বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার মনোনয়নের শেষ তারিখের আর মাত্র ৩১ ঘণ্টা বাকি, কিন্তু মহাজোটে আসন বণ্টন নিয়ে তীব্র বিবাদ চলছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি (VIP)-এর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন এখন চরমে পৌঁছেছে।
পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার মনোনয়নের সময়সীমার আর মাত্র ৩১ ঘণ্টা বাকি, এবং এর মধ্যেই মহাজোটে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ দেখাচ্ছে। বিশেষ করে তেজস্বী যাদব এবং মুকেশ সহনীর মধ্যে টানাপোড়েন পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। সূত্র অনুযায়ী, মহাজোটের অভ্যন্তরে দুই নেতার মধ্যে মতানৈক্য এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
যদি মুকেশ সহনী তাঁদের শর্ত না মানেন, তাহলে জোটের মধ্যে ভিআইপি-র 'ঘরওয়াপসি'র আগেই দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে মহাজোটের কৌশল এবং আসন বণ্টনের ওপর প্রভাব পড়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।
আসন নিয়ে বিবাদ, জোটের ওপর সংকট
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় ভিআইপি কমপক্ষে ২৪টি আসন দাবি করেছে। অন্যদিকে আরজেডি এতে সম্মত নয়। তেজস্বী যাদব স্পষ্ট জানিয়েছেন যে ভিআইপি ১৫টির বেশি আসন পেতে পারে না। মহাজোটের অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুসারে, আলোচনা এখন “ব্রেকিং পয়েন্টে” পৌঁছেছে। যদি মুকেশ সহনী কিছু আসনে সমঝোতা করেন, তাহলে জোট টিকে থাকতে পারে।
কিন্তু যদি তাঁরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন, তাহলে মহাজোট থেকে ভিআইপি-র বিদায় নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মহাজোটের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ নির্বাচনের ঠিক আগে কোনো দলের ভাঙন বিরোধী ঐক্যের জন্য একটি ধাক্কা প্রমাণিত হতে পারে।
২০২০ সালের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
এই প্রথম নয় যে মুকেশ সহনী এবং তেজস্বী যাদবের মধ্যে আসন নিয়ে সংঘাত হয়েছে। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও সহনী আরজেডি-র ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে এনডিএ-তে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁরা ১১টি আসন পেয়েছিলেন, যার মধ্যে ৪টি আসনে জয়ী হতে সফল হন। তবে পরে তিন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন এবং একজন বিধায়কের মৃত্যু হয়। ফলস্বরূপ — ভিআইপি একা হয়ে পড়ে।
এরপরে মুকেশ সহনী এনডিএ থেকেও সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং নিজেকে একটি স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে থাকেন। এখন ২০২৫ সালেও সেই একই গল্পের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
উপ-মুখ্যমন্ত্রী হব — সহনীর স্বপ্নে প্রশ্ন
সম্প্রতি মুকেশ সহনী খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন যে যদি মহাজোটের সরকার গঠিত হয়, তাহলে তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তাঁর এই মন্তব্যে জোটের অন্যান্য দলগুলির মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে কিছু সহযোগী এই দাবিতে খুশি নন, তখন তিনি কড়া সুরে বলেছিলেন, “যদি কিছু লোক তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী না মানেন, তাহলে কি বিহার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াই চলবে? যদি তেজস্বী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, তাহলে আমি উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেন পারব না?”
সহনী আরও বলেন যে, “বিজেপি-ও মনে করে যে আমি উপ-মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। সহনী যেখানে যান, সেখানেই সরকার গঠিত হয়।” তাঁর এই মন্তব্য সরাসরি আরজেডি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বলে মনে করা হচ্ছে।
তেজস্বীর ‘লক্ষ্মণ রেখা’
তেজস্বী যাদব এবার স্পষ্ট অবস্থানে রয়েছেন। তিনি ভিআইপি-র জন্য একটি “লক্ষ্মণ রেখা” টেনে দিয়েছেন — যদি মুকেশ সহনী আসনের দাবিতে অনড় থাকেন, তাহলে জোটে তাঁদের জন্য কোনো জায়গা থাকবে না। আরজেডি-র ঘনিষ্ঠ সূত্র অনুযায়ী, তেজস্বী মনে করেন যে “ভিআইপি-র সমর্থন স্বাগত, কিন্তু ব্ল্যাকমেলিং চলবে না।” দলীয় নেতৃত্ব চায় না যে গতবারের মতো শেষ মুহূর্তে কোনো সহযোগীর দাবির কারণে পুরো জোট দুর্বল দেখাক।