ইরানের প্রধান শিয়া ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশ) জারি করেছেন।
তেহরান: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা বৈরী সম্পর্কের মধ্যে একটি বড় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিবৃতি সামনে এসেছে। ইরানের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি সোমবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া জারি করে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ইরানের শত্রু ঘোষণা করেছেন।
আয়াতুল্লাহ শিরাজি তাঁর আদেশে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে কোনো প্রকার সমর্থন বা সহযোগিতা না করেন। তিনি এটিকে ইসলামী শরিয়ত অনুসারে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন যে, এই দুই নেতার সঙ্গে কোনো ধরনের ঘনিষ্ঠতা মুসলিম সমাজের জন্য নিষিদ্ধ।
ইরানি নেতৃত্বের প্রতি হুমকির নিন্দা
ফতোয়ায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে হুমকি দিয়েছেন। শিরাজি বলেছেন, এটি আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি এই দুই নেতাকে “মোহারেব” (অর্থাৎ আল্লাহ ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী) উপাধি দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, ইরানি আইন অনুসারে মোহারেবকে ফাঁসি দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, যে কেউ আমাদের সর্বোচ্চ নেতা বা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ করবে, তাকে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার জন্য শাস্তিও ততটাই কঠোর হবে।
১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের পর ফতোয়া
শিরাজির এই ফতোয়া এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলেছে। ১৩ জুন থেকে ২৪ জুনের মধ্যে চলা সংঘর্ষে ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি এবং তার পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়, যার জবাবে ইরানও ইসরায়েলের উপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানে। এই সময়ে শত শত মানুষের জীবনহানি ঘটে এবং উভয় দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমেনি। এই পরিস্থিতিতে, সিরাজির এই ফতোয়া ইরানি জনগণের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুসলিম ঐক্যের আহ্বান
শিরাজি তাঁর আদেশে বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন এক মঞ্চে আসেন এবং আমেরিকা ও ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহকে এই শক্তিগুলির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, যারা আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্বের উপর ক্রমাগত আঘাত হানছে। তিনি আরও বলেন, ইসলামী দেশগুলোকে তাদের পারস্পরিক লড়াই ত্যাগ করে এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁর মতে, মুসলিম দেশগুলোতে যেদিন পারস্পরিক ঐক্য শক্তিশালী হবে, সেদিনই শান্তি ও উন্নয়নের পথ সুগম হবে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শত্রুতা কোনো নতুন বিষয় নয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, ফিলিস্তিন ইস্যু এবং সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো গত এক দশকে উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও খারাপ করেছে। অনেক সময় এই সংঘর্ষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও সামরিক কার্যকলাপে পৌঁছেছে। গত বছরও ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং এ বছরও ১২ দিনের যুদ্ধ তারই তাজা দৃষ্টান্ত। এই যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের উপর ব্যাপক বোমা বর্ষণ করা হয়, যেখানে ইরান পাল্টা জবাবে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি শহরকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে।