ভারতীয় সিঙ্গেল মল্ট হুইস্কি বিশ্ব মঞ্চে তার শক্তিশালী উপস্থিতি জানান দিয়েছে। দেবাংশ জ্ঞানচাঁদ, ইন্দ্রি-ত্রিণী দ্রু, পল জন এবং গোদাওয়ান-এর মতো ব্র্যান্ডগুলি আমেরিকা, জার্মানি ও লন্ডনে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জিতেছে। গুণমান এবং সাশ্রয়ী দামের কারণে ভারতীয় হুইস্কি এখন আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃতি পাচ্ছে।
নয়াদিল্লি: ভারতীয় সিঙ্গেল মল্ট হুইস্কি ২০২৫ সালে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে বিশ্ব বাজারে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। লাস ভেগাস, মায়ামি, জার্মানি এবং লন্ডনের মতো শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাগুলোতে দেবাংশ জ্ঞানচাঁদ আডাম্বরা ও মংশা, ইন্দ্রি-ত্রিণী দ্রু, পল জন এবং গোদাওয়ান "বেস্ট ওয়ার্ল্ড হুইস্কি", "ইন্টারন্যাশনাল হুইস্কি অফ দ্য ইয়ার" এবং "ডাবল গোল্ড"-এর মতো সম্মান অর্জন করেছে। আগে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া ক্রেতারা এখন ভারতীয় হুইস্কির গুণমান ও দামের মধ্যে সামঞ্জস্যের কারণে বিশ্বব্যাপী এটিকে পছন্দ করছেন।
ভারতীয় হুইস্কির ক্রমবর্ধমান শক্তি
কিছু বছর আগে পর্যন্ত ভারতে আমদানি করা ব্র্যান্ডগুলোকেই প্রিমিয়াম এবং গুণমানের প্রতীক হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু এখন ভারতীয় কোম্পানিগুলো ক্রমাগত পরিশ্রম করে এই ধারণা পরিবর্তন করেছে। ইন্ডিয়ান সিঙ্গেল মল্টস শুধুমাত্র দেশীয় স্তরে নয়, বিশ্ব মঞ্চেও সম্মান অর্জন করছে। এই কারণেই ভারতীয় মদের বাজারের প্রসার ক্রমাগত বাড়ছে।
গ্লোবাল স্তরে ২০২৫ সালে ভারতের অ্যালকোহল শিল্পের আনুমানিক বাজার ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আগামী দশ বছরে এটি ৭.২ শতাংশ হারে বেড়ে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে পারে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই শিল্প ৬.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেবাংশ জ্ঞানচাঁদের উজ্জ্বলতা
ভারতীয় সিঙ্গেল মল্টে দেবাংশ জ্ঞানচাঁদের নাম দ্রুত উঠে এসেছে। এই কোম্পানির আডাম্বরা ও মংশা উভয় ব্র্যান্ডই বিভিন্ন দেশে পুরস্কার জিতেছে। আডাম্বরা লাস ভেগাসের ইন্টারন্যাশনাল হুইস্কি চ্যালেঞ্জে "বেস্ট ইন্ডিয়ান সিঙ্গেল মল্ট" এবং "বেস্ট ইন্ডিয়ান হুইস্কি"-র খেতাব জিতেছে। অন্যদিকে মংশা জার্মানির আইএসডব্লিউ অ্যাওয়ার্ডসে "ইন্টারন্যাশনাল হুইস্কি অফ দ্য ইয়ার"-এর পুরস্কার নিজের নামে করেছে।
ইন্দ্রি-ত্রিণী দ্রু-এর ঝলক
ইন্দ্রি-ত্রিণী দ্রুও বিদেশে নিজেদের শক্তিশালী উপস্থিতি প্রমাণ করেছে। এই শক্তিশালী কাস্ক-স্ট্রেংথ হুইস্কি মায়ামি গ্লোবাল স্পিরিট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এ "বেস্ট ওয়ার্ল্ড হুইস্কি"-র খেতাব পেয়েছে। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিটস চ্যালেঞ্জে এই ব্র্যান্ড "গোল্ড অ্যাওয়ার্ড"-ও জিতেছে। ইন্দ্রি প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় হুইস্কি কোনো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের থেকে কম নয়।
পল জন: দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সিঙ্গেল মল্ট
পল জনকে প্রায়শই 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সিঙ্গেল মল্ট' বলা হয়। এই ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক স্তরে অনেক পুরস্কার জিতেছে। সান ফ্রান্সিসকো ওয়ার্ল্ড স্পিরিটস কম্পিটিশনে এটিকে "ডাবল গোল্ড" সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে। এছাড়াও এটি "বেস্ট ইন্ডিয়ান সিঙ্গেল মল্ট" এবং "বেস্ট এশিয়ান হুইস্কি"-র খেতাবও পেয়েছে। পল জনের নাম এখন ভারতীয় সিঙ্গেল মল্টসের সাফল্যের সমার্থক হয়ে উঠেছে।
গোদাওয়ানের স্বতন্ত্র পরিচয়
গোদাওয়ান এখন পর্যন্ত ৮৫টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। এটিকে ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত সিঙ্গেল মল্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। লন্ডন স্পিরিটস কম্পিটিশন ২০২৪-এ এটি "সিঙ্গেল মল্ট হুইস্কি অফ দ্য ইয়ার"-এর খেতাব জিতেছিল। গোদাওয়ান তার অনন্য স্বাদ এবং চমৎকার গুণমান দিয়ে সারা বিশ্বের হুইস্কি প্রেমীদের মন জয় করেছে।
কেন বাড়ছে ভারতীয় হুইস্কির চাহিদা
ভারতীয় হুইস্কির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এর উচ্চ গুণমান এবং সাশ্রয়ী দাম। ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলো তাদের গুণমানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এটাই কারণ যে মানুষজন এদের বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সমান এবং অনেক ক্ষেত্রে ভালো মনে করছে।
ভারতের মদের শিল্পের উপর পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রা এবং জনসংখ্যার গভীর প্রভাব পড়েছে। তরুণ প্রজন্ম মদকে শুধু একটি পানীয় হিসেবে নয়, বিনোদন এবং সামাজিক মেলামেশার অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও মদের ব্যবহার বাড়িয়েছে।
ভারতীয় সিঙ্গেল মল্টসের স্বর্ণালী যুগ
বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় সিঙ্গেল মল্টস বিশ্বব্যাপী যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা শিল্পের জন্য একটি মাইলফলক। দেবাংশ জ্ঞানচাঁদ, ইন্দ্রি, পল জন এবং গোদাওয়ানের মতো ব্র্যান্ডগুলো প্রমাণ করেছে যে ভারত কেবল বিদেশি ব্র্যান্ডের ভোক্তা নয়, বিশ্ব মঞ্চে গুণমান এবং উদ্ভাবনের প্রতীকও।