কিম জং উন বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি শি জিনপিং এবং পুতিনের সাথে একটি বিশাল কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। এটিই প্রথমবার যখন এই তিন নেতা এক মঞ্চে দেখা দেবেন, যা আমেরিকার বিরুদ্ধে নতুন জোটের জল্পনা বাড়িয়ে তুলেছে।
বেইজিং/সিওল: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ট্রেনে করে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের দিকে রওনা হয়েছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য কেবল চীন ও রাশিয়ার নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ নয়, বরং বিশ্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়াও। এটিই প্রথমবার হবে যখন কিম জং উন, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন একই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন।
কেন এই সফর বিশেষ
কিম জং উন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং জাপানের উপর চীনের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই কুচকাওয়াজ আয়োজিত হচ্ছে। এই তিন দেশের এক মঞ্চে আসা আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলির জন্য একটি সরাসরি ইঙ্গিত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে যে এই দেশগুলি তাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করছে।
কিম জং উনের সাথে কারা আছেন
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা KCNA-এর মতে, কিম জং উনের সাথে তাঁর বিদেশ মন্ত্রী চোয়ে সন হুই এবং আরও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই সফরে উপস্থিত আছেন। এটি কিমের ২০১৯ সালের পর প্রথম চীন সফর। তিনি ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত পাঁচবার চীন সফর করেছেন।
পুতিন এবং শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাতের সম্ভাবনা
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যেই চীনে পৌঁছে গেছেন। তিনি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) এর বৈঠক এবং এই কুচকাওয়াজে অংশ নিতে এসেছেন। রাশিয়ার তাস নিউজ এজেন্সি অনুসারে, পুতিন এবং কিম জং উনের মধ্যে একটি পৃথক বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তিন নেতার মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হতে পারে, যদিও এর আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান নৈকট্য
গত কয়েক বছরে উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র ও সৈন্য সরবরাহ করেছে, যার পরিবর্তে রাশিয়া অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এই অংশীদারিত্ব আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন-উত্তর কোরিয়া সম্পর্কের মধ্যে ফাটল
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিম জং উন এই সফরের মাধ্যমে চীনের সাথে তাঁর সম্পর্ক উন্নত করতে চান। চীন কেবল উত্তর কোরিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারই নয়, এটি অর্থনৈতিক সহায়তাও প্রদান করে।
আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিন্ন মঞ্চ
উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা তাকে আমেরিকার বিরুদ্ধে গঠিত জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি তারা মধ্যপ্রাচ্য এবং তাইওয়ান স্ট্রেইটের মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছে, যা থেকে এটা বোঝা যায় যে তারা রাশিয়া এবং চীনের সাথে মিলে আমেরিকার বিরুদ্ধে একটি মঞ্চ তৈরির চেষ্টা করছে।
ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে কিমের মনোযোগ
বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে কিম জং উন তাঁর দেশের একটি ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের ICBM (Intercontinental Ballistic Missile) এর ইঞ্জিন উন্নয়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। KCNA অনুসারে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম হবে এবং আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারবে।
আলোচনার চেষ্টা সত্ত্বেও পারমাণবিক কর্মসূচির ধারাবাহিকতা
আমেরিকা এবং দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার সাথে একাধিকবার আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে, ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং উনের বৈঠকের ব্যর্থতার পর উত্তর কোরিয়া আলোচনা থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এর পরিবর্তে, তারা তাদের পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আরও শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছে।