ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ‘ঝাঁঝালো’ জবাব

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ‘ঝাঁঝালো’ জবাব

ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের উত্তাপে ফের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা দিলো ভারতের উপর। আর এই খবরকে কেন্দ্র করেই রবিবার দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি আক্রমণ করলেন। শুধু তাই নয়, তিনি আমেরিকার প্রশাসনকে ‘সবাইকে বস’ (বস হিসেবে দেখার প্রবণতা) বলে উল্লেখ করে ভারতের দ্রুত উন্নয়নের ওপর হতাশা প্রকাশ করলেন। রাজনাথের এই তীব্র বক্তব্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের আগুন জ্বালিয়েছে।

সবার বস’ বলা আমেরিকা: ভারতের বিকাশকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা

রাজনাথ সিংয়ের ভাষায়, “কিছু লোক আছেন যারা ভারতের উন্নয়নের গতি সহ্য করতে পারছেন না। তারা ভেবেছে, আমেরিকা সবার বস, তাই ভারত যেন দ্রুত এগোতে না পারে।” এই কথাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করছে। বিশেষত ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে তারা একপ্রকার খুশি নয়। শুল্কের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যকে বৈষম্যমূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। ভারতের বাজারে ভারতীয় পণ্যের বিক্রি হ্রাস করার ছক হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভারতকে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র থেকে থামানো যাবে না: প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দৃঢ় আশ্বাস

রাজনাথ সিং আরও জানান, বিশ্বের যেকোনো শক্তি ভারতকে তার স্বপ্নপূরণের পথ থেকে থামাতে পারবে না। তিনি দৃঢ়সংকল্পের সঙ্গে বলেন, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম শক্তি হিসেবে দাঁড়াবে।” তাঁর এই বক্তব্যে দেশের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠেছে। যদিও শুল্ক নিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তবু দেশের অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না—এমনটাই বার্তা দিয়েছেন তিনি। এই বক্তব্যে দেশের সাধারণ মানুষ ও শিল্প জগতের জন্য একপ্রকার সাহস সঞ্চারিত হয়েছে।

শুল্ক আরোপে আমেরিকার ‘নিয়ন্ত্রণের চেষ্ঠা’ ও ভারতের ‘বিরোধিতা’

আক্রান্ত পরিস্থিতিতে আমেরিকা ভারত থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দামের অনিয়ম সৃষ্টি করছে। এতে ভারতের পণ্যের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। রাজনাথ সিং এর মতে, “অনেকেই চেষ্টা করছে যাতে ভারতীয় পণ্য ওই দেশগুলোর স্থানীয় পণ্যের চেয়ে বেশি দামি হয়ে পড়ুক, যাতে ভারতের পণ্য বিক্রি কমে।” এই শুল্কের নীতির মাধ্যমে ভারতকে আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল করা হচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতের অর্থনীতি সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

প্রতিরক্ষা সামগ্রীর রফতানিতে ভারতের অভূতপূর্ব অগ্রগতি

শুধু অর্থনীতিতেই নয়, প্রতিরক্ষা খাতে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। রাজনাথ সিংয়ের ভাষায়, “আমরা ইতিমধ্যে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি করেছি।” অর্থাৎ, দেশ শুধু নিজের নিরাপত্তার জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এই রফতানির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ভারতের বৈশ্বিক কৌশলগত অবস্থানও আরও শক্তিশালী হয়েছে।

রাশিয়া থেকে তেলের ওপর আমেরিকার কড়াকড়ি ও ভারতের অবস্থান

একই সময়ে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে ভারতকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমেরিকা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার কারণ নিয়ে। ট্রাম্পের বক্তব্য, “আমি কোনোভাবেই ভারতকে গ্রহণ করব না যদি তারা রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। রাশিয়ার মৃত অর্থনীতি ধ্বংসের পথে।” তবে ভারতীয় সরকারের পক্ষে এই পদক্ষেপ ছিল প্রয়োজনীয় এবং দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। ভারতের জন্য বিকল্প জ্বালানি উৎস অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে চলছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন চ্যালেঞ্জ: আমেরিকার শুল্ক নীতির প্রভাব

শুল্ক আরোপের এই ঘটনায় ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে। যদিও বাণিজ্যিক দিক থেকে আমেরিকা ভারতকে একটি বড় বাজার মনে করে, তবুও শুল্কের মাধ্যমে যে চাপ তৈরি হয়েছে তা ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা উচিত, যাতে দুদেশের সম্পর্ক পুনরায় মজবুত হয়।

সামগ্রিক দৃষ্টিতে: ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যকার যুদ্ধ

এই শুল্ক ইস্যু শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারতের দ্রুত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধিকে কিছু দেশ হজম করতে পারছে না। আর তাই নানা কৌশলে ভারতকে পিছিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। কিন্তু দেশের নেতৃত্ব তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দৃঢ় বার্তা স্পষ্ট — ভারতের অগ্রযাত্রাকে কেউ বাধা দিতে পারবে না। ভবিষ্যতে ভারত নিজস্ব শক্তি ও কূটনৈতিক দক্ষতায় এই বাধা অতিক্রম করবে।

Leave a comment