হিন্দু ধর্মে মন্ত্র এবং শ্লোকগুলির শক্তি নিয়ে বহু কাহিনী ও বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এরই মধ্যে একটি নতুন শ্লোক সম্প্রতি ধর্মীয় অনুসারীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যা জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য প্রকাশ্যে সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। তাঁর মতে, এই শ্লোকটি এতই শক্তিশালী যে নিয়মিত জপ করলে ১০০ কোটি রামায়ণ পাঠের সমান পুণ্যফল লাভ করা যেতে পারে।
কে এই জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য?
জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য কেবল একজন ধর্মগুরুই নন, তিনি একাধারে একজন মহান দার্শনিক, বিদ্বান, সংস্কৃতের পণ্ডিত, বহুভাষাবিদ এবং দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও উচ্চ স্তরের শিক্ষাবিদও। তিনি বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণগুলির উপর বহু ভাষ্য এবং টীকা লিখেছেন। তাঁর বক্তৃতায় ভক্তি, বৈরাগ্য এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বের ভাব বিশেষভাবে ফুটে ওঠে।
চমৎকার শ্লোকটি কী?
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য জানিয়েছেন যে একটি বিশেষ শ্লোক রয়েছে, যা জপ করলে ভক্ত অত্যন্ত পুণ্যফল লাভ করেন। শ্লোকটি হল:
নীলাম্বুজশ্যামলকোমলাঙ্গং
সীতাসমারোপিতবামভাগম্।
পাণৌ মহাসায়কচারুচাপং
নমামি রামং রঘুবংশনাথম্।।
শ্লোকের অর্থ
যে ভগবান রাম নীল পদ্মের মতো শ্যামবর্ণ এবং কোমল অঙ্গযুক্ত, যাঁর বাম অংশে মা সীতা বিরাজমান, যাঁর হাতে মহৎ শক্তি সম্পন্ন ধনুক ও বাণ, সেই রঘুকুলের নাথকে আমি প্রণাম করি।
কেন এই শ্লোক বিশেষ?
জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্যের মতে, এই শ্লোক স্বয়ং ভগবান রামের দিব্য রূপের বর্ণনা করে। এটি শ্রদ্ধার সঙ্গে এবং ভাবপূর্ণভাবে জপ করলে সাধকের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এছাড়াও, এই শ্লোক মানসিক শান্তি, আত্মিক বল এবং জীবনের বাধা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
ভোরে জপ করার প্রথা
তিনি আরও জানান যে, এই শ্লোক বিশেষভাবে ভোরে, স্নানের পরে এবং ভগবান রামের ছবি বা মূর্তির সামনে জপ করলে এর প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়। শাস্ত্রেও উল্লেখ আছে যে, প্রভাতকালে করা সাধনা দ্রুত ফলদায়ক হয়।
শ্লোকের সঙ্গে হনুমান চালিশারও গুরুত্ব
জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য তাঁর ভাষণে আরও বলেছেন যে, এই শ্লোকের সঙ্গে যদি ভক্ত হনুমান চালিশা পাঠ করেন, তবে এটি একটি সম্পূর্ণ সাধনা হয়ে ওঠে। হনুমানকে রামভক্তির সর্বোচ্চ উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং তাঁর মাধ্যমে ভগবান রামকে প্রসন্ন করা আরও সহজ।
ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ
এই চমৎকার শ্লোক প্রচারের পর থেকে রামভক্তদের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। মন্দির এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এর সম্মিলিত জপ শুরু হয়েছে। অনেক ভক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এই শ্লোকটি শেয়ার করছেন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন।
আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে এক কদম
জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য তাঁর ভাষণে কেবল ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের উপর জোর দেন না, জীবনের ভারসাম্য, শৃঙ্খলা এবং সমাজের প্রতি কর্তব্যের উপরেও বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, আধ্যাত্মিকতা কেবল মন্দিরগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, শুদ্ধতা এবং সেবার রূপে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি
এই শ্লোকটি এখন সারা দেশের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রামকথা, এবং সৎসঙ্গে প্রধান্য পাচ্ছে। এটি মানুষ তাদের পূজা-পার্বণের দৈনিক রুটিনেও অন্তর্ভুক্ত করছে। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের এই পবিত্র সময়ে এর জপ ভক্তদের জন্য আরও বেশি ফলপ্রসূ বলে মনে করা হচ্ছে।