বর্ষাকালে ডেঙ্গু এবং টাইফয়েডের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা মশার কামড়ে ছড়ায় এবং এতে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের যন্ত্রণা এবং প্লেটলেট কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা দূষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায় এবং পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্লান্তি এর প্রধান লক্ষণ। সময়মতো চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
ডেঙ্গু এবং টাইফয়েডের উপসর্গ: বর্ষাকালে ডেঙ্গু ও টাইফয়েড উভয় রোগেরই প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর ফলে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা এবং ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা যায়। টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ, যা দূষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং এর ফলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং ক্লান্তি দেখা দেয়। ডঃ পুলিন কুমারের মতে, এই দুটি রোগের উপসর্গ ভিন্ন, তাই সময়মতো শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের মধ্যে পার্থক্য
ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাস রক্তে প্রবেশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং প্লেটলেট সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে দেয়। রোগীর তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা এবং ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা যায়। গুরুতর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমও হতে পারে, যা প্রাণঘাতী প্রমাণিত হয়।
অন্যদিকে, টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি দূষিত জল বা সংক্রমিত খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং প্রধানত অন্ত্রকে প্রভাবিত করে। টাইফয়েডে রোগীর একটানা তীব্র জ্বর, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অন্ত্রে ঘা বা ছিদ্রও হতে পারে।
ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের পৃথক পৃথক উপসর্গ
আরএমএল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডঃ পুলিন কুমার জানান যে ডেঙ্গুতে জ্বর হঠাৎ করে এবং তীব্রভাবে আসে। এর সাথে তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা এবং সারা শরীরে চরম ব্যথা অনুভূত হয়। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি এবং প্লেটলেট দ্রুত কমে যাওয়া ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। গুরুতর অবস্থায় নাক ও মাড়ি থেকেও রক্তপাত হতে পারে।
টাইফয়েডে জ্বর ধীরে ধীরে বাড়ে এবং বেশ কয়েক দিন ধরে থাকে। রোগীর ক্ষুধা কমে যায় এবং পেটে ব্যথার সাথে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। ডেঙ্গু মশার কামড়ে ছড়ায়, অন্যদিকে টাইফয়েড দূষিত জল ও খাবার খাওয়ার ফলে হয়। ডেঙ্গু হঠাৎ দুর্বলতা এবং রক্তপাতের সমস্যা তৈরি করে, অন্যদিকে টাইফয়েড প্রধানত পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করে।
প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গু ও টাইফয়েড থেকে বাঁচতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না, যাতে মশা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। সর্বদা ফোটানো বা ফিল্টার করা জল পান করুন এবং বাইরের বাসি বা কাঁচা খাবার খাবেন না। খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি জ্বর দীর্ঘ সময় ধরে থাকে বা উপসর্গ গুরুতর হয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় রোগই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতার কারণ হতে পারে। তাই সময়মতো সতর্কতা ও চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।