অ্যাকাডেমিক স্বপ্নে ছেঁকা: F-1 ভিসা না-মেলায় পথে বসার জোগাড় বহু ছাত্রের
‘ফল ২০২৫’ সেশন শুরু হতে আর হাতে গোনা ক’টা সপ্তাহ। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই I-20 পাঠিয়েছে, সিট কনফার্ম হয়ে গিয়েছে বহু ভারতীয় পড়ুয়ার। তবু বিমানে উঠবে কীভাবে? কারণ, F-1 ভিসার স্লটই মিলছে না! নিয়ম অনুযায়ী ভিসার জন্য শারীরিক ইন্টারভিউ দিতে হবে, আর সেই জন্যই প্রতিদিন ওয়েবসাইট খুলেও পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত তারিখ। আশঙ্কা—এই পরিস্থিতি চললে গোটা একটা সেমেস্টারই হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে বহু ছাত্রের জন্য।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট বিপদ: ৪৪% কমেছে F-1 ও M ভিসা ইস্যু
২০২4 সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ—এই সময়কালে আমেরিকা ভারতীয়দের যে সংখ্যক F-1 ও M ভিসা দিয়েছে, তা আগের বছরের তুলনায় ৪৪% কম। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, চলতি বছরে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যেতে পারে ৭০–৮০ শতাংশ পর্যন্ত! অথচ জিম্বাবোয়ে বা ভিয়েতনামের মতো তুলনামূলক কম শিক্ষার্থীপ্রেরণকারী দেশ থেকে ভিসা ইস্যুর হার বেড়েছে।
ট্রাম্পের নয়া নীতির ছায়া: সুরক্ষা ও সোশ্যাল মিডিয়া ভেটিং-এর কড়াকড়ি
মার্কিন অভিবাসন দপ্তরের সাফ কথা—যে কেউ দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারেন, এমন শঙ্কা থাকলে ভিসা নয়। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের চালু করা ‘সোশ্যাল মিডিয়া ভেটিং’ নিয়ম। যার ফলে এক একটি ফর্ম খতিয়ে দেখতে সময় লাগছে অনেক বেশি। বেড়ে গিয়েছে ব্যাকলগ, আর ভারতে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের ওয়েটিং পৌঁছে গিয়েছে দুই মাসের উপরে—বিশেষ করে হায়দরাবাদ ও আমেদাবাদে।
I-20 থাকলেও কোনো কাজে আসছে না, স্লটের অপেক্ষায় হতাশা
‘আই-২০ ফর্ম’ পেলেই যেখানে আনন্দে আত্মহারা হতেন পড়ুয়ারা, এবার তা-ও হয়ে উঠছে অচল নথি। কারণ, তার পরেও সাক্ষাৎকারের সুযোগ না পেলে ভিসা মিলবে না। প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে চেষ্টা করছেন অনেকেই স্লট বুক করতে—কিন্তু মুহূর্তে ভরে যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ‘প্ল্যান বি’-এর দিকে ঝুঁকছেন কেউ কেউ—কেউ ফল সেমেস্টার পিছিয়ে স্প্রিং ২০২৬-এ ভর্তি হতে চাইছেন, কেউ আবার ইউরোপ বা ক্যানাডার বিকল্প খতিয়ে দেখছেন।
নতুন নিয়মে বাধা আরও বাড়ছে: ইন-পার্সন ইন্টারভিউ ও বি১/বি২ বিধিনিষেধ
ফেব্রুয়ারির নির্দেশ অনুযায়ী, এতদিন ১৪ বছরের কম বা ৭৯ বছরের বেশি বয়সীদের ভিসা ইন্টারভিউ লাগত না। এখন তাদেরও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ইন-পার্সন সাক্ষাৎকারে হাজিরা। শুধু তাই নয়, বি১/বি২ (ব্যবসা ও পর্যটন) ভিসার ক্ষেত্রেও শিথিলতা কমানো হয়েছে—আগে যেখানে ৪৮ মাস পর্যন্ত ইন্টারভিউ ছাড়াই পুনর্নবীকরণ করা যেত, তা কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ১২ মাস। ফলে ভ্রমণ ও বাণিজ্যেও লাগছে ভিসা-ঝাঁপ।
পড়ুয়াদের দুশ্চিন্তা সংসদেও উঠেছে, তবু কেন্দ্র বলছে—‘নয় আমাদের হাতে’
এই সংকট এতটাই গভীর হয়ে উঠেছে যে তা পৌঁছে গিয়েছে ভারতের সংসদেও। বাদল অধিবেশনে এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ভিসা দেওয়া বা না দেওয়া একান্ত মার্কিন প্রশাসনের বিষয়—ভারত তার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদিও কূটনৈতিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলেই জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।একদিকে যেখানে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে লড়ছে হাজার হাজার ভারতীয় পড়ুয়া, অন্যদিকে কঠোর ভিসা নিয়মে সেই স্বপ্নে দেখা দিচ্ছে ধুলো। বছরের পর বছর ধরে তৈরি হওয়া শিক্ষা-যোগ ভারতের কাছে শুধু অর্থনৈতিক সুযোগ নয়, তা কূটনৈতিক সেতুও। আর সেই সেতুই এবার ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।