কোলেস্টেরল শরীরের স্বাভাবিক ফাংশনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেশি হলে তা ধীরে ধীরে শরীরের রক্তনালীর দেয়াল জমাট বাঁধতে শুরু করে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যার পথ প্রশস্ত করে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা ঠিক না হলে এই ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
কোলেস্টেরল কি ও কেন ক্ষতিকর?
কোলেস্টেরল হলো একটি ধরনের ফ্যাট, যা লিভারে তৈরি হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয়। ভালো কোলেস্টেরল (HDL) শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট সরিয়ে দেয়, কিন্তু খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) অতিরিক্ত হলে রক্তনালীর দেয়ালে জমা হতে থাকে। এই জমাট বাধার ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ভয়ঙ্কর প্রভাব
বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্টদের মতে, খারাপ কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক হলে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের অংশে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে জীবন বিপন্ন হয়।
খাবারে অবহেলা, বাড়ে কোলেস্টেরল
খাবারে অধিক তেল, ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়মিত খাওয়া, বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্যাকেটজাত মিষ্টি, কেক, কুকিজে চিনি ও ক্ষতিকর ফ্যাট থাকে যা শরীরে দ্রুত খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়। এসব খাবার এড়ানো বা সীমিত মাত্রায় খাওয়া জরুরি।
প্যাকেটজাত দুধ ও প্রসেসড ফুডের ঝুঁকি
বাজারে পাওয়া অধিকাংশ প্যাকেটজাত দুধে অধিক পরিমাণে চর্বি ও সংরক্ষণ উপাদান থাকে, যা কোলেস্টেরল বাড়ায়। প্রসেসড ফুডে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাট শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা উভয়ই বাড়িয়ে দেয়। তাই এসব খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা দরকার।
ট্রান্সফ্যাট ও সোডিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব
ট্রান্সফ্যাট ও অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের কোষের ক্ষতি করে এবং ধমনীতে প্লাক তৈরি করে। এটি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। WHO’র সুপারিশ অনুযায়ী ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ কমানো জরুরি, কারণ এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়।
চিনির দোসর: মিষ্টি জাতীয় খাবার
অতিরিক্ত চিনি শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি ও কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিমের মতো মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে ফলমূল বা কম মিষ্টি স্ন্যাকস বেছে নিন।
ধূমপান ও স্মোকিংয়ের প্রভাব
ধূমপান শরীরের ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয় এবং খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ধূমপান ত্যাগ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসতে সাহায্য করে এবং শরীরের সুস্থতা বজায় থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সচেতনতা
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। ওটস, বাদাম, ফলা-সবজি ও সুষম খাবার খেলে কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নিয়মিত রক্তপরীক্ষা করানো উচিত, যাতে সময়মতো কোলেস্টেরল বাড়া ধরা পড়ে।
বাড়িতে ঘরোয়া প্রতিকার ও চিকিৎসকের পরামর্শ
ঘরোয়া কিছু টোটকা যেমন কাঁচা লসুন, অলিভ অয়েল, গ্রিন টি কোলেস্টরল কমাতে সহায়ক। তবে কোনো ধরনের ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ, উচ্চ কোলেস্টেরল চিকিৎসার ক্ষেত্রে মেডিক্যাল পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।
সঠিক জীবনযাত্রায় হার্ট সুস্থ রাখা সম্ভব
দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে। অতিরিক্ত ওজন কমানো ও ধূমপান ত্যাগ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই খাদ্য-পরিকল্পনা ও শরীরচর্চায় গুরুত্ব দিন।
সচেতনতা বাড়ানোই সেরা প্রতিরোধ
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়া জরুরি। পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়েও খেয়াল রাখুন, কারো অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হৃদরোগ থেকে রক্ষা করবে।
খারাপ কোলেস্টেরলকে হারাতে আজ থেকেই শুরু করুন
খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আজ থেকেই সুষম খাদ্য ও শারীরিক সচেতনতা শুরু করুন। কারণ, সুস্থ হৃদয়-মনেই সুস্থ জীবন। আপনার ছোট ছোট পদক্ষেপই দীর্ঘমেয়াদে বড় পরিবর্তন আনবে।