মাত্র ৩৬৬ মিটারের জটে পুরো প্রকল্প বিপাকে, কলকাতা হাইকোর্টে তুঙ্গে উত্তাপ
কলকাতার বহু প্রতীক্ষিত এয়ারপোর্ট–নিউ গড়িয়া ‘অরেঞ্জ লাইন’ মেট্রো প্রকল্প থমকে আছে মাত্র ৩৬৬ মিটার রাস্তার জন্য! আর সেই জটই গিয়ে পৌঁছেছে হাইকোর্টের দরবারে। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট অভিযোগ করেছে—চিংড়িঘাটায় পুলিশ ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছে না, ফলে বারবার কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
উইকেন্ডে কয়েক ঘণ্টা দিলেই শেষ হয়ে যাবে কাজ, দাবি মেট্রোর
রেল দপ্তরের অধীনস্থ আরভিএনএল জানায়, যদি দুটো উইকেন্ডে কয়েক ঘণ্টার জন্য ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে মাত্র চার দিনেই শেষ করা যাবে বাকি অংশ। কিন্তু রাজ্যের ‘নো অবজেকশন’ না পাওয়ায় এক ইঞ্চিও এগোতে পারছে না কাজ। আইনজীবীদের সাফ বক্তব্য, কাজের যাবতীয় প্রস্তুতি থাকলেও ট্র্যাফিক অনুমতি না থাকায় হাত-পা বাঁধা মেট্রোর।
১০ দিনের চূড়ান্ত সময়সীমা আদালতের, মুখোমুখি বসে সমাধানের নির্দেশ
বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দে’র ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী শুনানির আগে ১০ দিনের মধ্যে রাজ্য ও মেট্রো কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে বসে সমাধানে পৌঁছাতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে আদালতকে। বেঞ্চ জানায়, এত বড় প্রকল্প একটি অতি সামান্য প্রশাসনিক সমস্যার জন্য আটকে থাকা মেনে নেওয়া যায় না।
রাজ্য কেন সাড়া দিচ্ছে না, কোর্টে উঠল প্রশ্ন
আরভিএনএলের আইনজীবী দাবি করেন, রাজ্যকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আজ অবধি কোনও নো–অবজেকশন মেলেনি। এই অংশটি শেষ হলেই নিউ গড়িয়া থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পরিষেবা চালু হওয়া সম্ভব, যা প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর উপকারে আসবে। মেট্রোর তরফে আরও জানানো হয়, এমন দীর্ঘসূত্রিতায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়েছে।
হলফনামার সময় চাইল রাজ্য, দায় এড়াচ্ছে পুলিশ?
রাজ্যের কৌঁসুলি আদালতের কাছে সময় চেয়ে জানান, বিষয়টি নিয়ে হলফনামা দাখিল করা হবে। তবে আদালত সূত্রে উঠে এসেছে প্রশ্ন—সামান্য ৩৬৬ মিটার রাস্তায় পুলিশ ট্র্যাফিক সামলাতে রাজি নয় কেন? জনস্বার্থে এই প্রশ্নে দায় এড়াতে পারছে না প্রশাসন। এমনকি, মামলাকারীর পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে—প্রয়োজনে কোনও প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে এই সমস্যা মেটানো হোক।
দুই বছর পিছিয়ে পড়েছে প্রকল্প, ক্ষতির অঙ্ক ২০০ কোটিরও বেশি!
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতিমধ্যে প্রকল্পের সময়সীমা ছাড়িয়ে গেছে দু’বছর। চিংড়িঘাটার মতো একটিমাত্র অংশের জন্য গোটা রুট আটকে থাকায় হাজার হাজার মানুষের আশা হতাশায় বদলেছে। নির্মাণ সংস্থা আরভিএনএল-এর দাবি, প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণেই দেরি বাড়ছে এবং তার আর্থিক মূল্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
মাত্র ৩৬৬ মিটারের জন্য গড়িমসিতে আটকে গোটা কলকাতা
এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মেট্রো প্রকল্প, যা কলকাতাবাসীর যাতায়াতে বিপ্লব আনতে পারত, সেটাই আজ থমকে আছে এক চিমটি প্রশাসনিক গাফিলতিতে। হাইকোর্ট এবার কড়া বার্তা দিয়ে বলেছে, আর নয়! আগামী ১০ দিনের মধ্যে সমাধান চাই। এখন দেখার, রাজ্য এবং মেট্রো কতটা এগিয়ে আসতে পারে সহযোগিতার পথে।