মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন যে বিহারে SIR-এর সাফল্যের পর দেশের অন্যান্য রাজ্যেও বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR) কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে। তারিখগুলির সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে নেওয়া হবে।
নয়া দিল্লি। বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR)-এর সাফল্যের পর এখন দেশের অন্যান্য রাজ্যেও এই প্রক্রিয়াটি কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR)-এর অধীনে অযোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং যোগ্য ভোটাররা নির্বাচনের আগে নাম নথিভুক্ত করার জন্য ফর্ম-6 বা ফর্ম-7 পূরণ করতে পারবেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন (Election Commission) দ্বারা নেওয়া হবে।
SIR-এর বিষয়ে তিন নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত নেবেন
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন যে ২৪ জুন বিহারে SIR প্রক্রিয়া শুরুর সময়ই নির্বাচন কমিশন সর্বভারতীয় স্তরে ভোটার তালিকা সংশোধনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। বর্তমানে এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যে SIR শুরু করার তারিখগুলির সিদ্ধান্ত তিন নির্বাচন কমিশনারের বৈঠকে নেওয়া হবে। এর জন্য প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচন আধিকারিকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেছেন যে বিহারের নির্বাচন আধিকারিকদের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি যাতে সমস্ত রাজ্যে সমানভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ক্রমাগত নজরদারি এবং নির্দেশনা প্রদান করছে।
বিহার থেকে দেশ পাবে নির্বাচন সংস্কারের নতুন মডেল
জ্ঞানেশ কুমার বলেছেন যে বিহার বৈশালী থেকে গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিল এবং এখন বিহার থেকেই দেশ নির্বাচন সংস্কারের (election reform) নতুন দিকনির্দেশনা পাবে। তিনি জানিয়েছেন যে বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR)-এর অধীনে অযোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ভোটার তালিকা আরও শুদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য (reliable) হয়েছে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও জানিয়েছেন যে যোগ্য ভোটাররা এখন মনোনয়নের শেষ হওয়ার দশ দিন আগে পর্যন্ত ফর্ম-6 বা ফর্ম-7 পূরণ করে তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এই পদক্ষেপটি বিশেষ করে নতুন ভোটারদের এবং বাসস্থান পরিবর্তন করা ভোটারদের জন্য সুবিধাজনক প্রমাণিত হবে।
২২ বছর পর ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে বিহারে ভোটার তালিকার এই প্রথম নিবিড় পুনর্বিবেচনা (deep revision) ২০০৩ সালের পর হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য রাজ্যের ২৪৩টি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটিতে একজন নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিক (ERO) এবং ৯০,২০৭ জন BLO (বেসিক লেভেল স্টাফ) সহযোগিতা করেছেন। এই ব্যাপক প্রচেষ্টার পর রাজ্যে ২২ বছর পর ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ হয়েছে।
জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন যে নতুন উদ্যোগের কিছু অংশ নির্বাচনের আগে কার্যকর করা হবে এবং কিছু ব্যবস্থা ভোটগ্রহণের সময় কার্যকর থাকবে। তিনি বলেছেন যে এই প্রক্রিয়াটি ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা (transparency) এবং নির্ভুলতা (accuracy) নিশ্চিত করবে।
আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র (identity proof) হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে আধার কার্ড নাগরিকত্বের (citizenship) প্রমাণ নয়। এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করা।
দেশের অন্যান্য রাজ্যে SIR-এর প্রস্তুতি
বিহারে SIR-এর সাফল্য দেখে এখন নির্বাচন কমিশন দেশের অন্যান্য রাজ্যেও এই প্রক্রিয়াটি কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন যে তিন নির্বাচন কমিশনারের বৈঠকে রাজ্যভিত্তিক তারিখগুলি চূড়ান্ত করা হবে। এর উদ্দেশ্য হল সমস্ত রাজ্যে ভোটার তালিকার শুদ্ধতা এবং নির্ভুলতা (accuracy) সমানভাবে বজায় রাখা নিশ্চিত করা।
ভোটদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সংস্কার
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন যে বিহারে SIR প্রক্রিয়া নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা (transparency) এবং সংস্কারকে (reform) উৎসাহিত করেছে। তিনি বলেছেন যে দেশের অন্যান্য রাজ্যে এটি কার্যকর করলে ভোটদান প্রক্রিয়া আরও সুরক্ষিত এবং নির্ভুল হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে এই প্রচেষ্টা কেবল ভোটার তালিকা সংস্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ফলে গণতন্ত্রে (democracy) নাগরিকদের আস্থা আরও বাড়বে। অযোগ্য ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং যোগ্য ভোটারদের যুক্ত করার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু (fair) হবে।