দুর্গাপুরে বিজেপি যুব নেতা গ্রেপ্তার

দুর্গাপুরে বিজেপি যুব নেতা গ্রেপ্তার

দুর্গাপুরের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য। গরু নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন বিজেপির যুব নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা রবিবার রাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ঝাড়খণ্ডের একটি জায়গা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দুর্গাপুরে নিয়ে আসে কোক-ওভেন থানার পুলিশ।

৩১ জুলাইয়ের ঘটনার সূত্র

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ জুলাই কোক-ওভেন থানার অন্তর্গত ডুমুরতলা এলাকায় ঘটে এই ঘটনা। অভিযোগ, ওই দিন একটি ছোট ট্রাকে গরু বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। গরুগুলি বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের হাট আশুড়িয়া থেকে কেনা হয়েছিল। ট্রাকটি ওই এলাকায় পৌঁছতেই সেটি আটকান পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর একদল অনুগামী।

পাচারের অভিযোগ তুলে উত্তেজনা

ঘটনাস্থলে উত্তেজনা ছড়ায় যখন পারিজাত ও তাঁর অনুগামীরা দাবি করেন, এগুলি পাচারের জন্য আনা হচ্ছিল। তাঁদের অভিযোগ ছিল— গরুগুলি বেআইনিভাবে পরিবহন করা হচ্ছিল। এই অভিযোগ ঘিরেই শুরু হয় বিতর্ক ও স্থানীয় উত্তেজনা, যা দ্রুতই মারাত্মক রূপ নেয়।

নৃশংস মারধরের অভিযোগ

গরুর মালিকদের বক্তব্য, তাঁরা বৈধভাবে পশুগুলি কিনে আনছিলেন। কিন্তু পারিজাতের দল তাঁদের উপর শারীরিকভাবে আক্রমণ চালায়। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের হাত ও গলায় দড়ি বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরের ভিডিও ও ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

পুলিশে অভিযোগ দায়ের

ঘটনার পর আহতরা সরাসরি কোক-ওভেন থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে স্পষ্টভাবে পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীদের নাম উল্লেখ করা হয়। পুলিশ প্রথমে তদন্ত শুরু করে, সাক্ষ্য ও প্রমাণ জোগাড় করে, এরপরই গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেয়।

রাতের অভিযান ও গ্রেপ্তারি

রবিবার রাতেই পুলিশের একটি দল ঝাড়খণ্ডে গিয়ে পারিজাতকে আটক করে। জানা গিয়েছে, ঘটনাটির পর থেকেই তিনি দুর্গাপুরের বাইরে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে দুর্গাপুরে আনা হয় এবং রাতেই কোক-ওভেন থানায় রাখা হয়। সোমবার তাঁকে আদালতে পেশ করার কথা।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপির একাংশের দাবি, পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক চাপে ফাঁসানো হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, গরু পাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে টার্গেট করা হয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই ঘটনায় বিজেপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও আতঙ্ক

ডুমুরতলা এলাকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, এ ধরনের সহিংস ঘটনার কারণে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গরু ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে বৈধ লেনদেন করতেও বাধা আসতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, প্রশাসন যদি শুরুতেই কড়া ব্যবস্থা নিত, তবে এত বড় ঘটনা ঘটত না।

তদন্তে পুলিশের কৌশল

পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় আরও কয়েকজন অভিযুক্তের সন্ধান চলছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ঘটনার পেছনে পরিকল্পিত আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।

আইনগত পরবর্তী ধাপ

আইনজীবীরা বলছেন, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা হতে পারে— যার মধ্যে রয়েছে বেআইনি ভাবে আটকানো, শারীরিক আঘাত করা এবং ভয় দেখানো। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে অভিযুক্তদের কয়েক বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে।

দুর্গাপুরের রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক

এই গ্রেপ্তারি দুর্গাপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে। স্থানীয় ভোট রাজনীতি থেকে শুরু করে দলের ভেতরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব— সবকিছু নিয়েই এখন তোলপাড় চলছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a comment