নিউরোসায়েন্টিস্টের সতর্কবার্তা: মস্তিষ্কের জন্য স্মার্টফোনের চেয়ে বই পড়া বেশি জরুরি

নিউরোসায়েন্টিস্টের সতর্কবার্তা: মস্তিষ্কের জন্য স্মার্টফোনের চেয়ে বই পড়া বেশি জরুরি

ইউনিভার্সিটি প্যারিস ডেসকার্টেসের নিউরোসায়েন্টিস্ট অধ্যাপক গ্রেগরি বোরস্ট সতর্ক করেছেন যে মানুষের মস্তিষ্কের স্মার্টফোন নয়, বরং বই পড়ার অভ্যাস প্রয়োজন। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট পড়লে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মানসিক নমনীয়তা উন্নত হয়। ফিকশন এবং নন-ফিকশন উভয় প্রকারের বই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং চিন্তা ও বোঝার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: ইউনিভার্সিটি প্যারিস ডেসকার্টেসের নিউরোসায়েন্টিস্ট অধ্যাপক গ্রেগরি বোরস্ট অক্টোবরে সতর্ক করে বলেছেন যে মানুষের মস্তিষ্কের স্মার্টফোনের চেয়ে বেশি বই পড়ার প্রয়োজন। তিনি বলেছেন যে প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট পড়লে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মানসিক নমনীয়তা শক্তিশালী হয়। এই পরামর্শ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি, কারণ পড়া মস্তিষ্কে নতুন নিউরাল পাথওয়ে তৈরি করে এবং বয়স-সম্পর্কিত মানসিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

বই মস্তিষ্কের নতুন পথ তৈরি করে

অধ্যাপক বোরস্টের মতে, যখন আমরা বই পড়ি তখন মস্তিষ্কে নতুন নিউরাল পাথওয়ে তৈরি হয়, যা আমাদের চিন্তা ও বোঝার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। বিশেষত, ফিকশন বইগুলি আমাদের অন্যদের অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সাহায্য করে। মনোবিজ্ঞানে এটিকে থিওরি অফ মাইন্ড বলা হয়।
অন্যদিকে, নন-ফিকশন বইগুলি যৌক্তিক চিন্তাভাবনা এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ায়। অর্থাৎ, আপনি উপন্যাস পড়ুন বা জীবনী, উভয় উপায়ে পড়া মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং চিন্তার দিক পরিবর্তন করতে পারে।

পড়া কেন স্ক্রিনের চেয়ে ভালো

বিজ্ঞান অনুসারে, বই পড়া কেবল তথ্য সংগ্রহের কাজ নয়, বরং একটি গভীর মানসিক অভিজ্ঞতা। যখন আমরা একটি গল্প পড়ি, তখন মস্তিষ্ক কল্পনার মাধ্যমে চরিত্র, ঘটনা এবং স্থানের ছবি তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া সহানুভূতি, মানসিক নিয়ন্ত্রণ এবং সংবেদনশীলতাকে শক্তিশালী করে।
এর বিপরীতে, মোবাইল বা স্ক্রিনে পড়লে মস্তিষ্ক এতটা গভীরভাবে সক্রিয় হতে পারে না। বোরস্টের মতে, আসল বই হাতে ধরে পড়লে মস্তিষ্কে একটি মানসিক মানচিত্র তৈরি হয়  যেমন পৃষ্ঠার পুরুত্ব, লেখার অবস্থান এবং পৃষ্ঠা নম্বর মনে থাকে। অন্যদিকে, স্ক্রিনে এই অভিজ্ঞতা পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়।

ডিমেনশিয়া থেকে প্রতিরোধ এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি

গবেষণা অনুসারে, পড়া কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি ডিমেনশিয়া এবং বয়স-সম্পর্কিত মানসিক অবক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে পারে। যখন আমরা পড়ি, তখন মস্তিষ্ক শুরু এবং শেষের বিষয়গুলিকে সংযুক্ত করার অনুশীলন করে, যার ফলে ওয়ার্কিং মেমরি অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী হয়।
বোরস্ট বলেন যে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই এই অভ্যাসটি জরুরি। শিশুদের গল্প শোনা ভাষা এবং প্যাটার্ন চিনতে সাহায্য করে, অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিটের পড়া মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট।

নিউরোসায়েন্টিস্ট গ্রেগরি বোরস্টের স্পষ্ট বার্তা হলো যে যদি আপনি মস্তিষ্ককে সক্রিয়, সৃজনশীল এবং দীর্ঘকাল সুস্থ রাখতে চান, তবে বই পড়ার অভ্যাস পুনরায় গ্রহণ করুন। এটি স্ক্রিনে সময় কাটানোর চেয়ে অনেক বেশি উপকারী।

Leave a comment