ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশন নির্বাচন: সভাপতি পদে অজয় সিং বনাম জসলাল প্রধানের লড়াই

ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশন নির্বাচন: সভাপতি পদে অজয় সিং বনাম জসলাল প্রধানের লড়াই

প্রশাসনিক বিতর্ক এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের কারণে মাসের পর মাস ধরে চলা অনিশ্চয়তার অবসান হতে চলেছে। ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশন (বিএফআই)-এর বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।

স্পোর্টস নিউজ: ভারতীয় বক্সিং ফেডারেশন (Boxing Federation of India – BFI) মাসের পর মাসের অনিশ্চয়তা এবং আইনি জটিলতার পর অবশেষে তাদের বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন করতে চলেছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে চলা এই নির্বাচনে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন বর্তমান সভাপতি এবং স্পাইসজেটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজয় সিং। সিং পরপর তৃতীয়বারের জন্য সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৯৮৪ সালের অলিম্পিয়ান এবং সিকিম রাজ্য ইউনিটের প্রধান জসলাল প্রধান।

বিএফআই নির্বাচন মূলত ২৮ মার্চ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পিটিশন, আপিল এবং আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে তা স্থগিত করা হয়। প্রায় ছয় মাস পর অবশেষে ফেডারেশনে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের পথ প্রশস্ত হয়েছে। দিল্লি হাইকোর্ট নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছে, তবে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ফলাফল আদালতের বিচারাধীন মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল থাকবে।

অজয় সিং – দু’বারের সভাপতি, তৃতীয়বারের চ্যালেঞ্জ

অজয় সিং ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে বিএফআই-এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এইবারও তাঁর লক্ষ্য পরপর তৃতীয়বার পদটি ধরে রাখা। তাঁর কার্যকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছিল, কিন্তু নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত না হওয়ার কারণে তিনি এখনও ভারতীয় বক্সিং প্রশাসনের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বহাল রয়েছেন।

সম্প্রতি বিশ্ব বক্সিং (World Boxing) তাঁকে অন্তর্বর্তী কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেছিল, যা বিএফআই-এর দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করত। এটিকে বিশ্ব মঞ্চে তাঁর প্রভাবের ইঙ্গিত হিসেবে মনে করা হয়।

অন্তর্বর্তী কমিটির বিতর্ক

  • অজয় সিংয়ের সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী কমিটি তাদের কার্যকালে বেশ কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
  • পুরুষ এবং মহিলা দলের জন্য নতুন কোচ নিযুক্ত করা হয়েছে।
  • বিএফআই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।
  • বিতর্কিত নির্বাচন এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
  • জাতীয় শিবির নির্বাচনের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিয়োগটি হল মহিলা দলের প্রধান কোচ হিসেবে ডি চন্দ্রলালের নিযুক্তি, যিনি কেরালা রাজ্য ইউনিটের প্রধান এবং মার্চ মাসে সম্ভাব্য সভাপতি পদপ্রার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন। এছাড়াও প্রাক্তন মহাসচিব হেমন্ত কলিতার সাসপেনশনও নির্বাচনের আগে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তগুলি কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (আইওএ)-এর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি অভিযোগ করেছে যে অন্তর্বর্তী কমিটি জাতীয় ক্রীড়া বিধি ২০১১ লঙ্ঘন করেছে এবং এটিকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে।

বিরোধী শিবিরের অভিযোগ

অজয় সিংয়ের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়া দলগুলির মধ্যে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট এবং দিল্লির ইউনিট। এই গোষ্ঠী জসলাল প্রধানকে সমর্থন করছে। বিরোধীদের অভিযোগ, অজয় সিং ফেডারেশনকে “স্বৈরাচারী কায়দায়” চালাচ্ছেন। বিদেশি কোচ নিয়োগ এবং বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে পরামর্শ না করার বিষয়টিও বার বার তোলা হয়েছে।

বিএফআই-এ দীর্ঘদিন ধরে চলা বিবাদ ভারতীয় বক্সিংকেও প্রভাবিত করেছে। দলের শিবির এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। খেলোয়াড় এবং কোচদের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে।

Leave a comment