ধর্মান্তরকরণের অভিযুক্ত ছাঙ্গুর বাবার যোগ আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম ও আইএসআই-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে এটিএস সতর্ক হয়ে গিয়েছে। লখনউ-এর হোটেল, গোপন কবরস্থান এবং সন্দেহভাজন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির তদন্ত শুরু হয়ে গেছে।
UP News: ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে ইতিমধ্যেই শিরোনামে আসা बलरामপুরের ছাঙ্গুর বাবার নাম এখন আরও একটি বড় এবং গুরুতর মামলায় সামনে এসেছে। এইবার যোগ রয়েছে দেশের সবচেয়ে ওয়ান্টেড আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশ এটিএস (অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড) দ্বারা করা প্রাথমিক তদন্তে অনেক চাঞ্চল্যকর সূত্র সামনে এসেছে, যা শুধুমাত্র জাতীয় সুরক্ষা নয়, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পর্যন্ত প্রসারিত।
কবরস্থান থেকে গল্পের শুরু
উত্তরপ্রদেশের উতরাউলা শহরে ছাঙ্গুর বাবার বাড়ির পিছনে একটি রহস্যময় কবরস্থান রয়েছে। অনেক মাজার দিয়ে ঘেরা এই এলাকাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ ছিল। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, সেখানে রাতে সন্দেহজনক কাজকর্ম হতো, কিন্তু সবাই চুপ থাকত কারণ ছাঙ্গুর বাবার প্রভাব এলাকায় খুব জোরালো ছিল। এটিএস সূত্রে খবর, এই কবরস্থানটি শুধু ধর্মীয় আবরণে ঢাকা ষড়যন্ত্রের আখড়া ছিল না, পাশাপাশি এটি অনেক 'রাডারের বাইরে' কার্যকলাপের কেন্দ্রও ছিল। মনে করা হচ্ছে এখান থেকেই কিছু বিদেশি এজেন্টদের সাক্ষাৎ এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
হোটেল থেকে দাউদ: গভীর হচ্ছে সন্দেহ
এটিএস-এর তদন্তে লখনউ-এর প্রয়াত হোটেল ব্যবসায়ী হাজি চাচার নাম দ্রুত উঠে আসছে। জানা যায়, ছাঙ্গুর বাবা এবং হাজি চাচা শুধু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন না, ছাঙ্গুরের লখনউ যাত্রার সময় হাজীর হোটেলে বিশেষ ব্যবস্থা থাকত। এই হোটেলের বিশেষত্ব হল এখানে দাউদ ইব্রাহিমের আত্মীয়স্বজনরা এসে থাকতেন। শুধু তাই নয়, হাজি চাচার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল দাউদের ভাইয়ের সঙ্গে। এই সম্পর্ক এখন ছাঙ্গুরকে সরাসরি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যুক্ত করে। এই হোটেলটি নব্বইয়ের দশকের একটি বোমা বিস্ফোরণ মামলায় জড়িত ছিল এবং এটি ইন্টারপোলের নজরেও ছিল।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের রহস্য
বলরামপুর কোর্টের ক্লার্ক রাজেশ উপাধ্যায়ের পরিবারের নামে খোলা ১২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছাঙ্গুর বাবার পাঠানো মোটা অঙ্কের টাকা তদন্তকারী সংস্থার ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) এই অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করে দিয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এই টাকা তথ্য ফাঁস, সংগঠিত সুরক্ষা এবং দেশবিরোধী কার্যকলাপের বিনিময়ে পাঠানো হয়েছিল। অ্যাকাউন্টগুলোতে এক বছরে প্রায় ১.৩ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। টাকা পাঠানোর তারিখ এবং হোটেলে ছাঙ্গুরের উপস্থিতির সময়সূচী প্রায় একই। এতে সন্দেহ হয় যে লখনউতে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল।
ধর্মান্তরকরণ চক্র এবং আইএসআই যোগ
ছাঙ্গুর বাবা আগে থেকেই ধর্মান্তরকরণ চক্রের প্রধান হিসেবে পরিচিত। এখন তার ঘনিষ্ঠ নাসরিনের পাকিস্তানের গুপ্ত সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার প্রমাণও প্রায় পাওয়া গেছে। নাসরিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক কোডওয়ার্ড, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং সন্দেহজনক কল রেকর্ডিং পাওয়া গেছে, যা সীমান্ত পারের ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে। এটিএস নাসরিন এবং ছাঙ্গুরকে সেই হোটেল থেকেই গ্রেফতার করেছিল, যা এখন দাউদের সঙ্গে যোগ থাকার কারণে আলোচনায় এসেছে।
বিশ্ব হিন্দু রক্ষা পরিষদকে হুমকি
ধর্মান্তরের শিকার হওয়া মানুষদের ঘরে ফেরানোর অভিযান চালাচ্ছে বিশ্ব হিন্দু রক্ষা পরিষদ। তারা অভিযোগ করেছে, তাদের কর্মীদের ছাঙ্গুরের সমর্থক এবং বিদেশি নেটওয়ার্ক থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরিষদ সরকারের কাছে জেড প্লাস নিরাপত্তা চেয়েছে এবং দাবি করেছে ছাঙ্গুরের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাকে 'দেশদ্রোহী' ঘোষণা করা হোক।
এটিএস-এর তদন্তের প্রধান বিষয়
- লখনউ-এর হোটেলের পুরোনো ইতিহাস এবং মালিকানার বিস্তারিত তদন্ত।
- ছাঙ্গুর এবং দাউদ গ্যাংয়ের আত্মীয়দের মধ্যে কথোপকথন ও সাক্ষাতের প্রমাণ সংগ্রহ।
- সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলির লেনদেনের ফরেনসিক অডিট।
- কবরস্থান থেকে সন্দেহজনক কার্যকলাপের সূত্র।
- আইএসআই-এর সঙ্গে যুক্ত নেটওয়ার্কের দেশের অন্যান্য অংশে বিস্তার।