এই বছর গোবর্ধন পূজা 22 অক্টোবর 2025 (বুধবার) তারিখে উদযাপিত হবে। পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক শুক্ল প্রতিপদ তিথি 21 অক্টোবর সন্ধ্যা 5:54 মিনিট থেকে শুরু হয়ে 22 অক্টোবর রাত 8:16 মিনিট পর্যন্ত থাকবে। তাই উদয়তিথির ভিত্তিতে পূজা 22 অক্টোবর করা হবে। এই উৎসব শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক গোবর্ধন পর্বত তুলে গোকুল রক্ষার স্মরণে পালিত হয়।
Govardhan Puja 2025: গোবর্ধন পূজার উৎসব এইবার 22 অক্টোবর (বুধবার) তারিখে পূর্ণ শ্রদ্ধা ও উৎসাহের সাথে উদযাপিত হবে। পঞ্জিকা অনুসারে, কার্তিক শুক্ল প্রতিপদ তিথি 21 অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে 22 অক্টোবর রাত 8:16 মিনিট পর্যন্ত থাকবে, তাই উদয়তিথি অনুযায়ী পূজা 22 তারিখে করা হবে। এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক গোবর্ধন পর্বত তুলে গোকুলবাসীদের রক্ষার স্মরণে পালিত হয়। শুভ মুহূর্ত দুপুর 3:13 থেকে সন্ধ্যা 5:49 মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই সময় লোকেরা গোবর দিয়ে গোবর্ধন মহারাজের প্রতিমা তৈরি করে, ক্ষীর-পুরি, বাতাসা এবং দুধের ভোগ নিবেদন করে গোবর্ধনের পরিক্রমা করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করে সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।
গোবর্ধন পূজার তিথি ও শুভ মুহূর্ত
পঞ্জিকা অনুসারে, কার্তিক শুক্ল প্রতিপদ তিথি 21 অক্টোবর সন্ধ্যা 5টা 54 মিনিটে শুরু হবে এবং এর সমাপ্তি হবে 22 অক্টোবর রাত 8টা 16 মিনিটে। তিথি অনুযায়ী পূজা 22 অক্টোবরই করা হবে। এই দিন গোবর্ধন পূজার শুভ মুহূর্ত দুপুর 3টা 13 মিনিট থেকে সন্ধ্যা 5টা 49 মিনিট পর্যন্ত থাকবে।
এই সময় স্বাতী নক্ষত্র এবং প্রীতি যোগের সংযোগ তৈরি হচ্ছে, যা অত্যন্ত মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে এই দিন সূর্য তুলা রাশিতে এবং চন্দ্রও তুলা রাশিতে গোচর করবে। সূর্য-চন্দ্রের এই সংযোগ পূজার জন্য শুভ ফলদায়ক হবে এবং পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করবে।
গোবর্ধন পূজার মাহাত্ম্য
গোবর্ধন পূজা অন্নকূট উৎসব নামেও পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে যখন ইন্দ্রদেব গোকুলবাসীদের উপর প্রবল বর্ষণ করেছিলেন, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে গোকুলকে রক্ষা করেছিলেন। সেই থেকে এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই অলৌকিক ঘটনা এবং তাঁর কৃপার প্রতীক হিসাবে পালিত হয়।
এই দিন ভক্তরা ভগবান গোবর্ধনের পূজা করে তাঁর কাছে সমৃদ্ধি, সুখ এবং সুরক্ষার কামনা করেন। গ্রামীণ অঞ্চলে এই উৎসব বিশেষভাবে গরু এবং গোশালাগুলির সাথে জড়িত, কারণ গোবর্ধন পূজাকে গো-সেবা এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের সাথেও যুক্ত করা হয়েছে।
ঘরে গোবর্ধন পূজা কীভাবে করবেন
গোবর্ধন পূজার শুরু হয় সকালে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করার মাধ্যমে। তারপর উঠানে বা বাড়ির কোনো পবিত্র স্থানে গরুর গোবর দিয়ে গোবর্ধন মহারাজের মূর্তি তৈরি করা হয়। পূজার আগে গোবর্ধন জির উপর রোলি, চাল এবং ফুল নিবেদন করা হয়।
এরপর পূজা স্থলে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং গোবর্ধন মহারাজের আরাধনা করা হয়। এই দিন ক্ষীর, পুরি, চুরমা, বাতাসা, দুধ, জল এবং কেশরের ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগের পর পুরো পরিবারের সাথে মিলে গোবর্ধনের পরিক্রমা করা হয়।
পূজার শেষে আরতি করে ভগবানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় যে, যদি পূজায় কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে তবে তা ক্ষমা করুন। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে মন থেকে করা পূজা ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসে এবং ঘরে সুখ-শান্তি বজায় থাকে।
গোবর্ধন পূজায় উচ্চারিত মন্ত্র
গোবর্ধন পূজার সময় বিশেষ মন্ত্র জপ করা হয়। এই মন্ত্রগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং গোবর্ধন মহারাজের কৃপা লাভের জন্য উচ্চারিত হয়।
1. গোবর্ধন ধরাধার গোকুল ত্রাণকারক।
বিষ্ণুবাহু কৃতোচ্ছ্রায় গবাং কোটিপ্রভো ভব।।
2. হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে।।
3. ওঁ শ্রী কৃষ্ণায় শরণং মম।
এই মন্ত্রগুলির উচ্চারণে পরিবেশে ইতিবাচক শক্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং মনে শান্তি আসে।
গোবর্ধন পূজার সাথে জড়িত ঐতিহ্য
এই দিন অনেক জায়গায় মন্দিরে অন্নকূটের ভোগ নিবেদন করা হয়, যেখানে নানা ধরনের পদ তৈরি করা হয়। লোকেরা বিশ্বাস করেন যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং গোবর্ধন পর্বতের রূপে এই অন্নকূটের ব্যঞ্জনগুলি আস্বাদন করেন। গ্রামগুলিতে গরুদের স্নান করিয়ে, তাদের ফুল এবং রঙ দিয়ে সাজানো হয়। গোবর দিয়ে তৈরি গোবর্ধন পর্বতের চারপাশে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ছোট ও বড় সবাই মিলে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন।
গোবর্ধন পূজার এই উৎসব প্রকৃতি, পশু এবং মানুষের মধ্যে ভারসাম্যের প্রতীক। এই দিনটি শেখায় যে যখন মানুষ প্রকৃতির রক্ষা করে, তখন প্রকৃতিও তার রক্ষা করে। তাই গোবর্ধন পূজা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং পরিবেশের প্রতি কৃতজ্ঞতার উৎসবও বটে।