জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি: ক্ষমতা, বেতন এবং সুবিধা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি: ক্ষমতা, বেতন এবং সুবিধা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য

উত্তরাখণ্ডে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে, আর সেই সঙ্গে জেলা পঞ্চায়েত সভাপতির পদটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেক জায়গায় ফলাফল আসতে শুরু করেছে এবং শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে বাদানুবাদও বেড়ে গিয়েছে। তবে নির্বাচনী উত্তেজনার বাইরে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এটা জানার আগ্রহ বাড়ছে যে, জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি হওয়ার পর কী কী সুবিধা পাওয়া যায়, বেতন কত থাকে এবং এই পদের ক্ষমতা কতটা হয়।

ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা

উত্তরাখণ্ড সহ সারা দেশে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। সর্বনিম্ন স্তরটি হল গ্রাম পঞ্চায়েত, দ্বিতীয়টি ক্ষেত্র পঞ্চায়েত এবং সবচেয়ে উপরে থাকে জেলা পঞ্চায়েত। জেলা পঞ্চায়েত সমগ্র জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং গ্রামীণ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর প্রধানকেই জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি বলা হয়।

কীভাবে নির্বাচন হয় জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন না, বরং প্রথমে জেলা পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর এই নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক চাল এবং সমীকরণের একটি বড় ভূমিকা থাকে। অনেক সময় দলবদল, সমর্থন প্রত্যাহার এবং গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সভাপতির পদ নির্ধারিত হয়।

কত বেতন পাওয়া যায়

উত্তরাখণ্ডে জেলা পঞ্চায়েত সভাপতিকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা সাম্মানিক দেওয়া হয়। এটিকে বেতন বলা না গেলেও, এটি একটি সরকারি সাম্মানিক যা পদের মর্যাদা অনুযায়ী নির্ধারিত। এছাড়াও, সভাপতি আরও অনেক সুবিধা পান যা এই পদটিকে প্রভাবশালী করে তোলে।

সরকারি গাড়ি ও ড্রাইভারের সুবিধা

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতিকে একটি সরকারি গাড়ি দেওয়া হয়। এর সাথে চালকের সুবিধা এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচও সরকার বহন করে। এর ফলে তাঁর জেলায় ঘোরাঘুরি এবং পরিদর্শন করতে সুবিধা হয়। উন্নয়নমূলক প্রকল্পের তদারকি এবং মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য এই সুবিধা খুবই প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়।

অফিস ও স্টাফের সুবিধা

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি একটি অফিসও পান, যেখানে তিনি বসে বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা, আধিকারিকদের সাথে বৈঠক এবং জনগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, একজন স্টাফও নিয়োগ করা হয়, যিনি ফাইল, রেকর্ড এবং চিঠিপত্রের মতো কাজ সামলান।

দায়িত্বের বিশাল পরিধি

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতির ভূমিকা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক নয়, বরং তিনি জেলার গ্রামীণ অঞ্চলে উন্নয়নের দিকনির্দেশ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের সমস্ত প্রকল্প – যেমন রাস্তা নির্মাণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্কুল, পানীয় জলের প্রকল্প, সেচ, পরিচ্ছন্নতা মিশন, কৃষি উন্নয়ন, মহিলা ক্ষমতায়ন – এই সবকিছুকে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করার দায়িত্ব জেলা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

বাজেট বরাদ্দে ভূমিকা

জেলা পঞ্চায়েতের একটি বড় বাজেট থাকে, যা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। এই বাজেটের সঠিক বরাদ্দ এবং ব্যবহারের দায়িত্ব জেলা পঞ্চায়েত সভাপতির তত্ত্বাবধানে থাকে। সভাপতি ঠিক করেন কোন এলাকায় কোন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং কোন খাতে কত টাকা খরচ করা হবে।

প্রস্তাব পাশ করানোর ক্ষমতা

জেলা পঞ্চায়েতের মিটিংয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের প্রস্তাব রাখা হয়। এই প্রস্তাবগুলি পাশ করার জন্য সভাপতির সম্মতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা জরুরি। সভাপতির এই অধিকার আছে যে তিনি কোনো প্রস্তাব আটকাতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে বা সেটির ওপর পুনর্বিবেচনার জন্য সময় চাইতে পারেন।

প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা জরুরি

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতিকে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক যেমন জেলাশাসক, সিডিও, মুখ্য উন্নয়ন আধিকারিক এবং অন্যান্য বিভাগীয় আধিকারিকদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। প্রকল্পের অগ্রগতি, তহবিলের অবস্থা, নতুন প্রকল্পের প্রয়োজন এবং অভিযোগের পর্যালোচনা – এই সবকিছু প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

জনগণের জন্য সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম

জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি গ্রামের জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন। সাধারণ গ্রামীণ মানুষ তাঁদের সমস্যা, অভিযোগ এবং পরামর্শ সরাসরি সভাপতির কাছে নিয়ে যান। সেটা রাস্তার খারাপ অবস্থা, পানীয় জলের অভাব, হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতি বা স্কুলে শিক্ষকের অভাব – এই সমস্ত বিষয়ে সভাপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment