হিন্দি দিবস ২০২৫ প্রতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পালিত হয়। হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা, রাষ্ট্রভাষা নয়। এই দিনটি ভাষার গুরুত্ব, সংস্কৃতি এবং প্রচার ও প্রসারের স্মরণ করার একটি সুযোগ।
হিন্দি দিবস ২০২৫: প্রতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর সারা ভারতে হিন্দি দিবস (Hindi Diwas 2025) বিপুল উৎসাহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়। এই দিনটি শুধুমাত্র হিন্দি ভাষার গুরুত্ব ও অবদানকে স্মরণ করার একটি উপলক্ষই নয়, বরং এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এটিকে প্রচার ও প্রসারিত করার দিনও। স্কুল, কলেজ, সরকারি কার্যালয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলি এই দিনে বিশেষ অনুষ্ঠান, বক্তৃতা, প্রতিযোগিতা এবং সাহিত্যিক কার্যকলাপের আয়োজন করে।
তবে, হিন্দি দিবসের সঙ্গে প্রায়শই একটি বিতর্ক জড়িয়ে থাকে – হিন্দি কি আমাদের রাষ্ট্রভাষা নাকি সরকারি ভাষা? এই প্রশ্নটি প্রায়শই মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। আসুন এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই যে সংবিধানে হিন্দিকে কোন মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতে হিন্দির গুরুত্ব
হিন্দি ভারতের অন্যতম ভাষা, যা সবচেয়ে বেশি মানুষ বলে ও বোঝে। দেশে প্রায় ৪৪% জনসংখ্যা হিন্দীকে তাদের মাতৃভাষা বলে মনে করে। এছাড়াও, অনেক রাজ্যে হিন্দি দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা হিসেবেও বলা হয়।
হিন্দি শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটি সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্য এবং সামাজিক পরিচয়ের সঙ্গেও জড়িত। হিন্দির কারণে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সহজেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং জাতীয় ঐক্যের সূত্রে আবদ্ধ থাকে। এই কারণেই হিন্দি দিবস পালনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
রাষ্ট্রভাষা ও সরকারি ভাষার মধ্যে পার্থক্য
হিন্দি নিয়ে প্রায়শই মানুষ বিভ্রান্ত থাকে যে এটি রাষ্ট্রভাষা নাকি সরকারি ভাষা। এই বিভ্রান্তি দূর করা অত্যন্ত জরুরি।
- রাষ্ট্রভাষা
রাষ্ট্রভাষা হল এমন একটি ভাষা যা কোনো দেশের জাতীয় পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। এই ভাষা জনগণ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে এবং সাধারণত দেশের বেশিরভাগ জনসংখ্যা এটি বলে বা বোঝে। - সরকারি ভাষা
সরকারি ভাষা হল এমন একটি ভাষা যা সরকারি কাজ, বিচার বিভাগ, সংসদ, সংবিধান এবং প্রশাসনিক নথিতে ব্যবহৃত হয়। এটি সংবিধান দ্বারা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।
ভারতের সংবিধানে কোনো ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়নি। সংবিধানে স্পষ্টভাবে হিন্দিকে সরকারি ভাষা (Official Language) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
কখন ও কীভাবে হিন্দি সরকারি ভাষা হল?
হিন্দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে প্রস্তাবিত করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯ সালে সংবিধান সভায়। সেই সময় ভাষা নিয়ে গভীর বিতর্ক হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই হিন্দি উৎসাহ পেয়েছিল এবং মহাত্মা গান্ধী এটিকে সাধারণ মানুষের ভাষা মনে করে এর প্রসারের ওপর জোর দিয়েছিলেন।
সংবিধান সভায় কিছু দক্ষিণ ভারতীয় প্রতিনিধি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে হিন্দিকে সরকারি ভাষা ঘোষণা করলে তামিল, তেলেগু, কন্নড় এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাগুলি বিপন্ন হতে পারে। তারা অনুরোধ করেছিলেন যে অন্য ভাষাগুলির অধিকার এবং সুরক্ষার দিকেও নজর রাখা উচিত।
এই ভাবনা ও বিতর্কের পর, সংবিধানের ৩৪৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময় নির্ধারণ করা হয় যে আগামী ১৫ বছর সরকারি কাজে ইংরেজি ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।
এই প্রক্রিয়ার পর, ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ সালে ভারতীয় সংবিধান যখন কার্যকর হয়, তখন হিন্দি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা হয়ে ওঠে।
হিন্দি দিবস পালনের গুরুত্ব
হিন্দি দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হল হিন্দি ভাষার প্রচার ও প্রসারকে উৎসাহিত করা। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটি সাংস্কৃতিক এবং জাতীয় পরিচয়েরও প্রতীক।
এই দিন অনেক স্কুল, কলেজ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান হিন্দি প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা, কবিতা পাঠ এবং প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সরকারি কার্যালয়গুলিতে হিন্দিতে কাজ করা এবং লিখিত যোগাযোগকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
হিন্দি দিবস তরুণদের এই অনুপ্রেরণা দেয় যে তারা হিন্দি অধ্যয়ন করুক, এটিকে দৈনন্দিন জীবনে গ্রহণ করুক এবং এর সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাক।
হিন্দি এবং ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য
ভারতে অনেক ভাষা প্রচলিত। সংবিধানে মোট ২২টি ভাষাকে অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বৈচিত্র্যের মধ্যে হিন্দির ভূমিকা একটি মূল সংযোগকারীর।
হিন্দি কেবল উত্তর ও মধ্য ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সারা দেশে শিক্ষা, মিডিয়া, প্রশাসন এবং সাহিত্যে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। হিন্দি সিনেমা, সংবাদপত্র, রেডিও এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ভাষা তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
হিন্দি দিবস পালনের উপায়
- বিদ্যালয় ও কলেজে অনুষ্ঠান
বক্তৃতা, কবিতা পাঠ, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা এবং হিন্দি গান পরিবেশন। - সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
নাটক, নাচ এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হিন্দি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা। - সরকারি কার্যালয়ে অভিযান
হিন্দিতে লেখা, প্রতিবেদন এবং যোগাযোগকে উৎসাহিত করা। - সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা
হিন্দি দিবসে পোস্ট, ভিডিও এবং বার্তা শেয়ার করা যাতে মানুষ হিন্দি ভাষা এবং এর গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়।
হিন্দি দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা, রাষ্ট্রভাষা নয়। এই ভাষা কেবল প্রশাসন এবং সরকারি কাজে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক এবং সামাজিক পরিচয়েরও প্রতীক। হিন্দির সংরক্ষণ এবং প্রচার করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।