ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা আরও জোরদার হয়েছে। ১ আগস্টের সময়সীমা একেবারে কাছে চলে এসেছে, কিন্তু দুটি দেশের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত सहमति তৈরি হয়নি। সবচেয়ে বড় বাধা হল আমেরিকার সেই দাবি, যেখানে তারা চাইছে চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত যেন মার্কিন পণ্যের উপর থেকে আমদানি শুল্ক অর্থাৎ সীমা শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নেয়।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকা এইবার বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কোনওরকম নমনীয়তা দেখাচ্ছে না। তারা সরাসরি চাইছে ভারত যেন বেশিরভাগ মার্কিন পণ্যের উপর থেকে এক লহমায় শুল্ক তুলে দেয়। যদিও ভারতের ঐতিহ্যপূর্ণ নীতি অন্য কথা বলে। ভারত সাধারণত স্পর্শকাতর পণ্যের উপর ধীরে ধীরে ট্যাক্স কমানোর নীতি অনুসরণ করে।
ভারতের নীতি: ধীরে ধীরে শুল্ক হ্রাস
ভারতীয় বাণিজ্য নীতিতে 'ট্যারিফ স্টেজিং'-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এর মানে হল কিছু পণ্যের উপর চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ট্যাক্স সরানো যেতে পারে, কিন্তু যে পণ্যগুলিকে ভারত অভ্যন্তরীণ শিল্পের জন্য সংবেদনশীল মনে করে, সেগুলির উপর ধাপে ধাপে ট্যাক্স কমানো হয়।
সম্প্রতি ইউনাইটেড কিংডমের সঙ্গে হওয়া চুক্তির উদাহরণ নিলে দেখা যায়, ভারত ১০ বছরে ৯০ শতাংশ পণ্যের উপর থেকে ট্যাক্স সরানোর কথা বলেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশের উপর প্রথম দিন থেকেই জিরো ডিউটি কার্যকর হবে, বাকিগুলোর উপর ধীরে ধীরে ছাড় দেওয়া হবে।
আমেরিকা ধাপে ধাপে নীতি মানতে নারাজ
আমেরিকার তরফ থেকে আসা ইঙ্গিত অনুযায়ী, তারা ভারতের এই ধাপে ধাপে নীতি মানতে রাজি নয়। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের (USTR) আধিকারিক জেমিসন গ্রীর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ভারত সবসময় তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা এখন এমন চুক্তি চায়, যা তাদের পণ্য এবং কোম্পানিগুলির জন্য অন্য দেশের বাজার সম্পূর্ণভাবে খুলে দেবে।
গ্রীরের মতে, আমেরিকা চায় ভারত অবিলম্বে এবং বড় அளவில் ডিউটি কমানো করুক। অন্যদিকে, ভারত তাদের কৃষি, টেক্সটাইল, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদি সেক্টরগুলির সুরক্ষা নিয়ে সতর্ক। এই সেক্টরগুলিকে পরিকল্পনা ছাড়া খুলে দেওয়া অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
১ আগস্টের আগে সম্মতি না হলে আমেরিকা পদক্ষেপ নেবে
১ আগস্টের মধ্যে যদি কোনও চুক্তি না হয়, তাহলে আমেরিকা ভারতের কিছু পণ্যের উপর নতুন ট্যারিফ ধার্য করতে পারে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের বড় ধাক্কা লাগতে পারে। এর আগেও আমেরিকা জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস (GSP)-এর মতো সুবিধা ভারত থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যার ফলে ভারতের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।
এখন আবার যদি আমেরিকা একতরফাভাবে ট্যারিফ বাড়ায়, তাহলে এর প্রভাব ভারতের ফার্মা, স্টিল, টেক্সটাইল-এর মতো প্রধান রপ্তানি ক্ষেত্রগুলির উপর পড়তে পারে।
অজয় শ্রীবাস্তবের বিশ্লেষণ: ভারতকে ভারসাম্যের পথ খুঁজতে হবে
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন যে, যদি এই চুক্তি হয়, তবে এটি অনেকটা আমেরিকার পুরনো বাণিজ্য চুক্তির মতোই হতে পারে। এতে ভারতকে তার বাজারে মার্কিন বিনিয়োগ, ট্যাক্স ছাড় এবং রেগুলেটরি অ্যাক্সেস দিতে হতে পারে, কিন্তু এর বদলে আমেরিকা ভারতকে সেই পরিমাণে ছাড় দেবে কিনা, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
শ্রীবাস্তবের মতে, আমেরিকা এখনও পর্যন্ত যে দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে, उनमें वह अपने उत्पादों पर न्यूनतम शुल्क की व्यवस्था करता है, लेकिन বাকি দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে যাতে তারা বেশি করে বাজার খুলে দেয়। ভারতকে এই ভারসাম্যহীনতা থেকে বাঁচতে হবে।
ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকা ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছনোর অনুমান করা হচ্ছে। এই হিসেবে এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এমন একটা সময়ে যখন ভারত একাধিক দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে সক্রিয়।
কিন্তু ভারতের জন্য এটা জরুরি যে, তারা যেন তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্পের সুরক্ষাকে উপেক্ষা না করে। অনেক ভারতীয় শিল্প সংগঠনও সরকারকে সতর্ক করেছে যে, আমেরিকার চাপে এসে তাড়াহুড়ো করে ডিউটি কমানো উচিত না।
আলোচনা এখনও চলছে, কিন্তু সময় কম
১ আগস্ট আসতে আর মাত্র দু'দিন বাকি, এবং দুটি পক্ষের মধ্যে আলোচনার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। যদিও কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের ঘোষণা করা হয়নি। আমেরিকার পক্ষ থেকে বারবার ভারতকে 'সাহসী পদক্ষেপ' নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যেখানে ভারত একটি ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তির দাবিতে অনড়।
যদি সময় মতো চুক্তি না হয়, তাহলে হয় আমেরিকা ভারতের উপর ট্যারিফের নতুন বোঝা চাপাতে পারে, অথবা চুক্তির তারিখ আরও পেছানোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হচ্ছে চুক্তি চূড়ান্ত রূপ পাওয়া থেকে এখনও কিছুটা দূরে রয়েছে।
এখন সবার নজর ১ আগস্টের দিকে
এখন বাজার, শিল্প মহল এবং কৌশলগত বিশ্লেষক সকলেরই নজর ১ আগস্টের দিকে। ভারত ও আমেরিকা শেষ মুহূর্তে কোনও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি করতে পারবে, নাকি বাণিজ্যিক সম্পর্কে আবারও তিক্ততা দেখা যাবে, তা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।