JNU-তে ছাত্রদের অনশন দ্বাদশ দিনে পৌঁছেছে। হস্টেল সুবিধা অব্যাহত রাখা, JNUEE পুনরুদ্ধার, বৃত্তি বৃদ্ধি এবং প্রতিবাদের উপর নিষেধাজ্ঞা অপসারণের দাবিতে ছাত্ররা প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত।
শিক্ষা: দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (JNU)-তে ছাত্র সংসদ (JNUSU)-এর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ছাত্র গত ১২ দিন ধরে অনশন করছেন। ছাত্রদের দাবি, তাঁরা তাঁদের চারটি প্রধান দাবি নিয়ে প্রশাসনের মনোভাবের উপর অসন্তুষ্ট। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের বৈধ দাবিগুলির প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না এবং তার পরিবর্তে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা তাঁদের শিক্ষা ও গবেষণা কাজে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রথম দাবি: একাডেমিক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে হস্টেল সুবিধা অব্যাহত থাকুক
ছাত্রদের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হল, যখন কোনও পিএইচডি ছাত্র চার বছরে তাঁর গবেষণা শেষ করতে পারেন না এবং একাডেমিক সম্প্রসারণ পান, তখন তাঁকে হস্টেলের সুবিধা দেওয়া উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য, চার বছর পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রদের হস্টেল খালি করতে হবে। এই নীতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই ভয় তৈরি করেছে যে গবেষণা শেষ করার আগেই তাঁদের হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে।
দ্বিতীয় দাবি: JNUEE প্রবেশিকা পরীক্ষা পুনরায় চালু করা হোক
ছাত্রদের দ্বিতীয় দাবি হল, জেএনইউ-তে পিএইচডি-তে ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রবেশিকা পরীক্ষা, অর্থাৎ JNUEE পুনরায় চালু করা হোক। বর্তমানে ভর্তির জন্য UGC-NET পরীক্ষার উপর নির্ভর করতে হয়, যা ছাত্রদের মতে জেএনইউ-এর স্বাধীন প্রবেশ নীতিকে দুর্বল করে। ছাত্রদের ধারণা, JNUEE আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈচিত্র্য আনয়নকারী পরীক্ষা ছিল।
তৃতীয় দাবি: মেধাক্রম-কাম-সুবিধা বৃত্তিতে বৃদ্ধি
ছাত্রদের তৃতীয় দাবিটি আর্থিকভাবে দুর্বল ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁদের বক্তব্য, বিএ, এমএ-এর মতো পাঠ্যক্রমে যেসব ছাত্র মেধাক্রম-কাম-সুবিধা স্কলারশিপের যোগ্য, তাঁদের দেওয়া বৃত্তির পরিমাণ ২০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করা হোক। ছাত্রদের যুক্তি, এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ২০০০ টাকা যথেষ্ট নয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য, তাঁদের হাতে এই মুহূর্তে কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের অর্থ বাড়ানোর বাজেট নেই।
চতুর্থ দাবি: হস্টেল হলফনামার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করা হোক
ছাত্রদের চতুর্থ দাবিটি সেই স্মারকটির সঙ্গে সম্পর্কিত যা তাঁদের হস্টেলে থাকার জন্য স্বাক্ষর করতে হয়। এই নথিতে লেখা থাকে যে ছাত্রদের প্রশাসনের প্রতি "মানবিক ভিত্তিতে কৃতজ্ঞতা" প্রকাশ করতে হবে এবং পিএইচডি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ জানাতে হবে। এছাড়াও, এই হলফনামায় একটি শর্ত থাকে যে ছাত্ররা কোনো প্রতিবাদ করবে না। ছাত্রদের বক্তব্য, এই শর্ত তাঁদের সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন করে। যদি তাঁরা এই ধরনের কাজ করেন, তবে তাঁদের উপর ভারী জরিমানা হতে পারে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া: আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ
JNU-এর উপাচার্য অধ্যাপক শান্তিশ্রী ডি. পণ্ডিত অনশনরত ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার আবেদন করেছেন। তিনি সম্প্রতি একটি ইমেল বার্তা পাঠিয়ে ছাত্রদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে ছাত্রদের অনেক দাবি কার্যত বা আইনগতভাবে সম্ভব নয়।
উপাচার্যের বক্তব্য, প্রশাসনের সীমিত সম্পদ রয়েছে এবং অনেক সিদ্ধান্ত UGC (UGC) বা উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নির্দেশিকা অনুযায়ী নেওয়া হয়। তিনি ছাত্রদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা করার এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
ছাত্রদের অভিযোগ
ছাত্র সংসদের বক্তব্য, ৭ জুলাই তাঁরা ডিন অফ স্টুডেন্টস (DOS)-কে তাঁদের দাবির একটি স্মারক জমা দিয়েছিলেন। তাঁরা আবেদন করেছিলেন যে একাডেমিক মেয়াদ বাড়ানো হলে হস্টেলের সুবিধাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ানো হোক। কিন্তু এর জবাবে প্রশাসন তাঁদের একটি হলফনামা পূরণ করতে বলে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো এবং চূড়ান্ত জমা দেওয়ার তারিখ জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ছাত্রদের অভিযোগ, প্রশাসন আলোচনার পরিবর্তে শর্ত এবং চাপ প্রয়োগ করছে।