অটুট ভালোবাসার প্রতীক ভাইফোঁটা ২০২৫: শুভ মুহূর্ত ও সম্পূর্ণ পূজা বিধি

অটুট ভালোবাসার প্রতীক ভাইফোঁটা ২০২৫: শুভ মুহূর্ত ও সম্পূর্ণ পূজা বিধি
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

ভাইফোঁটা ২০২৫, দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী মহোৎসবের শেষ দিন, ভাই-বোনের অটুট স্নেহ ও ভালোবাসার প্রতীক। এই দিনে বোনেরা ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু এবং সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে। উৎসবটি ২৩শে অক্টোবর পালিত হবে, যেখানে শুভ মুহূর্ত এবং পূজা পদ্ধতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

ভাইফোঁটা: ভাইফোঁটা, দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী মহোৎসবের শেষ দিন, ২০২৫ সালের ২৩শে অক্টোবর, বৃহস্পতিবার পালিত হবে। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করে, যখন ভাই বোনেরা উপহার দিয়ে তাদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। উৎসবে নহায়-খায়, খরনা এবং সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদনের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রথাগুলি পালন করা হয়। এই দিনটি ভাই-বোনের সম্পর্কে স্নেহ এবং পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করার প্রতীক।

স্নেহ এবং আশীর্বাদের দিন

ভাইফোঁটা, দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী মহোৎসবের শেষ দিন, ভাই-বোনের অটুট প্রেম ও স্নেহের প্রতীক। একে ‘যম দ্বিতীয়া’ও বলা হয়। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয় এবং তাদের দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করে। ভাইও বোনকে উপহার দিয়ে তার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এই বছর ভাইফোঁটা ২০২৫ সালের ২৩শে অক্টোবর, বৃহস্পতিবার পালিত হবে। দৃক পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার প্রধান শুভ মুহূর্ত দুপুর ০১:১৩টা থেকে ০৩:২৮টা পর্যন্ত থাকবে। অন্যান্য শুভ মুহূর্তগুলির মধ্যে অভিজিৎ মুহূর্ত সকাল ১১:৪৩টা থেকে ১২:২৮টা পর্যন্ত এবং বিজয় মুহূর্ত ০১:৫৮টা থেকে ০২:৪৩টা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত। সন্ধ্যার অমৃতকালে ০৬:৫৭টা থেকে ০৮:৪৫টা পর্যন্তও ফোঁটা দেওয়া যেতে পারে। বোনেরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী এই মুহূর্তগুলির মধ্যে যেকোনো একটিতে ভাইকে ফোঁটা দিতে পারে, যদিও দুপুরের সময়টি সবচেয়ে উত্তম বলে মনে করা হয়।

ভাইফোঁটার পূজা পদ্ধতি

ভাইফোঁটার দিনে বিধি-বিধান অনুসারে পূজা করলে যমরাজের আশীর্বাদ লাভ হয়। বোনেরা সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরুন। পূজার থালায় রোলি বা কুমকুম, অক্ষত (চাল), মিষ্টি, শুকনো নারকেল (গোলা), পান, সুপারি, কালাওয়া (রাখিসূত্র) এবং প্রদীপ রাখুন। ঘরের ঈশান কোণে (উত্তর-পূর্ব দিক) আটা বা চাল দিয়ে একটি চৌকো তৈরি করুন এবং একটি পরিষ্কার আসনে ভাইকে পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে বসান।

প্রথমে ভগবান গণেশ এবং যম দেবের ধ্যান করুন। এরপর বোনেরা ভাইয়ের কপালে বিধি অনুসারে রোলি এবং অক্ষতের ফোঁটা দিন। ফোঁটা দেওয়ার পর ভাইয়ের হাতে কালাওয়া বা রাখিসূত্র বাঁধুন। প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাইয়ের আরতি করা হয় এবং ভাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়। ঐতিহ্য অনুসারে বোনেরা তাদের হাতে ভাইকে খাবার খাওয়ায়। ফোঁটা এবং খাবার পর ভাই বোনকে উপহার দেয় এবং তার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি নেয়।

ভাইফোঁটার গুরুত্ব

ভাইফোঁটাকে যম দ্বিতীয়া বলা হয় কারণ পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই দিনে মৃত্যুর দেবতা যমরাজ তাঁর বোন যমুনার বাড়িতে গিয়েছিলেন। যমুনা তার ভাইকে আদর-যত্ন করে তাকে সুস্বাদু খাবার খাওয়িয়েছিলেন এবং ফোঁটা দিয়েছিলেন। এরপর যমরাজ যমুনাকে বর দিয়েছিলেন যে, যে ভাই এই দিনে তার বোনের বাড়িতে গিয়ে ফোঁটা নেবে এবং তার হাতের খাবার খাবে, তার অকাল মৃত্যুর ভয় থাকবে না এবং দীর্ঘায়ু লাভ করবে। এই কারণেই ভাইফোঁটার উৎসব ভাই-বোনের সম্পর্কে মাধুর্য ও দৃঢ়তা আনে।

পূজার ক্রম এবং শুভ মুহূর্ত

  • নহায়-খায় (২৫শে অক্টোবর): বোনেরা স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করে এবং লাউ-ছোলা ডালের প্রসাদ তৈরি করে।
  • খরনা (২৬শে অক্টোবর): দিনভর নির্জলা উপবাস রাখা হয় এবং সন্ধ্যায় গুড়ের পায়েস ও রুটি খেয়ে ব্রত শুরু হয়।
  • প্রথম অর্ঘ্য (২৭শে অক্টোবর): অস্তগামী সূর্যকে জল, দুধ এবং ফুল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। বোনেরা জলে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে।
  • দ্বিতীয় অর্ঘ্য (২৮শে অক্টোবর): উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করে ব্রত সম্পন্ন করা হয়। এরপর পরিবারের সঙ্গে প্রসাদ গ্রহণ করা হয়।

ভাইফোঁটার রীতিনীতি

ভাইফোঁটার উৎসব কেবল ভাই-বোনের স্নেহ প্রদর্শনের সুযোগ নয়, বরং এতে যমরাজ এবং চিত্রগুপ্তের পূজারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘায়ু এবং সমৃদ্ধি কামনা করে। ভাই তার বোনকে উপহার দিয়ে তার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই উৎসব ভারতীয় সংস্কৃতিতে ভাই-বোনের সম্পর্কের মাধুর্য বজায় রাখার একটি অনন্য সুযোগ।

ভাইফোঁটার উৎসব ভাই-বোনের অটুট প্রেম ও স্নেহের প্রতীক। এটি কেবল ফোঁটা দেওয়া এবং খাবার খাওয়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে লুকায়িত রয়েছে পরিবার, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের বার্তা। এইবার ২০২৫ সালের ২৩শে অক্টোবর পালিত হতে চলা এই উৎসবে পরিবারের সঙ্গে বিধি অনুসারে পূজা করা সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। সকল বোন ও ভাইকে শুভকামনা, যাতে তাদের প্রেম ও স্নেহ চিরকাল অটুট থাকে।

Leave a comment