বর্ষার মরসুম, আর ঘরে যদি কিছু সুস্বাদু ও হালকা খাবার বানানোর ইচ্ছে হয়, তাহলে পাত্রা-র চেয়ে ভালো বিকল্প খুব কমই আছে। পাত্রা, যা কচুর পাতার বেসনের রোল হিসেবে পরিচিত, উত্তর ভারতের বিশেষ পদগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি শুধু স্বাদেই অতুলনীয় নয়, বানাতেও খুব সহজ। বর্ষাকালে গরম গরম এবং মুচমুচে পাত্রার সঙ্গে চায়ের আনন্দ অন্যরকম। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ঐতিহ্যপূর্ণ পদটি বানানোর পদ্ধতি এবং এটিকে বিশেষ করে তোলার ছোট ছোট টিপস।
পাত্রা কী?
পাত্রা একটি ঐতিহ্যপূর্ণ উত্তর ভারতীয় পদ যা কচুর পাতা ও বেসন দিয়ে তৈরি করা হয়। কচুর পাতা এই পদের প্রাণ, যা বেসনের মশলাদার ঘোলে মোড়ানো থাকে এবং তারপর স্টিম করে ডিপ ফ্রাই করা হয়। এই পদটির বিশেষত্ব হল এর মুচমুচে ভাব এবং মশলার ভারসাম্য, যা এটিকে সব বয়সের ভোজন রসিকদের কাছে প্রিয় করে তোলে। এটি সাধারণত চাটনি বা দইয়ের সাথে পরিবেশন করা হয়।
পাত্রা বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ৮-১০টি বড় কচুর পাতা
- ১ কাপ বেসন (ছোলা বাটা)
- ১ চামচ রসুন-আদার পেস্ট
- ১ চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
- ২ চামচ তেঁতুলের ক্বাথ বা লেবুর রস
- ১/২ চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ১/২ চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো
- ১/২ চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
- ১/৪ চামচ জোয়ান
- নুন স্বাদমতো
- ১ চামচ সাদা তিল (ঐচ্ছিক)
- তেল – ভাজার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী
পাত্রা বানানোর সহজ পদ্ধতি
১. কচুর পাতা তৈরি করা
প্রথমে কচুর পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। পাতাগুলোর শক্ত ডাঁটা ফেলে দিন এবং সরু সরু করে কেটে নিন যাতে সেগুলো সহজে রোল করা যায়।
২. বেসনের মশলার घोल তৈরি করুন
একটি বড় পাত্রে বেসন নিন। এতে রসুন-আদার পেস্ট, কাঁচালঙ্কা বাটা, তেঁতুলের ক্বাথ বা লেবুর রস, হলুদ, লাল লঙ্কার গুঁড়ো, গরম মশলা, জোয়ান এবং নুন দিয়ে ভালোভাবে মেশান। প্রয়োজন হলে সামান্য জল দিয়ে একটি ঘন घोल তৈরি করুন, যা পাতাগুলোর উপর ভালোভাবে লাগানো যায়।
৩. পাতাগুলোতে বেসন মাখান
এবার একটি কচুর পাতা নিন, তাতে বেসনের घोल ভালোভাবে লাগান। তারপর দ্বিতীয় পাতাটি নিন এবং সেটিকে প্রথম পাতার উপরে রাখুন। একইভাবে ৪-৫টি পাতার স্তর লাগান, প্রতিটি পাতায় বেসন লাগাতে থাকুন এবং শেষে এটিকে রোলের মতো করে শক্ত করে মুড়ে নিন।
৪. স্টিমিং-এর কাজ
তৈরি করা রোলটি স্টিমারে রাখুন এবং ১৫-২০ মিনিট ধরে ভালোভাবে স্টিম করুন যাতে বেসন সেদ্ধ হয়ে যায় এবং রোল ভালোভাবে তৈরি হয়।
৫. ঠান্ডা করে কাটুন
স্টিমিং-এর পর রোলটি একটু ঠান্ডা হতে দিন। তারপর এটিকে মোটা মোটা গোল টুকরো করে কেটে নিন। টুকরোগুলোর আকার প্রায় ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি হওয়া উচিত।
৬. ডিপ ফ্রাই করুন
এবার কড়াইয়ে তেল গরম করুন। যখন তেল ভালোভাবে গরম হয়ে যায়, তখন কেটে রাখা পাত্রার টুকরোগুলোকে সোনালী ও মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ডিপ ফ্রাই করুন। আপনি চাইলে কম তেলে হালকা করে ভাজতেও পারেন।
৭. পরিবেশন করুন
গরম গরম পাত্রা সবুজ চাটনি, মিষ্টি চাটনি বা দইয়ের সাথে পরিবেশন করুন। এই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর পদটি পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে অবশ্যই ভালো লাগবে।
পাত্রা খাওয়ার উপকারিতা ও টিপস
- পুষ্টিকর: কচুর পাতায় ভিটামিন A, C এবং ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- বর্ষাকালের জন্য উপযুক্ত: যারা ভারী ও তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে চান, তাদের জন্য এটি হালকা ও সুস্বাদু বিকল্প।
- বেসনের ব্যবহার: বেসনে প্রোটিন বেশি থাকে, যা এই স্ন্যাকটিকে শুধু সুস্বাদু নয়, স্বাস্থ্যকরও করে তোলে।
- স্টিমিং জরুরি: স্টিমিং প্রক্রিয়া পাত্রাকে ভেতর থেকে নরম করে এবং বেসনকে পুরোপুরি সেদ্ধ করে, যার ফলে ভাজার পর এটি মুচমুচে ও সুস্বাদু হয়।
অতিরিক্ত सुझाव
- যদি আপনি ঝাল পছন্দ করেন, তাহলে কাঁচালঙ্কার পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
- পাত্রাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আপনি উপরে সাদা তিল ছিটিয়ে দিতে পারেন।
- ফোড়নে জিরা, হিং এবং কারি পাতা দিয়ে হালকা করে ভেজে নিলে পাত্রার স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
পাত্রা এমন একটি পদ যা বর্ষার দিনে চায়ের সাথে পরিবেশন করলে মজা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এটি ঘরে সহজেই তৈরি করা যায়, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু একটি স্ন্যাক যা সব বয়সের মানুষের কাছেই পছন্দের। আপনিও এই বর্ষায় ঘরে বানিয়ে পরিবারের সাথে এর আনন্দ নিন এবং নিজের খাদ্য অভিজ্ঞতাকে আরও বিশেষ করে তুলুন।