব্যালেন্সের চেষ্টা

বিজেপির ভেতরে বহুদিন ধরেই আদি ও নব্যদের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। এবার শমীক ভট্টাচার্যের কৌশল সেই বিভাজন মিটিয়ে উভয় পক্ষকে ব্যালেন্স করার। জেলার পর জেলা পুরনোদের ফের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন—বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

সাংগঠনিক রদবদলের বার্তা

নতুন জেলা কমিটি প্রকাশের মাধ্যমে বিজেপি বার্তা দিতে চাইছে যে ২০২৬-এর ভোটে তারা আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য। আর সেই কারণেই এই রদবদলে পুরনো নেতাদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণ—সব কিছুকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

আরএসএস-এর প্রভাবও কার্যকর

শুধু বিজেপির ভেতর থেকে নয়, সংঘ পরিবার থেকেও বারবার বলা হচ্ছিল আদি কর্মীদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। জেলা কমিটি প্রকাশে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শমীক ভট্টাচার্য ও সংগঠনের নতুন কৌশল কার্যকর হলে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের মত।

ভবিষ্যতের লড়াইয়ের প্রস্তুতি

সব মিলিয়ে স্পষ্ট, বিজেপি ২০২৬ সালের ভোটকে সামনে রেখে সাংগঠনিক ঘুঁটি সাজাতে চাইছে শক্তভাবে। পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে এনে ঐক্যের ছবি তুলে ধরা, অন্তর্দ্বন্দ্ব কমানো এবং শক্ত ঘাঁটিকে আরও মজবুত করা—এই তিনটি লক্ষ্য পূরণ করাই মূল কৌশল। তবে এই চাল কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলবে।

Leave a comment