দেশজুড়ে বর্ষা সক্রিয় এবং বিভিন্ন রাজ্যে এর ভিন্ন প্রভাব দেখা যাচ্ছে। দিল্লি-এনসিআর-এ একদিকে যেমন আর্দ্রতাজনিত গরমে মানুষজন অতিষ্ঠ, তেমনই উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান এবং কর্ণাটকে মুষলধারে বৃষ্টিতে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: দিল্লি-এনসিআর-এ আবারও আর্দ্রতাজনিত গরম মানুষকে परेशान করছে। যদিও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)-এর মতে, আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত দিল্লিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে তাপমাত্রা কমতে পারে। তবুও, আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগবে।
অন্যদিকে, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে মুষলধারে বৃষ্টির ধারা অব্যাহত রয়েছে, যার কারণে অনেক জায়গায় জলমগ্নতা এবং ভূমিধসের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দিল্লি-এনসিআর-এ তীব্র আর্দ্রতা
দিল্লি-এনসিআর-এ গত কয়েকদিন ধরে আর্দ্রতাজনিত গরম মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাপমাত্রা ক্রমাগত ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকছে এবং আর্দ্রতা (হিউমিডিটি) ৮০%-এর কাছাকাছি থাকার কারণে চটচটে গরম আরও বেড়েছে। যদিও, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) অনুসারে, ৪ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত দিল্লিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর ফলে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সামান্য পতন হবে এবং মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। ৬ জুলাইয়ের কাছাকাছি তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে আর্দ্রতা ৯০% পর্যন্ত যেতে পারে, যার কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে।
হিমাচলে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, মান্ডিতে ১৩ জনের মৃত্যু
হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলায় মঙ্গলবার মেঘ ভাঙা বৃষ্টি (cloudburst) এবং আকস্মিক বন্যার (flash flood) একাধিক ঘটনায় ধ্বংসলীলা চলেছে। উদ্ধারকারী দল বৃহস্পতিবার আরও দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ হয়েছে, যেখানে এখনও ২৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে মানালি-কেলং রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা বর্তমানে রোহতাং গিরিপথের (Rohtang Pass) মাধ্যমে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) রাস্তাগুলি খোলার জন্য কাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
উত্তরাখণ্ডেও সতর্কতা, চারধাম যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত
উত্তরাখণ্ডেও লাগাতার বৃষ্টির কারণে নদ-নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে এবং অনেক জায়গায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য সরকার তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে চারধাম যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, আমাদের অগ্রাধিকার হল যাত্রীদের নিরাপত্তা, আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পরে যাত্রা আবার শুরু করা হবে। এছাড়াও এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ-এর দলগুলি প্রতিটি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজস্থানেও মুষলধারে বৃষ্টি, বাসসিতে ৩২০ মিমি রেকর্ড
রাজস্থানে বর্ষার দ্বিতীয় দফায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চিত্তোরগড় জেলার বাসসিতে ৩২০ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যার ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া বিভাগ পূর্ব রাজস্থানে আগামী এক সপ্তাহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে, সঙ্গে কিছু স্থানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্ণাটকে ভারী বৃষ্টির জন্য রেড অ্যালার্ট
কর্ণাটকেও আবহাওয়া বিভাগ ৭ দিন পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কন্নড়, উত্তর কন্নড় এবং উদুপি জেলাগুলিতে ৩০-৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে বাতাস বইবে এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে যে, বর্ষা অক্ষরেখা (monsoon trough) এবং উপকূলীয় অক্ষরেখার (offshore trough) কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী দু'দিন এই পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তারপর বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে।
আইএমডি-র সিনিয়র বিজ্ঞানীদের মতে, বর্ষা অক্ষরেখা সক্রিয় থাকার কারণে মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টি হবে। পার্বত্য রাজ্যগুলিতে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি থাকবে, তাই জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।