এআই বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে হিন্টন সতর্ক করেছেন যে ভবিষ্যতে এআই সিস্টেমগুলি নিজেদের ভাষা তৈরি করতে পারে, যা মানুষের বোধগম্যতার বাইরে চলে যাবে এবং সেটিকে ট্র্যাক করা কঠিন হবে।
Geoffrey Hinton: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এখন আর কেবল মানুষের আদেশ মানার সরঞ্জাম নয়। এর আচরণে এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে যা ভবিষ্যতে এটিকে স্বয়ংক্রিয় এবং দুর্বোধ্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিণত করতে পারে। বিশ্বের প্রধান এআই গবেষকদের মধ্যে অন্যতম এবং 'এআই-এর গডফাদার' হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিন্টন সতর্ক করেছেন যে এআই সিস্টেম শীঘ্রই নিজেদের ভাষা তৈরি করতে পারে, যা মানুষ কখনও বুঝতে পারবে না, নিয়ন্ত্রণও করতে পারবে না।
হিন্টনের বড় সতর্কতা
জিওফ্রে হিন্টন সম্প্রতি একটি পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে বর্তমান এআই সিস্টেম 'Chain of Thought' নামের প্রক্রিয়ায় ইংরেজি ভাষার মতো মানুষের ভাষা ব্যবহার করে চিন্তা করে, যার ফলে মানুষ তাদের সিদ্ধান্ত বুঝতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে এআই সিস্টেমগুলি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য একটি নতুন, মেশিন-উৎপাদিত ভাষা তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে আমরা তাদের চিন্তাগুলি ট্র্যাক করতে পারি কারণ তারা আমাদের ভাষায় চিন্তা করে। কিন্তু যদি তারা নিজেদের ভাষা তৈরি করে, তাহলে তা আমাদের বোধগম্যতার বাইরে চলে যাবে।'
জিপিটি মডেলগুলি ইতিমধ্যেই মানুষের জ্ঞানের সীমা অতিক্রম করেছে
হিন্টনের মতে, GPT-4-এর মতো বড় ভাষা মডেল (LLMs) ইতিমধ্যেই সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে মানুষকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন যে এটি কেবল তথ্য সংগ্রহ নয় — এআই সিস্টেম জটিল ধারণা এবং কৌশলগুলিও দ্রুত শিখতে এবং শেয়ার করতে পারে। এআই-এর সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল এর শেখা জ্ঞান কয়েক শত বা হাজারো অন্যান্য মেশিনে তৎক্ষণাৎ স্থানান্তরিত হতে পারে। মানুষের মস্তিষ্কের সীমা একজন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে এআই-এর বিশ্বব্যাপী শেয়ার করার ক্ষমতা রয়েছে।
যন্ত্র কি মানবতার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে?
হিন্টন এটাও মনে করেন যে তিনি প্রথমে এআই-এর বিপদগুলোকে কম করে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি ধরে নিয়েছিলাম যে এই প্রযুক্তির বিপদ অনেক দূরে, কিন্তু এখন আমার মনে হয় বিপদ আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক কাছে।'
এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আগামী বছরগুলিতে মেশিনগুলি শুধু মানুষের ভাষার বাইরে চিন্তা করবে না, সম্ভবত এমন পরিকল্পনাও তৈরি করতে পারে যা মানব স্বার্থের বিরোধী হতে পারে।
টেক ইন্ডাস্ট্রিতে ভয় আছে কিন্তু আওয়াজ নেই
হিন্টন আরও বলেন যে টেক ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে অনেক লোক এআই-এর সঙ্গে জড়িত বিপদগুলো বোঝে, কিন্তু তারা কোম্পানির নীতি, কর্পোরেট চাপ এবং শেয়ারের দামের ভয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলে না।
যদিও তিনি গুগল DeepMind-এর সিইও ডেমিশ হাসাবিসের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি এই বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করছেন।
হিন্টন গুগল ছাড়ার কারণও জানিয়েছেন — 'আমি প্রতিবাদের কারণে গুগল ছাড়িনি। আমি আর কোডিং করতে পারছিলাম না। কিন্তু গুগল থেকে বেরিয়ে আসার পর এখন আমি প্রকাশ্যে এআই-এর বিপদ নিয়ে কথা বলতে পারছি।'
সরকার কি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে?
হিন্টন মনে করেন যে বিশ্বের সরকারগুলোকে দ্রুত এআই-এর জন্য নীতি তৈরি করতে হবে। আমেরিকা সম্প্রতি "AI অ্যাকশন প্ল্যান" পেশ করেছে, যেখানে এআই-এর বিকাশ এবং নিয়ন্ত্রণ উভয়কেই ভারসাম্যের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রযুক্তির গতির তুলনায় সরকার অনেক ধীর। এআই-এর জন্য বিশ্বব্যাপী একটি যৌথ নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রয়োজন — না হলে যতক্ষণ না নীতি তৈরি হবে, ততক্ষণ এআই এমন একটি রূপ নেবে যা সামলানো মানুষের ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
সতর্কতাকে উপেক্ষা করা কঠিন হবে
হিন্টন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে যতক্ষণ না আমরা এই গ্যারান্টি দিতে পারছি যে এআই সবসময় মানব কল্যাণে কাজ করবে, ততক্ষণ এর বিকাশ ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে শুধুমাত্র নৈতিক নির্দেশিকা বা কোড অফ কন্ডাক্ট যথেষ্ট নয় — আমাদের প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত সমাধান খুঁজতে হবে যা এআই-কে সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ এবং বোধগম্য করে তুলবে।