রাত ৩টে... হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল অচেনারা! গৌড় এক্সপ্রেসের এসি কামরায় চুরি কাণ্ডে তীব্র প্রশ্ন রেল নিরাপত্তা নিয়ে

রাত ৩টে... হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল অচেনারা! গৌড় এক্সপ্রেসের এসি কামরায় চুরি কাণ্ডে তীব্র প্রশ্ন রেল নিরাপত্তা নিয়ে

অচেনা আতঙ্ক গৌড় এক্সপ্রেসে! একরাশ হতভম্বতা যাত্রীদের মুখে

রাত তখন ঘড়িতে ৩টে। মালদাগামী গৌড় এক্সপ্রেস আচমকা কোথাও দাঁড়িয়ে পড়তেই নেমে আসে বিভীষিকা। এসি কামরার ঘুমন্ত নিস্তব্ধতা চিরে হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। মুহূর্তেই শুরু হয় হাত সাফাই। যাত্রীরা কিছু বোঝার আগেই ছয় জনের মোবাইল ফোন, টাকা, এবং পরিচয়পত্র নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।গভীর রাতে এমন নিরাপত্তাহীনতা যেন ট্রেনযাত্রা নয়, আতঙ্কের যাত্রা। যাত্রীরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালীন এত বড় চুরির ঘটনা রেল প্রশাসনের গাফিলতির জ্বলন্ত প্রমাণ।

চিকিৎসক-সহ ছয় যাত্রী হলেন ভুক্তভোগী, প্রশ্ন রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়

চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে স্মার্টফোন, নগদ টাকা, ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড, এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র। যাত্রীদের দাবি, তাঁরা কেউই চোরদের মুখ দেখতে পাননি, ফলে শনাক্তকরণ প্রায় অসম্ভব। কলকাতা থেকে মালদা ফেরার পথে এমন অভিজ্ঞতা— অনেকের মনেই ভর করেছে শঙ্কা।ট্রেনের এসি কামরা, যেখানে নিরাপত্তা নিয়েই যাত্রীদের নির্ভরতা, সেই জায়গায় চোরেরা অনায়াসে ঢুকে পড়ল— এটা কেবল চুরি নয়, গোটা ব্যবস্থাকে ঘিরে ভয়াবহ প্রশ্নচিহ্ন।

ফারাক্কা থেকে শুরু সন্দেহ, মালদা পৌঁছে স্পষ্ট চিত্র

প্রথমে যাত্রীরা বুঝতেই পারেননি কী হয়েছে। ফারাক্কায় কিছু যাত্রী তাঁদের ব্যাগে অদলবদল লক্ষ্য করে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু সকালবেলা মালদা টাউন স্টেশনে পৌঁছে পুরো ঘটনা পরিষ্কার হয়— তাঁদের মোবাইল ফোন, পরিচয়পত্র, এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উধাও!শুধু পণ্য চুরি নয়, যাত্রীদের আত্মবিশ্বাসকেও যেন চুরি করে নিল এই ঘটনা। ট্রেনের ভিতরে থাকা সিসিটিভি বা সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

মালদা টাউন জিআরপিতে লিখিত অভিযোগ, সক্রিয় তদন্ত শুরু

এই চুরির ঘটনায় যাত্রীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মালদা টাউন জিআরপি থানায়। পাশাপাশি রেলের ‘মদত’ অ্যাপেও জানানো হয়েছে বিষয়টি। ঘটনাটির গুরুত্ব বুঝে তদন্ত শুরু করেছে জিআরপি। যদিও এখনও পর্যন্ত চুরি হওয়া মোবাইল ফোন বা দুষ্কৃতীদের কোনও সন্ধান মেলেনি।ডিজিটাল যুগে এমন নিরাপত্তা ভেঙে পড়া নিঃসন্দেহে রেলের ওপর যাত্রীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। রেল মন্ত্রকের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

চুরি শুধু সামগ্রী নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতাও তুলে ধরল

গৌড় এক্সপ্রেসের এসি টু টায়ার কামরায় এমন ঢুকে পড়া ঘটনা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। রাতের ট্রেনগুলোতে রক্ষীদের উপস্থিতি ও তৎপরতা নিয়ে নানা অভিযোগ আগে থেকেও ছিল, এই ঘটনা যেন সেই সব আশঙ্কাকেই মুঠোফোনের আলোয় স্পষ্ট করে তুলল।এসি কামরায় সাধারণত উচ্চ মূল্যে টিকিট কাটেন যাত্রীরা এই বিশ্বাসে যে, অন্তত নিরাপদে যাত্রা হবে। কিন্তু বাস্তব বলছে ভিন্ন কথা।

যাত্রীদের ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা প্রশ্ন— রাতে রক্ষী কোথায় ছিলেন?

অসংখ্য যাত্রীর প্রশ্ন— ট্রেনে কি নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না? যদি থাকেন, তবে তাঁরা কোথায় ছিলেন যখন এই চুরির ঘটনা ঘটেছে? শুধু তদন্ত নয়, রেলকে জবাব দিতে হবে— কেন এত গাফিলতি?প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও ‘খালি চোখে অদৃশ্য থাকা’ নিরাপত্তা কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে জনরোষ।

রেল কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও নেই কোনও বিবৃতি

রেল বা আরপিএফের তরফে এখনও পর্যন্ত এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জিআরপি তদন্ত শুরু করেছে। রেলযাত্রা নিরাপদ করতে কড়া পদক্ষেপের দাবি উঠছে চারিদিক থেকে।যাত্রীরা আজ প্রশ্ন করছেন— রাতের ট্রেনে চোখের পাতা এক করলে, কে নেবে তাদের দায়িত্ব?

Leave a comment