ক্যানসার ও বংশগত কারণ: বহু মানুষ মনে করেন পরিবারের কারও ক্যানসার মানেই তাঁদেরও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, ক্যানসারের বড় অংশই জেনেটিক নয়। মাত্র ৫–১০ শতাংশ ক্যানসার আসে বংশগত জিন মিউটেশনের মাধ্যমে। বাকিগুলি জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও পরিবেশ দূষণের মতো কারণ থেকে হয়। তাই পরিবারের ইতিহাস জানার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই এখানে মূল চাবিকাঠি।

ক্যানসার বংশগত হয় কতটা?
কানাডিয়ান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, যদি পরিবারে কারও জেনেটিক মিউটেশন থাকে, তবু তা সবার ক্ষেত্রে ক্যানসারে রূপ নেবে এমন নয়। অর্থাৎ, ঝুঁকি বাড়তে পারে, কিন্তু তা নিশ্চিত নয়।বিশেষজ্ঞরা বলেন, বংশগত জিন মিউটেশন শুধু প্রবণতা বাড়ায়, সরাসরি ক্যানসারের কারণ নয়।
পরিবারের ইতিহাস জানানো কেন জরুরি
পরিবারে ক্যানসার থাকলে চিকিৎসককে তা জানানো উচিত। কারণ এতে বোঝা যায় আপনার বাড়তি পরীক্ষা বা জেনেটিক টেস্ট প্রয়োজন কি না।
এই তথ্য জানলে ডাক্তার আপনার জন্য নির্দিষ্ট প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা করতে পারেন, যেমন—নিয়মিত স্ক্রিনিং, ডায়েট ম্যানেজমেন্ট ও আগাম সতর্কতা।

কোন ধরনের ক্যানসার পারিবারিক ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত
চিকিৎসকদের মতে, কিছু ক্যানসার রয়েছে যেগুলিতে বংশগত জিন মিউটেশন বড় ভূমিকা নেয়—
স্তন ক্যানসার (Breast Cancer)
কোলোরেক্টাল ক্যানসার (Colorectal Cancer)
ডিম্বাশয় বা বৃক্ক সংক্রান্ত ক্যানসার
একই অঙ্গে উভয় পাশে ক্যানসার (যেমন দুই স্তনে)
এ ধরনের ইতিহাস থাকলে জেনেটিক টেস্ট বা আগাম স্ক্রিনিং বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সচেতন জীবনযাপনেই ঝুঁকি কমানো সম্ভব
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সঠিক অভ্যাস ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে—
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা
প্রচুর ফল, সবজি ও সুষম খাদ্য গ্রহণ
বছরে অন্তত একবার নিয়মিত স্ক্রিনিং (mammogram, colonoscopy)
এই অভ্যাসগুলো ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ও কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
জেনেটিক টেস্ট কি প্রয়োজনীয়?
যদি পরিবারের একাধিক সদস্য একই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে জেনেটিক টেস্ট করা উচিত। এতে ঝুঁকি বোঝা যায় ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা আগেভাগে শুরু করা সম্ভব।তবে অযথা ভয় বা আত্মবিশ্বাস হারানো ঠিক নয়। আধুনিক চিকিৎসা ও নিয়মিত মনিটরিং থাকলে এই ঝুঁকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে অনেকেই ভয় পান। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র ৫–১০% ক্যানসার বংশগত। বাকি বেশিরভাগই জীবনযাপন ও পরিবেশগত কারণে হয়। তাই আতঙ্ক নয়, সচেতনতা ও নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাই ক্যানসার প্রতিরোধের চাবিকাঠি।
                                                                        
                                                                            
                                                











