ধর্মতলার চেহারা বদলাতে চলেছে আসছে মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব

ধর্মতলার চেহারা বদলাতে চলেছে আসছে মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা মানেই সকাল থেকে রাত অবধি ভিড়, যানজট আর হইচই। এই ব্যস্ততম এলাকা আগামী দিনে তিনটি মেট্রো রুটের সংযোগস্থল হয়ে উঠতে চলেছে— কবি সুভাষ-দক্ষিণেশ্বর লাইন, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর ও জোকা-ধর্মতলা মেট্রো। ফলে এখানকার গুরুত্ব আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্মতলায় গড়ে তোলা হবে আধুনিক মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব, যা একসঙ্গে মেট্রো, বাস, ট্যাক্সি, এমনকি আন্ডারপাস ও পার্কিং পরিষেবা দেবে।

এসপ্ল্যানেড হবে মেট্রোর 'জংশন পয়েন্ট'

মেট্রো যাত্রীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিতে চলেছে এসপ্ল্যানেড চত্বর। তিনটি মেট্রো করিডরের মিলনস্থল হিসেবে এই স্টেশন হবে কলকাতার ব্যস্ততম যাতায়াত কেন্দ্র। যাত্রী চাহিদা পূরণের পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে এই মাল্টি-মোডাল হাব বড় ভূমিকা নেবে। এই বৃহৎ প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘রাইটস’-কে। তবে যাত্রী চাপ ও যানবাহনের প্রবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে লালবাজার।

নিরাপত্তার নয়া রণনীতি, আসছে কন্ট্রোল কম্যান্ড পোস্ট

যাত্রী ভিড়, রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্মতলা মেট্রো চ্যানেল চত্বরে গড়ে তোলা হবে আধুনিক কন্ট্রোল কম্যান্ড পোস্ট। এখান থেকেই আশপাশের গোটা এলাকার সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ, দ্রুত বাহিনী মোতায়েন এবং তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামলানোর কাজ হবে। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এই এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা হয়, যা পুলিশের জন্য সবসময় বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রথম পরিকল্পনা বদলে বড় পরিসরের প্রস্তুতি

প্রথমে হেয়ার স্ট্রিট থানার অধীনে একটি ছোট দোতলা পোস্টের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝার পরে লালবাজার প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট জায়গার দাবি জানিয়েছে পরিবহণ দপ্তরের কাছে। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, ডেপুটি কমিশনারের কক্ষ, ব্যারাক, অফিসারদের বসার ঘর, মহিলা পুলিশদের থাকার ব্যবস্থা, ভিজিটর রুম—সব মিলিয়ে প্রয়োজন ৯৫৪০ বর্গফুট।

যানচাপ সামলাতে অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য

পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, ট্রান্সপোর্ট হাব হলে যাত্রী ভিড়ের পাশাপাশি গাড়ির চাপও কয়েক গুণ বাড়বে। সেই কারণেই এখানে বেসমেন্ট পার্কিং, বাসের প্রতীক্ষালয় এবং আন্ডারপাস তৈরি হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির জন্য নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করা হবে, যাতে সাধারণ যাতায়াত ব্যাহত না হয় এবং বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।

রাজনৈতিক কর্মসূচির রেকর্ডে নজর কাড়ছে ধর্মতলা

গত পাঁচ বছরে ধর্মতলা চত্বরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৯৮টিরও বেশি রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। শহরের অন্য কোনও এলাকায় এত ঘন ঘন রাজনৈতিক কর্মসূচি হয় না। এই প্রবণতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রশাসনের ধারণা। মাল্টি-মোডাল হাব চালু হলে সাধারণ মানুষের ভিড় ও যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে যাবে—এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশ এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এক ছাদের তলায় আধুনিক সুবিধা

নতুন কন্ট্রোল পোস্টে থাকবে দু’জন ওসি-র আলাদা কক্ষ, রিজার্ভ অফিস, অফিসারদের বিশ্রাম ও কাজের ঘর, মহিলা পুলিশদের জন্য পৃথক ব্যারাক। এই পোস্ট থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বাহিনী মোতায়েন করা যাবে, যা আন্দোলন, মিছিল কিংবা হঠাৎ ঘটে যাওয়া নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করবে। হাওড়া-ধর্মতলা মেট্রো চালু হওয়ার পর থেকেই এখানকার ভিড় বহুগুণ বেড়েছে, তাই এই ব্যবস্থাকে জরুরি বলেই মনে করছে লালবাজার।

পরিবহণ দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন

ধর্মতলা চত্বরের জমির মালিকানা বর্তমানে পরিবহণ দপ্তরের হাতে। সেই কারণেই পুলিশ প্রকল্পে হাত লাগানোর আগে দপ্তরকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। লালবাজার চায় জমি দ্রুত হস্তান্তর হোক, যাতে কন্ট্রোল পোস্টের নির্মাণকাজ শুরু করা যায়।

মানুষের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে: পরিবহণ মন্ত্রী

পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়েছেন, "মানুষের সুরক্ষা সবার আগে। পুলিশের যে কোনও প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।" তাঁর মতে, মাল্টি-মোডাল হাব এবং কন্ট্রোল পোস্ট—দুটোই কলকাতার যাতায়াত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Leave a comment