ধনতেরাস ২০২৫ এই বছর ১৮ অক্টোবর, শনিবার পালিত হবে, যা পাঁচ দিনের দীপাবলির উৎসবেরও সূচনা। এই দিনে মা লক্ষ্মী, ভগবান ধন্বন্তরি এবং কুবের দেবের পূজা করা হয়। প্রদোষ এবং বৃষভ কালে করা পূজা বিশেষভাবে শুভ বলে মনে করা হয়, এর পাশাপাশি সোনা, রূপা এবং বাসনপত্র কেনা সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
ধনতেরাস: এই বছর ধনতেরাসের উৎসব ১৮ অক্টোবর, শনিবার পালিত হবে, যা পাঁচ দিনের দীপাবলির উৎসবের সূচনার ইঙ্গিতও বটে। এই উপলক্ষে ভারতের ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী, ভগবান ধন্বন্তরি এবং কুবের দেবতার পূজা করা হবে। এই উৎসব ধন, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। জ্যোতিষীদের মতে, প্রদোষ এবং বৃষভ কালে পূজা করা সবচেয়ে শুভ। লোকেরা এই দিনে সোনা, রূপা এবং অন্যান্য শুভ জিনিসপত্রও কেনাকাটা করে, যা ঘরে সুখ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
ধনতেরাস পূজার শুভ মুহূর্ত ২০২৫
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ধনতেরাস পূজা প্রদোষ কালে করা হয়, যখন বৃষভ লগ্নের যোগ তৈরি হয়। এই সময়ে দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান কুবেরের পূজা অত্যন্ত ফলদায়ী বলে মনে করা হয়। এইবার ধনতেরাস পূজার শুভ মুহূর্ত থাকবে শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।
- ধনতেরাস পূজা মুহূর্ত: সন্ধ্যা ০৭:১৬ থেকে রাত ০৮:২০ পর্যন্ত
- সময়কাল: ১ ঘণ্টা ০৪ মিনিট
- প্রদোষ কাল: সন্ধ্যা ০৫:৪৮ থেকে রাত ০৮:২০ পর্যন্ত
- বৃষভ কাল: সন্ধ্যা ০৭:১৬ থেকে রাত ০৯:১১ পর্যন্ত
- ত্রয়োদশী তিথি শুরু: ১৮ অক্টোবর দুপুর ১২:১৮ মিনিটে
- ত্রয়োদশী তিথি শেষ: ১৯ অক্টোবর দুপুর ০১:৫১ মিনিটে
জ্যোতিষীদের মতে, প্রদোষ এবং বৃষভ কালের সময় করা পূজা সবচেয়ে শুভ বলে মনে করা হয়। এই সময়ে মা লক্ষ্মীর কৃপা লাভ করার জন্য প্রদীপ জ্বালানো, ধনের প্রতীক চিহ্ন রাখা এবং মন্ত্র জপ করা বিশেষভাবে ফলদায়ী হয়।
ধনতেরাসের গুরুত্ব
ধনতেরাস কেবল ধনের দেবী লক্ষ্মীরই নয়, বরং আরোগ্যের দেবতা ভগবান ধন্বন্তরিরও দিন। পুরাণগুলিতে বর্ণনা করা হয়েছে যে সমুদ্র মন্থনের সময় যখন দেবতা ও অসুরেরা ক্ষীরসাগর মন্থন করেছিলেন, তখন ভগবান ধন্বন্তরি অমৃত কলস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কারণেই এই দিনটিকে ধনত্রয়োদশী বলা হয়।
ভগবান ধন্বন্তরিকে আয়ুর্বেদের জনক মনে করা হয়। এই দিনে তাঁর আরাধনা করলে রোগ থেকে মুক্তি এবং দীর্ঘায়ু লাভের বর পাওয়া যায়। এই কারণেই ধনতেরাসকে কেবল সম্পদ নয়, বরং স্বাস্থ্য এবং সুখ-সমৃদ্ধির ভারসাম্যের প্রতীক হিসাবেও দেখা হয়।
ধনতেরাসে কেনাকাটার গুরুত্ব
ধনতেরাসের দিনে নতুন জিনিসপত্র কেনা শুভ বলে মনে করা হয়। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে এই দিনে কেনা জিনিসগুলি ঘরে সমৃদ্ধি, স্থায়িত্ব এবং সৌভাগ্য নিয়ে আসে। ঐতিহ্যগতভাবে লোকেরা এই দিনে সোনা, রূপা, তামা, পিতল এবং কাঁসার বাসনপত্র কেনে।
শাস্ত্র মতে বলা হয়েছে যে ধনতেরাসে শুভ জিনিসপত্র কেনার মাধ্যমে ব্যক্তির ধন এবং ঐশ্বর্য তেরো গুণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সময়ে যেখানে আগে মানুষ বাসনপত্র বা গহনা কিনত, সেখানেই এখন মানুষ এই দিনে ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, যানবাহন এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসও কেনে।
তবে, পূজা করার আগে কেনা বস্তুকে ঘরে রেখে গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধ করা এবং মা লক্ষ্মীর পূজায় অন্তর্ভুক্ত করা শুভ বলে মনে করা হয়।
ধনতেরাসের পূজা বিধি
ধনতেরাসের পূজা সন্ধ্যায় প্রদোষ কালে করা হয়। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর দরজায় আলপনা তৈরি করা এবং প্রদীপ জ্বালানো শুভ বলে মনে করা হয়। পূজার সময় মা লক্ষ্মী, ভগবান ধন্বন্তরি এবং কুবের দেবতাকে আহ্বান করা হয়।
- প্রথমে ঘরের মূল প্রবেশদ্বারে প্রদীপ জ্বালান এবং লক্ষ্মী দেবীকে স্বাগত জানানোর জন্য আলপনা তৈরি করুন।
- পূজা স্থলে ভগবান গণেশ, মা লক্ষ্মী, কুবের দেব এবং ধন্বন্তরি ভগবানের প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করুন।
- তাঁদেরকে অক্ষত, পুষ্প, ধূপ, প্রদীপ, ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করুন।
- ভগবান ধন্বন্তরিকে তুলসী পাতা, শঙ্খ এবং জল দিয়ে পূজা করুন।
- মা লক্ষ্মী এবং কুবের দেবকে রূপার মুদ্রা নিবেদন করুন।
- সবশেষে দীপদান করুন এবং ধনতেরাসের বিশেষ মন্ত্র পড়ুন
ওঁ ধনদায় নমঃ
এই দিনে যমরাজের নামে প্রদীপ জ্বালানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে যম দীপদান বলা হয়। এই প্রদীপটি ঘরের বাইরে দক্ষিণ দিকে রাখা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এর মাধ্যমে অকাল মৃত্যুর ভয় দূর হয়।
ধনতেরাসে জ্বালান ১৩টি প্রদীপ
ধনতেরাসের দিনে ১৩টি প্রদীপ জ্বালানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই প্রথা যমরাজের কৃপা লাভ এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করা হয়। এই প্রদীপগুলি ঘরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে মূল প্রবেশদ্বার এবং তুলসী মঞ্চে জ্বালানো উচিত।
এও বলা হয় যে প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে ঘরের নেতিবাচকতা দূর হয় এবং সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচিত হয়। এটি দীপাবলির উৎসবের প্রাথমিক ইঙ্গিতও বটে, যা পরবর্তী চার দিন ধরে চলে নরক চতুর্দশী, লক্ষ্মী পূজা, গোবর্ধন পূজা এবং ভাইফোঁটা পর্যন্ত।
ধনতেরাস এবং দীপাবলির সম্পর্ক
ধনতেরাসকে দীপাবলি পর্বের সূচনা বলে মনে করা হয়। পাঁচ দিনের এই মহোৎসবের সূচনা এই দিন থেকে হয় এবং সমাপ্তি ভাইফোঁটায় হয়।
- প্রথম দিন: ধনতেরাস ভগবান ধন্বন্তরি, মা লক্ষ্মী এবং যমরাজের পূজা
- দ্বিতীয় দিন: নরক চতুর্দশী বা ছোট দীপাবলি ভগবান কৃষ্ণের আরাধনা
- তৃতীয় দিন: লক্ষ্মী পূজা দীপাবলির মূল দিন
- চতুর্থ দিন: গোবর্ধন পূজা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা
- পঞ্চম দিন: ভাইফোঁটা ভাই-বোনের ভালোবাসার উৎসব
এভাবে ধনতেরাস শুধুমাত্র কেনাকাটা বা উৎসবের সূচনা নয়, বরং আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতীকও।
ধনতেরাস সম্পর্কিত একটি প্রচলিত গল্প
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, একবার রাজা হিমের পুত্রের কোষ্ঠীতে চতুর্থ রাতে সর্পদংশনে মৃত্যুর যোগ ছিল। তাঁর স্ত্রী সেই দিন তাঁর স্বামীকে জাগিয়ে রাখার জন্য প্রদীপ জ্বালিয়ে চারপাশে সোনা এবং রূপার গহনার স্তূপ তৈরি করলেন এবং সারা রাত ভগবান যমরাজের ভক্তিতে ভজন গাইতে থাকলেন।
যখন যমরাজ সাপের রূপ ধারণ করে সেখানে পৌঁছলেন, তখন প্রদীপের তীব্র আলো এবং ভক্তি তাঁকে থামিয়ে দিল। তিনি রাজা হিমের পুত্রকে জীবনদান করলেন। সেই থেকে ধনতেরাসের রাতে যম দীপদানের প্রথা শুরু হয়।
ইতিবাচক শক্তি এবং সমৃদ্ধির উৎসব
ধনতেরাস কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকেও শক্তি প্রদানকারী একটি দিন। এই দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দীপদান এবং পূজার উদ্দেশ্য কেবল দেবতাদের কৃপা লাভ করা নয়, বরং নিজের জীবনে ইতিবাচকতা এবং আলোর আগমনকে স্বাগত জানানো।
বলা হয় যে যদি ব্যক্তি ধনতেরাসে सच्चे মন নিয়ে পূজা করে এবং অন্যদের সাথে প্রসাদ, মিষ্টি বা প্রদীপ ভাগ করে নেয়, তাহলে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তি বিরাজ করে।